মুর্শিদাবাদেও কি “ব‍্যালট বিশৃঙ্খলা”র সম্ভাবনা! ভাবনায় তৃণমূলের মাথারা

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ দিন দুয়েক পরেই মুর্শিদাবাদে আসছেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জেলার আনাচে কানাচে দলেরই একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে এখনও ধিকি ধিকি ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। কিছুতেই বাগে আসছে না গোষ্ঠী কোন্দল। ফলে অভিষেকের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে মুর্শিদাবাদেও ‘ব্যালট বিশৃঙ্খলা’র সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না দলের তাবড় নেতারা। পুলিশও প্রস্তুতি নিচ্ছে তা সামলানোর।

অন্ততঃপক্ষে মঙ্গলবার সালারে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা সেদিকেই ইঙ্গীত দিচ্ছে। শুধু দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ কেন গোলযোগ উত্তর মুর্শিদাবাদেও হচ্ছে। ওই একইদিনে সমসেরগঞ্জেও সামনে এসেছে দলীয় বিবাদ। ফলে দলের একাংশের আশঙ্কা অভিষেকের সফর নিষ্কন্টক হবে না মুর্শিদাবাদে। তবে তৃণমূলের অন্য একটি অংশ অবশ্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ‘ছেঁড়া কাঁথা’ দলের ভেতরেই রাখতে। তারজন্য কোথাও কোথাও পাখি পড়ানোর মতো করে বোঝানো হচ্ছে নানা কারণে দলের প্রতি ‘অসন্তুষ্ট’দের। তবু কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের ছাপ এড়ানো মুর্শিদাবাদেও যে মুশকিল তাও মানছেন দলের মাথারা। দলের জঙ্গিপুর সংগঠনের চেয়ারম্যান কানাই মন্ডল বলছেন, “ ছোট খাটো ঝামেলা অশান্তি তো বড় সংসারে লেগেই থাকে। বাড়িতেই কি সব ঝামেলা মেটে। এখানেও তাই।”

রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। তার আগে দল গোছাতে পথে নেমেছেন অভিষেক। ৬০ দিনের সেই “নবজোয়ার” কর্মসূচিতে শুক্রবার এসে সোমবার জেলা ছাড়বেন তিনি। এর আগে তাঁর লম্বা সফর কখনও দেখেননি তৃণমূলের বড়, ছোট কোনও নেতাই। তেমনি বিরোধীরাও এখনও ঠাওরাতে পারছেন না তৃণমূলের নব জোয়ারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁদের জন্য ভাঁটা অপেক্ষা করছে কি না? তাঁরাও অপেক্ষা করছেন অভিষেকের সফরের।

তাঁর সম্পূর্ণ সফরসূচি এখনও স্পষ্ট নয় দলেরই কারও কাছে। জেলা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিষেক কোনও সভা করবেন না জেলায়। তার বদলে রোড শো’এ অংশ নেবেন তৃণমূলের এই ‘দু-নম্বর’ নেতা। ফরাক্কা থেকে তাঁর সফর শুরু হবে। আর তা ছুঁয়ে যাবে জেলার সবক’টি বিধানসভা। কানাই বলছেন, “ চারদিনে ২২টি বিধানসভা ছোঁয়া খুব শক্ত। যতটা সম্ভব এলাকায় যাওয়া হবে। না হলে আশেপাশের বিধানসভার মানুষদের কাছের কোনও বিধানসভায় ডেকে নেওয়া হবে।”
প্রথম দিন ফরাক্কা, সমসেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, লালগোলা হয়ে ভগবানগোলায় রাত্রিবাস। পরের দিন একইভাবে জলঙ্গি, রানিনগর হয়ে নওদায় রাত্রিবাস। আট তারিখ সাগরদিঘি হয়ে তিনি চলে যাবেন ভিন জেলায়। সেই রোড শো’এর পাশাপাশি অধিবেশনও বসবে বিধানসভায়। থাকবে ব্যালট বাক্সও। সেই ব্যালট বাক্স যেখানে থাকবে তারজন্য প্রয়োজন আট থেকে দশ একর জমি। সব জায়গায় এতবড় মাঠ পাওয়া যাচ্ছে না । যেমন সাগরদিঘির পরিবর্তে নবগ্রামের ভোলাডাঙার মাঠে বসবে অধিবেশন, দাবি কানাইয়ের। সেখানেই পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ভোটদান পর্ব চলবে। সেখানেই নজর সব পক্ষের। ” সংবাদ মাধ‍্যমের বেশি” বলে এদিন সংবাদমাধ্যমকে কটাক্ষ ও করেন কানাই।

তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা যায়, সন্তুষ্ট, অসন্তুষ্ট সকল তৃণমূল কর্মীই অভিষেকের রোড শো’তে পা মেলাবেন। দৌলতাবাদ পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ রুবেল বিশ্বাস বলেন, “ আমাদের ব্লক সভাপতি আইজুদ্দিন মন্ডল। তিনি কোনও মিটিং মিছিলে আমাদের ডাকেনও না আমরা যাইও না। আমরা এখন যুব সংগঠন নিয়ে আছি। ওদের সঙ্গেই তৃণমূল করছি। তাই যুব সংগঠনের হয়েই অভিষেকের সভায় যাব।” তবে তিনি দল না চাইলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়বেন না বলেই এদিন জানিয়েছেন। তিনিও চাইছেন “ সুশৃঙ্খল হোক অভিষেকের সফর।” বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলছেন, “ প্রাথমিকভাবে গণ্ডগোলের কোনও প্রশ্নই নেই। তবে দুর্ঘটনাতো বলে আসে না। এক্ষেত্রেও তাই। তেমনি এতবড় দলে এত মানুষকে একত্রিত করা হচ্ছে। সকলেই অভিষেকের সঙ্গে দেখা করতে চাইবেন। হাত মেলাতে চাইবেন। হুড়োহুড়ি হতে পারে। ফলে পরিস্থিতি আর বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে ব্যবস্থাও নিতে হবে।”