রাহি মিত্রঃ স্নান একটি অত্যন্ত সহজ আর সাধারণ কাজ যা আমরা সকলেই করে থাকি। স্নান-খাওয়া এই দুটি পর্ব একএে একে অপরের সাথে জুড়ে থাকে । খাওয়া নিয়ে নানান বিধি-নিষেধ থাকলেও স্নান নিয়ে তেমন কোন ভাবনা বা কোন বিধি নিয়ম কেউ মানে বলে মনে হয় না । কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন সুস্থতায় বা অসুস্থতায় স্নানের যোগ আছে । সঠিক সময়ে বা সঠিক নিয়মে স্নান করাতে শরীর অনেকখানি সুস্থ থাকে । সতেজ থাকে। বলাবাহুল্য সুন্দর থাকে।
মাঘের শীতে স্নান নিয়ে বেশি বেশি কথা বলা টা নেহাতই অনেকেই ভালোভাবে নেবে না জেনেও বলতেই হচ্ছে নেহাতই সুস্থতার কথা ভেবেই৷। সারা বছর যাঁরা ঠান্ডা জলে স্নান করেন তাঁরাই শীতকালে গরম জলে স্নান করেন । শীতে কিছুটা গরম জলে স্নান করা মন্দ নয় । তবে লাগাতার গরম জলে স্নান এর ফলে শরীর গরম হয়ে যেতে পারে । আবার চুল ও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে গরম জলে কিছুটা৷। তবে শীতকালে রোজ স্নান করা যায় কিনা তা নিয়ে নানা মহলে নানা মতবিরোধ রয়েছে৷। অনেকে মনে করেন শীতে রোজ স্নান করলে আর সাবান মেখে করলে ত্বকের প্রাকৃতিক অয়েল ধুয়ে যায়। ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় । আবার কেউ কেউ বলেন শীতে সপ্তাহে তিনদিন স্নান করলেই যথেষ্ট । তবে এ দুটির কোনোটিই ঠিক নয় । কারণ রোজ সাবান মেখে স্নান করলে সত্যি করেই ত্বক রুক্ষ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । আর এটি নিষ্প্রয়োজন । তবে তার চেয়ে অনেক বেশি ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যায় যদি স্নান না করা যায় তো । শীতকালেও প্রতিদিন স্নান করা উচিত যদি শরীর পুরোপুরি সুস্থ থাকে। প্রতিদিন স্নান শরীরের সুস্থতা কে ধরে রাখে শরীরকে সতেজ রাখে । তবে প্রতিদিন সাবান মেখে স্নানের কোনো প্রয়োজন নেই৷। সপ্তাহে এক থেকে দু দিন সাবান মাখলেই চলবে । আর ত্বকের প্রয়োজনীয় আদ্রতা নির্ভর করে ত্বকের যত্নের উপর৷।
প্রতিদিন স্নানের পর ত্বকে অয়েল ম্যাসেজ করা বা ময়েশ্চারাইজার লাগানো অবশ্য প্রয়োজন । এটি করলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় না।
শীতে সুস্থ ত্বক , সুস্থ শরীর রাখতে স্নান অত্যন্ত জরুরী । স্নান কে ভয় না করে শীতে নিয়মিত স্নান করলে ঠান্ডা লাগা বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায় । শীতের শুষ্ক আবহাওয়াতে , বাতাসে ত্বক আরো বেশী শুষ্ক হয়ে যায়৷। স্নান না করলে তা থেকে এগজিমা বা অন্যান্য চর্ম রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে । স্নানের জলে এসেনশিয়াল অয়েল তুলসী পাতা, গোলাপের পাপড়ি, লেবু মিশিয়ে স্নান করা যেতে পারে । এতে ত্বক সতেজ হয় । এছাড়া শীতকালে শরীরে বেশি জামাকাপড় থাকার কারণে শরীর গরম হয়ে যায়, তাই স্নান জরুরী৷। শীতকালে স্নান করলে ঘুম ভালো হয় । শীতে সাবান কম ব্যবহার করা উচিত আর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান তো নয়ই। কারণ এই সাবান শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে মেরে দিতে পারে । ফলে খারাপ ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি হয় । আর ত্বক যদি সংবেদনশীল হয় অথবা ত্বকে কোন ধরনের চর্মরোগ থাকে তবে এই সাবান তো একেবারে না। শীতে স্নানের সময় কম রাখতেই হবে কারণ দীর্ঘক্ষন স্নান করলে শীতে সবদিক থেকেই ক্ষতি ত্বক থেকে সারা শরীরের ।
এ তো গেলো শরীরের কথা । এছাড়াও আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় আছে যাতে ত্বকের সমস্যা হতে পারে সেগুলি হল শীতে ভিজে তোয়ালে থেকে বাথরুমে থাকা স্নানের সময় ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র কে নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরী । মনে রাখতে হবে স্নান বিষয়টি কেবল মাত্র মাথায় বালতি বালতি জল ঢালা বা যে কোন অবস্থাতে শাওয়ারের নিচে এসে দাঁড়ানো একমাত্র নয়। তার চেয়েও বেশি কিছু। স্নানে জড়িয়ে থাকে শরীর এবং মনের সতেজতা।