সুতিতে না পসন্দ হুমায়ুন রেজা, দেওয়াল মুছলেন কংগ্রেস কর্মীরাই

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ব্যুরোঃ ১৫ মার্চঃ কংগ্রেসের এবার তৃণমূলের ছায়া।  মুর্শিদাবাদে ৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা হতেই, অসন্তোষ সুতিতে। ষোল সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জেতেন হুমায়ুন রেজা। একুশেও এই কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন হুমায়ুন রেজা।

হুমায়ন রেজার প্রার্থী হওয়ার খবর সামনে আসতেই সুতিতে রাস্তায় নামলেন কংগ্রেস কর্মীরা। তাঁদের সাফ দাবি, হুমায়ুন রেজা আর নয়। প্রার্থী করা হক নতুন কোন মুখকে।

ভোটের দিন ঘোষণার পরেই প্রার্থী বদলের  দাবিতে সরব হয়েছিলেন একাংশের কংগ্রেস নেতা কর্মী। অভিযোগ ওঠে একদিকে বয়সের ভার,  অন্যদিকে জনসংযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ বিদায়ী কংগ্রেস  বিধায়ক  হুমায়ুন রেজা । একাধিক অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি, খোদ ব্লক কংগ্রেস সভাপতিও নতুন প্রার্থীর দাবিতে সোচ্চার হন, হাই কমান্ডের কাছে লিখিত আবেদন ও জানানো হয়।

এই নিয়ে ৮ মার্চ রাস্তাতেও নেমেছিলেন সুতির  কংগ্রেস কর্মীরা। কিন্তু ১৪ ই মার্চ প্রার্থী নাম ঘোষণা হতেই হতাশ স্থানীয় কংগ্রেসীদের একাংশ।

 প্রতিবাদ এমনই আকার নেয় যে,   দেওয়ালে কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন মুছে ‘বাম কংগ্রেস’ সমর্থিত নির্দলের হয়ে দেওয়াল লিখন করেন বিক্ষুব্ধরা ।

স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে নতুন মুখ নির্দলের প্রার্থী ভোটে লড়বে সুতিতে-  দাবি করেন বিক্ষুব্ধ স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের।

প্রার্থী বদল নিয়ে মুখ খুলেছেন জগতাই ১ অঞ্চল কংগ্রেস  সভাপতি সাইদুল আলম। সাইদুল আলমের দাবি, আগেই বলেছিলাম নতুন প্রার্থী না হলে আন্দোলনে নামব।  অকেজো প্রার্থী চাই না। তাই, দেওয়াল মুছে নতুন করে দেওয়াল লিখছি।

কংগ্রেসের দেওয়াল মুখে, দেওয়াল দখল নির্দলের নামে

তিনি জানান, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নতুন মুখ পাওয়া যাবে নির্দল  প্রার্থী হিসেবে।

ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসও মেনে নেন ক্ষোভ আছে স্থানীয় কংগ্রেস নেতাকর্মীদের। আলফাজুদ্দিন জানান, “আমরা খুশি নই, প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি করছি”।

কংগ্রেস সূত্রের খবর প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছিল খোদ আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসের নাম। বয়সজনিতে কারণেই সরে যাওয়ার কথা ছিল হুমায়ুন রেজার। কিন্তু কংগ্রেসের আভ্যন্তরীন রাজনীতির ফলশ্রুতি হিসেবেই  ফের প্রার্থী হন হুমায়ুন।

জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র মেনে নিয়েছিলেন বিক্ষোভের কথা। তবে বিষয়টিকে তিনি মান অভিমান বলেই দেখতে চান। তার আশা, ” দলের ব্লক সভাপতি অঞ্চল সভাপতিরাও দলকে বাঁচাবেন ।  অভিমান কয়েকদিন থাকবে তারপর কেটে যাবে”।

তবে নেহাত মান অভিমানের বিষয় হিসেবে হুমায়ুন রেজার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে দেখছেন না সুতির কংগ্রেস নেতারা।

সুতির কংগ্রেস কর্মীদের অভিযোগ, দলে পরিবার তন্ত্রকায়েম করছে চাইছেন হুমায়ুন রেজা। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, রেজার প্রার্থী হওয়ার পিছনে হাত আছে কিছু বিড়ি মালিকেরও।   কিন্তু এলাকাই চেনেন না তিনি, চেনেন না দলের নেতাদেরও।

এনিয়ে অবশ্য নতুন করে মন্তব্য করেন নি হুমায়ুন রেজা।

কংগ্রেসের পতাকা হাতেই এদিন রাস্তায় নামেন সুতির কংগ্রেস কর্মীরা।

এই বিক্ষোভের পরিণতি কী হয় ? সেটাই এখন সুতিতে সব থেকে বড় প্রশ্ন। নির্দল প্রার্থী কে হচ্ছেন , তা জানতেও মুখিয়ে আছে সুতির মানুষ।

শুধু সুতি নয়। প্রার্থী ঘোষণার পর জল ঘোলা হয়েছে বড়ঞাতেও। বড়ঞা আসনে বিদায়ী বিধায়ক প্রতিমা রজকে সরিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে শিলাদিত্য হালদারকে। এরপরেই প্রতিমা সামনে এনেছেন দল ছাড়ার বিষয়।

বিধানসভা   ভোটের মুখে কংগ্রেসের সমস্ত সদস্যপদ থেকে পদ্যতাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে  বড়ঞার বিধায়িকা প্রতিমা রজক। ঘনিষ্ঠ মহলে তার বক্তব্য,  দলত্যাগ না করার পুরস্কার পেলাম!  আমরা আটজন তৃণমূলের কাছে বিক্রী হলাম না । সাত জন টিকিট পেলেন আমি বাদ ।

 প্রতিমার আক্ষেপ, অনেকদিন বিরোধী আছি। কিছু করতেও পারছিনা। সেই জন্যই সরে আসা। কর্মীদের মুক্তি দিলাম।এবার তারা মনে করলে যেখানে সেখানে যেতে পারবে। আমার সঙ্গে থেকে মার খাচ্ছে। কিন্তু করতে পারছে না। আমি কিছু ভাবলে আগামী দিনে দেখা যাবে।

পদত্যাগ প্রতিমারও

প্রতিমা রজকের দাবি, গত ১২ ই মার্চ তিনি কংগ্রেসের সমস্ত সদস্যপদ থেকে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে।

প্রতিমার দলত্যাগে কার্যত অস্বস্তিতে জেলা  কংগ্রেস নেতৃত্ব।

তবে এতোদিন প্রার্থী নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে  দ্বন্দ্ব দেখে মুচকি হাসতেন কংগ্রেস নেতারা। দলে সেই দ্বন্দ্ব সামনে আসায় কার্যত হাসি ম্লান জেলা কংগ্রেস নেতাদের।