মধ্যবঙ্গ নিউজ ব্যুরোঃ মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন কৃষ্ণনাথ কলেজের অধক্ষ্যা সুজাতা বাগচী ব্যানার্জি। ২৫ তারিখের তারিখ দেওয়া শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকায় ড. সুজাতা বাগচী ব্যানার্জিকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশিকা ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সুজাতা বাগচী ব্যানার্জির ভাইস চ্যান্সেলার হওয়ার মিশ্র প্রতিক্রিয়া জেলার শিক্ষা মহলেও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণার পর থেকেই উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে নেমেছিলেন অনেক অধ্যাপক অধ্যাপিকাই।
শেষ বাজিমাৎ করলেন ২০১৬ সালে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুজাতা দেবীই। অধ্যাপিকার তৃণমূল যোগই ভিসি হওয়ার চাবিকাঠি বলে দাবি এক অংশের।
উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে নাম ছিল ভিন রাজ্যের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের, নাম ছিল অধুনা তৃণমুলে যাওয়া প্রাক্তন এক সিপিআই(এম) নেতার ঘনিষ্ট আত্মীয়েরও।
শিক্ষা মন্ত্রী ঘনিষ্ট একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছিল উপাচার্য হিসেবে। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন সুজাতাই।
উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে সুজাতা বাগচী ব্যানার্জি ফেসবুকে লেখেন “মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগপত্র গ্রহণ করলাম।
প্রণাম স্বর্গ গত মা বাবা গুরুজনদের।
ধন্যবাদ পশ্চিমবঙ্গ সরকার উচ্চশিক্ষা দপ্তর।সকলের আশীর্বাদে 1853 সালে গড়ে ওঠা রাজা কৃষ্ণনাথের স্বপ্নকে আজ যেন সফল করতে পারি।
এই কলেজে প্রথম মহিলা অধ্যক্ষা হয়েছিলাম।
এবার এই জেলার প্রথম উপাচার্য হলাম।
ধন্যবাদ আমাদের পরম শ্রদ্ধেয়া দিদিকে”।
তবে সুজাতা দেবীর পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক।
শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকাতেই জানানো হয়, উপাচার্য নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি এই মাসেরই এগারো তারিখ তিন জনের নাম প্রস্তাব করে রাজ্য সরকারের কাছে।
তিন জনের মধ্যে থেকেই উপাচার্য বেছে নেওয়ার কথা রাজ্যপালের। কিন্তু এখনও রাজ্যপালের দপ্তর থেকে সেই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায়, সুজাতা দেবীকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপাচার্য হিসেবে কাজ করার।
আপাতর এক বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের এক অংশের প্রশ্ন , রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়া কি করে একজন ‘দলীয় কর্মী’কে উপাচার্য হিসেবে ঘোষণা করা হল?
যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ মানতে চায় নি। সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক তথা কৃষ্ণনাথ কলেজের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট সুব্রত সাহার পাল্টা দাবী, সমস্ত নিয়ম মেনেই উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
এই নিয়োগ নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস। জয়ন্ত দাস বলেন, ” সাত সকালে তারা খবর পেয়ে গেছিল যে আজকেই ভোটের দিন ঘোষণা হতে পারে। তাই তড়িঘড়ি সুজাতা ব্যানার্জিকে কৃষ্ণনাথ কলেজের উপাচার্য করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ” ।
উপাচার্য নিয়োগপত্রে সাধারণত পাঁচ বছরের উল্লেখ থাকে বা পাঁচ বছরের মেয়াদকালে একজন উপাচার্য তিনি মনোনীত হন। এখানে সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি এক বছরের জন্য মনোনীত হচ্ছেন। এই বিষয়টিকেও অন্যরকম ভাবেই দেখছে কংগ্রে।
জয়ন্ত দাসের প্রশ্ন ” রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়া কি করে একজন দলীয় কর্মীকে তিনি এই ভাবে উপাচার্য করেন?”।
যদিও শিক্ষা মহল সূত্রে খবর, নতুন আইন সংশোধনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে রাজ্যপালের ক্ষমতা কমিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপাল অনুমতি না দিলেও উপাচার্য নিয়োগ করতে পারে সরকারই।
তবে একই সাথে টীপ্পনী, দলীয় নেত্রীকে উপাচার্য করা হলে, প্রশ্ন তো উঠবেই।
বিজেপি দক্ষিন সাংগঠনিক মুর্শিদাবাদ জেলা সাধারন সম্পাদক তপন চন্দ্র বলেন, ” শাসক দল আজ যে ভাবে বাংলায় আজ সরকার চালাচ্ছে প্রতিটা জায়গায় তাদের নিজের মতো করে কোন আইন শৃঙ্খলা তারা দেখে না, তাদের যা মনের মধ্যে আসে তারা সেটাই করে। আমরা দেখলাম নির্বাচন ডিক্লেয়ার হচ্ছে সেই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদে যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কে এন কলেজে যে প্রিন্সিপাল তাঁকে উপাচার্য ঘোষণা করে দিল”। এই ঘটনাকে অনৈতিক বলেছে বিজেপি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, সুজাতা ব্যানার্জির নামে টীপ্পনী কাটতে ছাড়েনি এসএফআইও। এসএফআই নেতা সন্দীপন দাসের বক্তব্য, ” এই সিদ্ধান্ত তৃণমূল নেত্রী হিসেবে সুজাতাদাবীর পারফর্ম্যান্সের পুরষ্কার”।
রাজনৈতিক জলঘোলার মাঝে সাফাই দিয়েছেন খোদ সুজাতা বাগচী ব্যানার্জি। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০১৮ সালের অ্যাক্ট অনুসারেই এই নিয়োগ হয়েছে।