Madhyabanga News : মাসুদ আলিঃ প্রশ্ন উঠছে, কতদিন সব হারানোর ভয়ে কাটাতে হবে গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের ?
ঘরটি বাঁশ সুদ্ধ পালটি খেয়ে পড়ল গঙ্গায়। ঢেউ ধাক্কা দিচ্ছে অন্য বাড়িগুলির ভিতে। ফাটল ধরেছে এলাকায়।কান্না। হতাশা। গেল গেল শব্দ।প্লাস্টার করা দেওয়াল থেকে ইট ছাড়ানো যাচ্ছে না। মহিলা তবু হাত, নখ দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।ওই ইট ছাড়িয়ে যদি অন্য কোথাও বাড়ি করা যায় ।যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে শেষ সম্বলটি । বৃদ্ধা হাউ হাউ করে কেঁদে চলেছেন।ছোট্ট খুকি নারকোলের মালার খেলাগুলি আনতে দৌড়ে ঘরে ঢুকতে গেলে তাঁকে যেতে দিচ্ছেন না আশেপাশের লোক। কাঁদছে সেও। ঘরের জিনিস যতটা পারা যায় বের করার চেষ্টা করছেন সবাই। সব হারানোর ভয়ে ঠাকুর এর নাম জপছেন। একটি বাড়িতে ছাগলটা বের করা যায়নি বলে স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করতে করতেই ভ্যানে জিনিস তুলছেন। বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ছুটছেন বাড়ির লোক। মঙ্গলবার সকাল হতে না হতেই গঙ্গার ভয়াল রূপ তছনছ করে দিচ্ছে সব। এদিন আচমকা গঙ্গার ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় এই রকম দৃশ্য মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার বোগদাদনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতাপগঞ্জ গ্রামে । অথচ সোমবার রাতেই সব ঠিক ছিল ।
ইতিমধ্যে তলিয়ে গিয়েছে দুটি বাড়ি। পাড় ভাঙছে । অন্যান্যবার বর্ষার সময় বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকেন। কিন্ত, এবার বৃষ্টি সেভাবে না হওয়ায় খানিকটা নিশ্চিন্তে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু, উলটপূরাণ হল না। ভাঙ্গনের আতঙ্ক ফিরল। ঘটনায় তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রশাসনে। স্থানীয় পুলিস ও বিএসএফ ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে। এলাকাবাসীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু ওই গ্রাম নয়, গঙ্গা সংলগ্ন সমগ্র শামসেরগঞ্জে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে সামশেরগঞ্জ থানার ওসি বিজন রায় বলেন, সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজ করা হচ্ছে। প্রতাপগঞ্জ ও মহেশতলাতেভাঙন শুরু হয়েছে। বিএসএফ আছে। আমরা ২০৭ গাড়ির ব্যাবস্থা করেছি ৭টি। দ্রুত জিনিস নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তাঁদের জন্যে একটি জায়গার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। যাঁদের বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে তাঁদের জন্যে স্কুল, কমিউনিটি হল রাখা হয়েছে। বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে এরিনা খাতুনের। তিনি জানিয়েছেন, আমরা ১ মিনিটও সময় পাইনি। বাড়ি ঘর সব পড়ে গেলো। আমাদের কোনও জায়গা নেই। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।
সিপিএম এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোদাসসর হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রশাসনের কাছে ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে বারবার আবেদন করেছি। তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই। স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্যে আমরা বারে বারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে জানিয়েছি। আরও লড়াই বেছে নিতে বাধ্য হব। বাসিন্দা রাকেশ সরকার বলেন, সকাল থেকে পরিবারগুলি কান্নাকাটি করছে। সরকারি কোনও সহযোগিতা নেই। কোথায় জিনিস নিয়ে যাবে, রাস্তা নেই। রাস্তা জ্যাম।
তৃণমুলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সামাউল হক জানান, সকাল থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। মর্মান্তিক ঘটনা । আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যাবস্থা করবেন বলেছেন। বাসিন্দা তানাউরা খাতুন বলেন, আমরা ভয়ে আছি।
প্রশ্ন উঠছে স্বাধীনতার 75 বছর আমরা পার করেছি । এখনো কেন গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের প্রতিমুহূর্তে সব হারানোর ভয় নিয়ে থাকতে হবে ?