শোভন কে কেউ দেখেছেন ? Theatre review

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বিট্টু কৃষ্ণেন্দু: গত ২৭  নভেম্বর বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে শেষ বারের মতো দেখেছি শোভনকে।  পরনে ছিলো পাঞ্জাবি, পাজামা আর পায়ে হাওয়াই চটি, কাঁধে একটা ঝোলা, দেখতে শ্যামলা । চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, একটা আগুন বেরোচ্ছে, যে আগুন এক নিমিষে পুড়িয়ে ফেলতে পারে সমাজের বুকে শীতে ঝরে যাওয়া শুকনো পাতা গুলো কে। সংসারে টানাপোড়েন । বাড়িতে মা বিধবা, দাদা ১৫ হাজারির ছোট চাকরি আর সংসারের কাজ সামলান বৌদি ।

এতক্ষণ আর বলতে বাকি রাখে না , কে এই শোভন। কেনই বা তার খোঁজ? তপোবিজয় ঘোষের গল্প অবলম্বনে “খোঁজ”। নির্দেশনায় অভিজিৎ সরকার ।

চরিত্র : শোভন ( সামিনুর ইসলাম )
এক বাকরুদ্ধ করা অভিনেতা । যখন মাথা স্থির রেখে, চরিত্র হয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে, তখন বোঝা যায় একটা নতুন কিছু পাবো। শোভনের চোখে যে প্রতিবাদের, প্রতিরোধের দাবানলের জ্বলন এবং সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা,তাঁর নাটক দিয়ে বলা যে বার্তা। এই সমস্তটা যেন একসাথে কোথাও আমাদের সত্তা কে নাড়া দেয়। আর যখন এই প্রাসঙ্গিকতা দেখে চোখের কোনা ছলছল করে তখনই মনে হয় , একজন অভিনেতা দর্শকদের নিয়ে খেলেছে এবং ছক্কা মেরেছে, লজ্জা এই প্রাসঙ্গিকতায় ।  কিন্তু শোভন তো বলবেই, তাঁর কথা, মানে সামিনুর ।

চরিত্র : দুই কথক(মৌমিতা ভট্টাচার্য্য  এবং নীপাঞ্জলী রায় )
এই হারিয়ে যাওয়ার গল্প সম্পূর্ণতা পেতো না, যদি ওরা আমাদের কাছে এসে লম্ফটা উস্কে না দিতো । অভূতপূর্ব দুই কথক যাঁরা গল্প টিকে সুন্দর ভাবে এগিয়ে রেখেছে এবং আমাদের শিরদাঁড়া টানটান রেখেছে। ওদের বাচিক, আঙ্গিক দুই ছিলো অসাধারণ।

চরিত্র শোভনের দাদা:(শুভাশিস মহান্ত )
একটা ছোট চাকরি, সপ্তাহে দুইদিন বাড়ি ফেরা ।  সংসারের সব চাপ তাঁর ওপর । বাবা পলিটিক্স করতে গিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান । সেই জন্য ভাই শোভন যেন এইসব নাটক, মিটিং, মিছিল না করে, এই নিয়ে তার ভাই এর ওপর দৃষ্টি ছিলো তুঙ্গে । কিন্তু নিরুপায় । চরিত্র টি করেছে শুভাশিস।  একটি পাঠকে সাবলীল  করে তুলেছে খুব ভালো ভাবে । অত্যন্ত গাম্ভীর্যের সাথে এই চরিত্র টি ফুটিয়ে তোলার জন্য একরাশ ভালোবাসা ।

চরিত্র :বৌদি(রণিতা লাহিড়ী )
শোভন কে তার মতো চলা তে সাপোর্ট করতো বৌদি। ঘরের সমস্ত কাজ একাই সামলাতে পারদর্শী । দাদা বাড়িতে এলে লাগাতার  তক্কো শোভন কে নিয়ে।  শোভন যা করছে মানুষের জন্য করছে তাই নিয়ে তর্ক।  সমাজের জন্য করছে। তার নাটকের মধ্যে দিয়ে সে বার্তা দিতে চায়।
এই রকম দামাল ছেলের বুকের আগুন টা উস্কে দিতো বৌদি, এবং রনিতা তার দক্ষতায় যে ভাবে চরিত্র টি ফুটিয়ে তুলেছেন ।  সকলেই খুব আপ্লুত , কিন্তু শেষমেশ শোভন কে হারানোর যে যন্ত্রনা, কষ্ট, পাথর ফাটার কারণে চোখে জল এনে দেন রণিতা  মানে বৌদি।

চরিত্র :পুলিশ অফিসার  (কেশব মণ্ডল )

এছাড়াও এখনকার সময়ের খাঁকি খোলসের পুলিশ অফিসার যেমন হয় আর কি,সেই রকম এক নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেশব। খুবই সত্য , এবং সবচেয়ে অন্য রকম একটি চরিত্র, যা মানুষের ক্রোধ কে জাগিয়ে তোলে বেশি করে।। সবটুকু দুর্দান্ত অভিনয়ের সাথে ফুটিয়ে তুলেছে।

চরিত্রঃ মা (সীমা সরকার)

সীমা সরকারের পরিণত অভিনয় এই নাটকের খুব বড় প্রাপ্তি। বয়স, উদ্বেগ সবটাই অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

সকলকে অনুরোধ , শোভন যদি আবার ফিরে আসে ওকে আপনারা হারিয়ে ফেলবেন না,, চলে যেতে দেবেন না, । এই সময়ে শোভন কে আমাদের খুব দরকার ।

নাটকটির ভেতর টা ভেতরই থাকলো,, খুঁজে নিন শোভন কে।। নাটকঃ “খোঁজ “, প্রযোজনাঃ  রণ নাট্য সংস্থা। পরিচালনাঃ  অভিজিৎ সরকার