সুব্রত সাহার জায়গায় মন্ত্রীসভায় মুর্শিদাবাদের কাউকে নয়।

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ, বহরমপুরঃ রাজ্য মন্ত্রীসভায় সোমবার রদবদলের পরে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে রাজ দরবারে মন্ত্রীর সংখ্যা কমে দাঁড়াল এক। প্রয়াত সুব্রত’র দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানীকে।যা নিয়ে জেলায় ফিসফিসানি থামছে না শাসক দলের অন্দরে। এই সুযোগে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা রাজ্যের উদ্যান পালন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০২২ এর ডিসেম্বরে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রয়োজন হয় উপনির্বাচনের। কিন্তু সুব্রত শূন্য সাগরদিঘির আসন দখলে রাখতে মরিয়া তৃণমূলকে বিমুখ করে জনাদেশ, সেই উপনির্বাচনে। যার জেরে একজন বিধায়ক হাত ছাড়া হয় তৃণমূলের।

২০১১ সাল থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন একা সুব্রত। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ থেকে ২০ জন বিধায়ক পায় তৃণমূল। নতুন সরকার গঠনকালে সেই জেলা থেকে সুব্রত’র পাশাপাশি ঠাঁই হয় রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখরুজ্জামানের। তাঁকে বিদ্যুৎ দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। বাদ পড়েন আর এক বিধায়ক জাকির হোসেন। ২০১৬ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে চারজন বিধায়ক পেয়েছিল জোড়াফুল শিবির। তার মধ্যে জঙ্গিপুর থেকে জেতা শিল্পপতি জাকিরকে শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন মমতা। যদিও এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে একজন বিধায়ককেও গত বারো বছরে পূর্ণমন্ত্রী পদে দেখেননি জেলাবাসী। বর্তমানে উত্তর মুর্শিদাবাদে ৮ জন আর দক্ষিণ মুর্শিদাবাদে ১১ জন বিধায়ক আছেন। অনেকেই ভেবেছিলেন জাকিরকে ফের মন্ত্রীসভায় ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু সুব্রত’র শূন্য স্থানে জেলার একজন বিধায়কও মন্ত্রী সভায় ঠাঁই না পাওয়ায় শাসকদলের নেতাদের মনেও উঠছে প্রশ্ন।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জোট প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে হেরে গিয়ে তৃণমূল এখন ‘ব্যকফুটে’। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে জেলা থেকে একজন বিধায়ককে ফের মন্ত্রী সভায় পাঠালে দলের মনোবল বাড়ত বলে মনে করেন তৃণমূলের একাংশ। উল্টে একজন বিধায়কও মন্ত্রী সভায় ঠাঁই না পাওয়ায় বিরোধীরা প্রচারে শক্তি পাবে বলে মনে করেন তাঁরা। তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি খলিলুর রহমান বলছেন, “ এটা দফতর অদলবদল হয়েছে। মন্ত্রীসভা পুর্নগঠন হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)র সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অনুরোধ করবো আমাদের জেলার ১৯ জন বিধায়কের মধ্যে একজনকে অন্তত মন্ত্রীসভায় ঠাঁই দেওয়া হোক।”

তৃণমূলের অন্য একটি অংশ অবশ্য আর একটি মতে বিশ্বাসী। তাঁদের মতে, উত্তর দিনাজপুর জেলার একজন বিধায়ককে সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। ওই জেলারই বিধায়ক গোলাম রব্বানীকেও সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী করা হলে রাজ্যে অন্য বার্তা যেত। আবার রাজ্যে উর্দুভাষী সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে ‘এঁটে’ উঠতে পারছিলেন না বাঙালী সংখ্যালঘু মুসলিমরা। তাই সবদিক খতিয়ে দেখে দলে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই রদবদল করেছেন মমতা। তবে তাও যে সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফলে তা অবশ্য মানছেন তাঁরাও।

জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন “ দিদির ট্রাম্পকার্ড মুসলিম সমাজ। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফলাফলে সেই কার্ডে চিড় ধরেছে দিদির। এই উপনির্বাচনের ফলে আমলা থেকে মন্ত্রী সকলকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিদি একার হাতে সব ক্ষমতা রাখছেন। দিদি অনন্য প্রতিভা। নিজের দলের বিধায়কদেরও বিশ্বাস করেন না। যে মুর্শিদাবাদ থেকে তিনি এতজন বিধায়ক পেলেন সেখান থেকে একটা উপনির্বাচনে হেরে গিয়ে সেই জেলার একজন মন্ত্রী কমিয়ে দিলেন। এটাই দিদির মুর্শিদাবাদের প্রতি ভালবাসা।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহরায় বলেন, “ তৃণমূল এখন দিশেহারা। গরু হারালে মানুষের যা অবস্থা হয় ওদের অবস্থা তাই। কী করলে কী হবে তা ভেবে কূল করতে পারছে না। যাই করুক না কেন সাগরদিঘির মতো পঞ্চায়েতেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে মানুষের রায় ওদের বিপক্ষেই যাবে।”