শীতের মধ্যেও ভোরের ট্রেনে , কাঁধে পেয়ারার ঝুড়ি । কেমন হচ্ছে পেয়ারা বিক্রি ?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ  মুর্শিদাবাদে লালগোলা শিয়ালদা রেল পথে ভোর বেলার প্রথম ট্রেন ভোর ৩টে ৪০ মিনিটে। শ্যামল দাসরা অনেককেই রাত না পোহাতে এই ট্রেনের অপেক্ষা করেন। অপেক্ষা নিজেদের রুটি রুজির জন্য। এই ট্রেন লালগোলা থেকে রানাঘাট পর্যন্ত নিয়মিত চলে। ট্রেন পলাশী, পাগলাচন্ডি আসতেই প্রায় ফাঁকা। যদিও ফাঁকা জায়গা পূরণের লোকের অভাব হয়না এই ভোরের ট্রেনে।

ভোরের প্রথম ট্রেনে ওরা মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গা, যেমন – জিয়াগঞ্জ, লালগোলা, লালবাগ,সারগাছি, বলরামপুর থেকে বহু মানুষ আসেন পেয়ারা কিনতে। পেয়ারা বিক্রি করেই ওদের সংসার চলে। এদের মধ্যে একজন শ্যামল দাস। প্রত্যেকদিন জিয়াগঞ্জ থেকে ৪টে বেজে ২মিনিটে এই লালগোলা রানাঘাট স্পেশাল মেমু ট্রেন ধরেন। তারপর নিজের বড়ো ঝুড়ি মাথায় করে নেমে যান পলাশী। তারপর সেখান থেকে কখনো যান গোবিন্দপুর,আবার কখনো বেগমপুর,কখনো বা বিলবাবাউর। বাজারে পেয়ারার দাম অনুসারে বাগান পিছু ওঁরা পেয়ারা কেনে ১৬০০/১৭০০ টাকা করে, এমনটাই জানালেন বছর ষাটের শ্যামল দাস।

শ্যামল জানান,“সারা বছর এই পেয়ারাই বিক্রি করি। ভোর বেলায় জিয়াগঞ্জ থেকে ট্রেন ধরে পেয়ারা কিনতে আসি। তারপর সারাদিন বিক্রি করে ফিরে যাই। আবার ভোর না হতেই ট্রেন ধরি।” এটাই শ্যামলের মতো আরও সকলের প্রাত্যহিক জীবনপঞ্জী। শ্যামল দাস মূলত নদিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পেয়ারা কিনে এনে বিক্রি করেন বহরমপুর গির্জার মোর SBSTC বাস স্ট্যান্ডের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম ট্রেন ধরার তাড়ায় ঘুম হয়না রাত্রে; ট্রেন থেকে নামার সময় চোখ ডলতে ডলতে মাথার গামছা ঠিক করে নেন। মাথায় ঝুড়ি চাপিয়ে পাশে থাকা আরও এক সহ যাত্রী কে বলেন, “কর্ম তো করতেই হবে!নইলে চলবে কি করে। ”পলাশী স্টেশন আসতেই গেটের কাছে শুধুই ঝুড়ি, নামার তাড়া সকলের। যে যত আগে পৌঁছবে সে হয়ত বাগানের ভালো পেয়ারাটা সংগ্রহ করে বাজারে আনতে পারবে।

ভোরের ট্রেন

শ্যামলের আরও সঙ্গী জানান (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ) “ আমরা এই ট্রেনে রোজ প্রায় আড়াইশো জন যাতায়াত করি পেয়ারা কেনাবেচার সুবাদে। তবুও আমরা অনেকেই অনেকের নাম আজ পর্যন্ত জানিনা। শুধু সবাই সবাই কে চিনি।”

যখন পেয়ারার ফলন কম হয় তখন ওদের কারও পেশা হয় সবজি বেচা অথবা চাষবাস করা । আবার কেউ রাজ মিস্ত্রির কাজ ও করেন। ভোরের প্রথম ট্রেনটা যেন মেহনতি মানুষের। এই ট্রেনে সবাই ছোটে, ট্রেন থেকে নামতে নামতে পেয়ারা বিক্রেতাদের আরও সহযাত্রী মতিব শেখ (পেশায় রাজমিস্ত্রি )হাসতে এমনটাই বলেন।
কথা প্রসঙ্গে শ্যামল জানান,“আমার বয়স এখন ৬০|প্রায় ২৫/৩০ বছর এই ট্রেনেই কেটে গেল। আমাদের অনেক অভাব রয়েছে। অনেক সমস্যা সংসারে। তবে আমরা এই অল্পতেই ভালো আছি।”