মেলেনি ফোন, বছর শুরুর প্রথমদিনেই বিধায়কের বাড়ি থেকে উদ্ধার দুর্নীতি যোগের ছ’ব্যাগ নথি

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, কান্দিঃ এমন বর্ষবরণ শেষ কবে দেখেছে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর জন্মভিটে? বছর শুরুর প্রথমদিনেই বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়ি থেকে উদ্ধার ছ’ব্যাগ নথি। যাঁর সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির যোগ স্পষ্ট, দাবি সিবিআইয়ের। তবে এখনও খোঁজ মেলেনি মোবাইলের। বিধায়কের গ্রেফতারি এখন সময়ের অপেক্ষা দাবি সূত্রের। উত্তেজনা কান্দির আন্দি জুড়ে।

শিক্ষকের মতো সমাজগড়ার পেশাকে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে কার্যত দাঁড়িপাল্লায় তুলে অযোগ্যদের এ বঙ্গের শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের ছাড়পত্র দিয়েছেন অসাধু ব্যক্তিরা। যাঁদের মধ্যে আছেন বিধায়কও। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। দাবি সিবিআইয়ের। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির কান্ডে সন্দেহদের তালিকায় বিধায়ক হিসেবে জেলায় প্রথম কিন্তু জীবনই। তৃণমূলের টিকিটে জিতে ২০২১ সালে তিনি প্রথমবার বিধায়ক হয়েছেন। তবে দুর্নীতিতে তাঁর হাতেখড়ি অনেক আগেই। সূত্রের দাবি, ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্র বিলিয়েই পেশায় শিক্ষক জীবন পা ফেলেছিলেন শিক্ষা জগতের দুর্নীতিতে।

শুক্রবার দুপুর বারোটা থেকে শনিবার দুপুর বারোটা। টানা ২৪ ঘন্টার বেশি বিধায়ককে নজরবন্দী করে অক্লান্ত জেরা করে চলেছেন কেন্দ্রের তিন দলের দুঁদে গোয়েন্দারা। বিধায়কের নিজের বাড়ি, আত্মীয়দের বাড়ি সর্বত্র খুঁজে চলেছেন নির্দিষ্ট নথির খোঁজ পেতে। ইতিমধ্যে প্রচুর নতুন নথি উদ্ধার হয়েছে যাঁর সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি কান্ডে গুরুত্বপূর্ণ যোগ রয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। আর এসবের প্রত্যক্ষ যোগ মুছে ফেলে তাঁদের হাত থেকে বাঁচতে নিজের দুটি ফোনের মায়া ত্যাগ করেছেন জীবন। বিধায়কের আচমকা এই সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে হকচকিয়ে যান তদন্তরত গোয়েন্দারা। সন্দেহবশত আম বাগান থেকে বাড়ির পুকুর রাতভর তন্নতন্ন করে খুঁজেও সিবিআই এখনও হদিশ পাননি বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার দুটি মোবাইলের। তবে কী ফোন হাত বদলিয়েছে? ভাবাচ্ছে সিবিআই আধিকারিকিদেরও।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে বিধায়ক হঠাৎ তাঁর ফোন হারাতে গেলেন কেন? তবে কি সেখানেই লুকিয়ে ছিল রহস্যের সমাধান। তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনীতির উত্তরীয় চাপানোর অনেক আগে থেকেই স্কুলে স্কুলে শিক্ষক পদ পাইয়ে দেওয়ার কারবারে পোক্ত ছিলেন জীবন। সেই সূত্রেই তৃণমূলের তাবড় নেতাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা তিহার জেলের বর্তমান কয়েদি অনুব্রত মন্ডলের সঙ্গেও জীবন যোগের হদিশ পেয়েছে সিবিআই। সেই সব পরিচিতি থেকেই বিধায়ক হিসেবে জীবনের লড়বার ইচ্ছা ও উল্টোদিকের প্রস্তাব। দলের একাংশের দাবি, ‘বড়লোক’ জীবন ভোটের লড়াই লড়তেও ‘জলের মতো’ টাকা খরচ করেছিলেন। সে সবই না কি ধরা ছিল মুঠো ফোনে।

কিন্তু অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, “ সত্যিই ফোন জলে ফেললে কিংবা গায়েব করলে বিপদ জীবনেরই বেশি। নিজের গ্রেফতারের পাশিপাশি সত্যি প্রমাণীত হলে শুধুমাত্র প্রমাণ লোপাটের জন্যই বিধায়কের লম্বা সাজা বাঁধা।” তথ্য প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, জলে ফোন ফেললেও সে দুটি উদ্ধার হলে ডেটা নষ্ট হবে না। তবে তারও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। ভারি ফোন পুকুরের গভীরে চলে গেলে কাদায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে ফোনের একাধিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ। আর তা নষ্ট হয়ে গেলে কিছু করার থাকবে না।” আর যদি কোনও শুভানুধ্যায়ীর মাধ্যমে ফোন চলে যায় বাইরে তাহলেও সেই ফোন উদ্ধার করা সম্ভব। তবে সেটা আদৌ পাওয়া যাবে কি না, পেলেও কেমন অবস্থায় পাওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গোয়েন্দাদের মনেও। তবে ফোনের হদিশ দিতে বিধায়ক কুন্ঠাবোধ করলেই তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআইয়ের কলকাতা শাখায় নিয়ে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা বলেই দাবি রাজ্য গোয়ান্দাবাহিনীর একাংশের। বিধায়কের পাশে এখনও পর্যন্ত দেখা মেলে নি তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশের। তবে চেনা বিধায়কের বাড়িতে এহেন তদন্তে “অবাক হচ্ছি না” বলেই দাবি স্থানীয়দের।