Madhyabanga News: “মা’কে আমার পড়ে না মনে। শুধু কখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলি বনে—মা বুঝি গান গাইত দোলনা ঠেলে ঠেলে—মা গেছে , শুধু গানটি গেছে ফেলে।” মায়ের স্মৃতিতে সঙ্গীত নৃত্যের বিশেষ অনুষ্ঠান করতে চলেছেন বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জেলার সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম প্রধান মুখ শিক্ষাবিদ চন্দ্রাণী সে্নগুপ্ত।তিনি এই জেলায় জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর শিক্ষা জীবনও বাইরে। কিন্তু, নবাব-রাজাদের এই জেলার মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছেন লতায় পাতায়।
মা। পৃথিবীতে সুন্দরতম শব্দ। মা বলতে নিশ্চিন্ত আশ্রয়। যাই থাক, মা না থাকলে পৃথিবীতে অনেক কিছু নেই মনে হয়। সেলিব্রিটি হোক বা আটপৌরে। মায়ের কোনও বিকল্প নেই।খবরের কাগজে মায়ের প্রতি নিষ্ঠুর হওয়ার মন খারাপের খবর অবশ্য তবুও সামনে আসে।বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের বয়সের ভারে শুকিয়ে যাওয়া গালও চোখের জলে ভিজে যায়। এবার এক মায়ের স্মৃতিতে তাঁর মেয়ে গানের বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চলেছে শহর বহরমপুরে। এর আয়োজন করতে চলেছেন শহরের সাংস্কৃতিক জগতের মুখ ‘আমি সেই মেয়ে’ সমাজকর্মী চন্দ্রাণী সেনগুপ্ত।
প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে … সহ একাধিক গানে রবীন্দ্র সঙ্গীতের রিহার্সাল চলছে। সামনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনন্যসুন্দর বড় আকারের প্রতিকৃতি রাখা। দেওয়ালে একটি সেলফ মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া কৃতী সম্মাননার স্মারকে ভর্তি। সুন্দর সাংস্কৃতিক আবহ।তারই সঙ্গে রিহার্সালে শিল্পীদের কলতানে সুরে মুখরিত রাণিবাগানের আবাসনের রুম।চন্দ্রানী সেনগুপ্তর ওই রিহার্সাল রুমে সযত্নে রাখা আছে তাঁর বাবা মায়ের ছবিও। মেয়ের শিল্পী সত্ত্বা, সৃজনশীলতা সেখান থেকেই তাঁর মা যেন প্রত্যক্ষ করছেন।সেই মা গীতাদেবীর স্মৃতিতে বড় ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। শহরের সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্র সদনে আগামী ২ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর ‘ গীতাঞ্জলী ‘ নামে অনুষ্ঠান হতে চলেছে। সেখানে থাকতে পারেন সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য, কৌশিকী চক্রবর্তী, স্বাগতালক্ষী দাসগুপ্ত সহ বাংলার সুরের জগতের প্রথম সারির নক্ষত্ররা । ছাত্র ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনে অংশ নেবেন।
চন্দ্রাণীদেবী বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জেলার সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম প্রধান মুখ।তিনি এই জেলায় জন্মগ্রহণ করেননি। তাঁর শিক্ষা জীবনও বাইরে। কিন্তু, নবাব-রাজাদের এই জেলার মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছেন লতায় পাতায়। নবাবের মুর্শিদাবাদকে চাক্ষুষ করার কৌতূহল ছিলই। পড়াশুনো করেছেন কলকাতায়। স্বামীর কর্মসুত্রে বহরমপুর শহরে আসা। কেমন মানিয়ে উঠবেন , নানা প্রশ্ন ছিলই। কিন্তু, আসার পর শহরবাসীর বন্ধুত্বপুর্ণ ব্যাবহারে ভালবেসে ফেললেন এই শহরকে। এরপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। জেলার সংস্কৃতির অঙ্গনে তার নিত্য আসা যাওয়া। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুল, কলেজ, ক্লাব সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁর আমন্ত্রণ আসে। কী চোখে এই শহরকে দেখেন চন্দ্রানীদেবী নিজে? চর্চার কিছু মুহুর্তের অবকাশে বললেন, “এই শহর আন্তরিকতায় পরিপুর্ণ শহর। সংস্কৃতির দিক দিয়ে অসম্ভব ভালো শহর। এগিয়ে দেয় এখানকার বন্ধুত্বপুর্ণ ব্যবহার।” সোজাসাপটা জানালেন, তিনি মানুষকে ভালোবাসেন। ২০০১ সাল থেকে এই জেলা চেনেন। কিন্তু, এখানে ২০০৭ সাল থেকে থাকতে শুরু করেন। ২০০৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক শহর বহরমপুরকে ভালবাসা শুরু। রবিবার ছুটির সন্ধ্যা। বহরমপুরের পাড়ায় পাড়ায় টিভিতে চোখ সবার। একদিকে ভারত পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ক্রিকেট ম্যাচ। অন্যদিকে লাল হলুদ ও সবুজ মেরুন জার্সির ডার্বিতে ফুটবলের মহারণ। তারই মধ্যে এই শহুরে বাড়ি থেকে শুনতে পাওয়া গানের চেনা ছবির এদিনের রিহার্সালের অন্যতম কাণ্ডারী চন্দ্রাণীদেবী জানালেন, কলকাতায় তাঁর জন্ম। বেড়ে ওঠা।ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল, দমদমে মতিঝিল কলেজ । তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা । এরপর লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট। স্বামীর কাজের সুত্রে নবাবের এই শহরে আসা। তারপর ভালবেসে ফেলেছেন।স্বামী ডঃ রঞ্জিৎ রায়চৌধূরীর সহযোগিতাতে তাঁর এই অনুষ্ঠান হবে । মা গীতা দেবীর প্রতি অঞ্জলি থেকে নামকরণ হয়েছে গীতাঞ্জলী ।