শিক্ষাকে আলোয় ফেরাবে কারা?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

স্নেহাংশু চট্টরাজঃ 

বিদ‍্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনায় ধুম পড়েছে বিদ‍্যালয়ে বিদ‍্যালয়ে। প্রতিমা আনা থেকে পুজোর জোগানে বিরামহীন পড়ুয়ারা। সঙ্গী তাঁদের শিক্ষকরাও। এটাই স্বাভাবিক। মাথা নিচু করে প্রবেশ করে মাথা উঁচু করে প্রস্থান করতে হয় একমাত্র বিদ্যালয় থেকে। আর তা সম্ভব হয় শিক্ষকের সৌজন্যেই। মণীষিরা সে কথা বলেছেন অনেক আগেই। এই স্কুল জীবনেই মানুষ খোলা মনে শিক্ষা নেয়। নিজেকে চিনতে পারে, জানতে পারে। শিক্ষকরা তাকে সহযোগিতা করেন। এ যেন কুঁড়িকে যত্নে ফুল ফোটানোর কাজ। শিক্ষকরা সোৎসাহে সেই কাজ করতেন। আনন্দ পেতেন। তৃপ্তি পেতেন।

কিন্তু ২০২৩ এর সরস্বতী পুজোয় পড়ুয়াদের মনে শিক্ষকের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আদালত। শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির শিকড় কতদূরে, তা নিয়ে এখনও হাতড়ে চলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে শিক্ষক পদে অযোগ্য হয়েও সেই পদে কেউ চাকরি পেয়েছেন। যিনি সেই টাকার বিনিময়ে তাকে চাকরি দিয়েছেন, তা তাঁর ক্ষমতা অপব্যবহার করে। কোন ক্ষমতা? সেই ক্ষমতা তাঁকে বা তাঁদের দিয়েছেন জনতা। সেই জনতার শিক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষক দরকার। সেই শিক্ষক নিয়ে হয়েছে জালিয়াতি। অর্থাৎ জনতাকে ঠকালো ক্ষমতা। শিক্ষাঙ্গনে পুজো নিতে এসে সরস্বতী ও কি তা জেনে মুচকি হাসছেন? অশিক্ষকদের রাজ‍্য জুড়ে রমরমা দেখে লজ্জিত শিক্ষক কূল। শিক্ষক কেমন শিক্ষিত তা নিয়ে আজ সন্দেহের অবকাশ নেই পড়ুয়াদের মনে। অথচ তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে গুণী ব‍্যক্তিকে পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই কমিশনের মাধ্যমেই এই দুর্নীতি হল শিক্ষাক্ষেত্রে। কোথাও কোন ও তেমন জোড়ালো প্রতিবাদ নেই। দু-চারবার যে রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের বিরুদ্ধে চিৎকার করলো সেই চিৎকার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির নির্দেশের ওপরে উঠতে পারল না। পড়ুয়ারা কি জানলো? কি বুঝলো?

পড়ুয়াকে স্কুল ছুটের হাত থেকে বাঁচাতে মিড ডে মিল খাওয়ানো শুরু করেছে সরকার। সেই মিড ডে মিলের গুণগত মান নিয়ে নিরন্তর অভিযোগ। পড়ানোর বদলে রান্নাবান্নার দিকে নজর দিয়েছেন শিক্ষকরা। তার মান নিয়ে চিন্তায় রাজ‍্য কেন্দ্র উভয়েই। আর শিক্ষার মান বাঁচানোর উপকরণ দিয়ে শিক্ষাকে অন্ধ গলিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছেন স্বার্থান্বেষীরা। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছেন একাংশ শিক্ষক। গৌণ হয়েছে শিক্ষা।

শিক্ষানীতির সংস্কারের নামে শিক্ষার পায়ে বেড়ি পড়িয়েছে সরকার। রাজ‍্য তা অন্ধ অনুকরণ করছে। শিক্ষাবিদরা আতঙ্কিত শিক্ষার বেহাল দেখে। কিন্তু হাল ফেরাতে কে এগিয়ে আসবে? কারা এগিয়ে আসবে এই অন্ধকার গলি থেকে শিক্ষাকে আলোয় ফেরাতে? এখনও এগিয়ে না এলে পুজোতে নকল আলো দিয়ে বিদ‍্যাঙ্গন সাজানোই সার হবে। অরণ‍্যে রোদন হবে “বিদ‍্যাং দেহি”। শিক্ষায় আলোর পথ অবরুদ্ধই থাকবে।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)