শুক্রবার ‘দিদি’র সামনে মুর্শিদাবাদের নেতারা, তেমন কিছু না হওয়ার আশ্বাসেও অস্বস্তিতে তাঁরা

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ, বহরমপুরঃ রাত পোহালেই ‘দিদি’র ডাকে কলকাতা যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ও বিধায়করা। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে হারের পর প্রথমবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখী হবেন তাঁরা। একুশের ভোটে “দিদি”কে ২০জন বিধায়ক এই মুর্শিদাবাদ থেকে উপহার দেওয়ায় নেতাদের আব্দার মেনে বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন “দিদি”। কিন্তু উপনির্বাচনে হেরে যাওয়ায় সেই “স্বাধীনতা”র প্রশ্নেই আজ বিদ্ধ নেতারা। স্বাভাবিকভাবেই হারের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে “দিদি”র সামনে দাঁড়াতে নেতারা শেষবার সমীক্ষায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন দুরুদুরু বুকে।

গোষ্ঠী কোঁদলে জেরবার একাংশ তৃণমূল নেতা অবশ্য মুচকি হাসছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত “দাপুটে” নেতাদের “কেঁচো” হয়ে যাওয়া দেখে। প্রতিক্রিয়াশীল নেতাদের কেউ কেউ মুখ খুললেও দলের সেইসব সমালোচকদের পাত্তা দিতে অবশ্য নারাজ দায়িত্ববানরা। অনেকেই ভাবছেন সংগঠনেও বদল আনতে পারেন ‘দিদি’, তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবিও উঠেছে অন্দরে। যদিও সে সম্ভবনা নেই বলেই তৃণমূল সূত্রে জানা যায়। খলিলুর নিজেও বলেন “ এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।” তবে ‘দিদি’র সামনে হারার ব্যাখ্যা নিয়ে কী জানাবেন সেই প্রশ্নেও এদিন সাবধানী ছিলেন “ভদ্রলোক” খলিলুর। উপনির্বাচনে হারের পর প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় তৃণমূলের একাংশ নেতার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছে সাগরদিঘিতে। সে বিষয়ে ইতিমধ্যে জেলাস্তরে আলোচনাও করেছেন নেতারা। সেই বৈঠকের “মিনিটস” সঙ্গে করে কলকাতার পথ ধরলেও খলিলুর এদিন বলেন, “ হারের ব্যাখ্যা দলের ভেতরেই জানাবো। বাইরে বলবো না।”

তৃণমূলের একাংশের সুপারিশেই সাগরদিঘিতে প্রার্থী হয়েছিলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জোটের প্রার্থী পদ ঘোষণা হওয়ার পর জেলার তৃণমূলের একাংশ নেতারা প্রশ্ন তোলেন প্রার্থী নিয়ে। উপনির্বাচনে বালিয়া গ্রামে দায়িত্বে ছিলেন বহরমপুর পুরসভার পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, “ ওই এলাকায় ৬৭ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলিম বসবাস করেন। যাঁরা এনআরসি ও সিএএ আতঙ্কে আমাদের পক্ষে ছিলেন। উপনির্বাচনেও ওই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায় তাঁদের ভোটে তৈরি হওয়া সরকারের সদস্য হিসেবে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। যাতে সরকারের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা তাদের ওই প্রতিনিধির মাধ্যমে তাঁরা পেতে পারেন।” কিন্তু দল “হিন্দু” প্রার্থী করায় “মুসলিম”রা জোটের পক্ষে রায় দিয়েছে বলে মনে করেন নাড়ুগোপাল। তিনি বলেন, “ বাইরন (বিশ্বাস) কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে জেতেননি। ওঁর ব্যক্তিগত জীবনও রাজনৈতিক নয়। সামাজিক জীবন তেমন উর্বর নয়। উনি মুসলমান ভাবাবেগ থেকেই উপনির্বাচনে জিতেছেন।”

তিনি ও তাঁর দলের একাংশ সদস্য নির্বাচনের আগে মেরুকরণের ভোটের আন্দাজ করতে পেরেছিলেন জানিয়ে ‘নাড়ু’ বলেন, “ এলাকার অনেককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় ভোটে কতটা ধস নামতে পারে। কোনও সংখ্যালঘু নেতা সে কথা পরিস্কার করে বলতে পারেননি।” তবে এই হার থেকে তিনি “শিক্ষা” পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। নাড়ুগোপাল বলেন, “ কোনও মুসলিম নেতার দ্বারা যে মুসলিম ভোট নিয়ন্ত্রিত হয় না সেটা সাগরদিঘির নির্বাচন থেকে শিক্ষা পেলাম।” এই রাজনীতি ব্যক্তিগতভাবে তিনি চাইছেন না বলেও এদিন স্পষ্ট করেন বহরমপুরের পুরপ্রধান। তিনি বলেন, “ এই সমীকরণেই বহরমপুরে বিজেপি একুশের ভোটে জিতেছে। দেশের রাজনীতিতে ধর্ম এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে একে সুলক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করলে কোনও সমাজ বা দেশ এগোতে পারবে না।”

তবে শুক্রবার দিদির বৈঠকে জেলা নেতাদের তেমন “বকুনি খাওয়া” কিংবা “পদ খোয়ানোর” আশঙ্কা কম বলে মনে করেন শাসকদলের একাধিক প্রবীণ নেতা ও মুর্শিদাবাদের রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। রাজনীতির কারবারিদের দাবি, “ এই মূহুর্তে তৃণমূল শিক্ষা কেলেঙ্কারিতে আদালতের ধাক্কায় বেসামাল। সংখালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ডিএ-র দাবিতে উত্তাল বাংলার সরকারি কর্মীরা। স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতাদের প্রতি নেত্রী কঠোর অবস্থান নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই বড়জোর ধমক দিয়ে পঞ্চায়েতের প্রস্তুতির নির্দেশ দিতে পারেন মমতা।” সে আশ্বাসে অবশ্য গলা ভিজছে না মুর্শিদাবাদের প্রথম সারির নেতাদের।