মুম্বাই কাঁপাচ্ছে মুর্শিদাবাদের জেনি, নতুন ছবি ‘বুন্দ’ নিয়ে কী বলছেন ? Exclusive Interview

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম নটিয়াল ; বছর ২০ আগেও হয়তো সেখানকার সমস্ত পরিবার ঠিকমতো বিদ্যুতের আলো বা অন্যান্য পরিষেবাও পায়নি!আর সেই গ্রামে বসেই একটা ছোট্ট মেয়ে স্বপ্ন দেখেছিল সিনেমা বানানোর! উচ্চ মাধ্যমিকের পরে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে বহরমপুর কলেজের ফিল্ম স্টাডি বিভাগে ভর্তি হয় বছর ১৮ র সেই ফর্সা, ছিপছিপেমেয়েটা! বর্তমানে সেই মেয়েটাই বাংলার বুকে দাপটের সাথে পর পর দুটো হিট ছবি দিয়ে এখন মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রি কাঁপাচ্ছে! যে মেয়েটা প্রসঙ্গে আজও বহরমপুর কলেজের চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় ভীষণ গর্ববোধ করেন, তার সাথেই বলে ওঠেন “ ওর মত ছাত্রী খুব কম পাওয়া যায়।আজ ও নিজে প্রতিষ্ঠিত, এখনো কোন প্রয়োজনে কোন ছেলে মেয়েকে যদি ওর কাছে পাঠাই ও ওর সাধ্যমত সাহায্য করে ।”সেই মেয়েটার লক্ষ্য আজও একটাই ভালো সিনেমা বানানো | বহরমপুর কলেজের সেই মেয়েটি আজকের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক জেনি সরকার |

বর্তমানে বঙ্গতনয়া জেনি সরকার ব্যস্ত তাঁর আসন্ন চলচ্চিত্র “বুন্দ ” ছবির পোস্ট প্রোডাকশন নিয়ে এবং পরবর্তী বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে। “বুন্দ ” গল্প বলবে ভারতবর্ষের সব থেকে বড়ো সমস্যা জল অপচয় নিয়ে। আর কিছু বছর পরে মানুষ এই পানীয় জল নিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে এবং তা থেকে কিভাবে সমাধান হতে পারে, তা নিয়েই খুব অল্প দিনে বড়ো পর্দায় আসতে চলেছে “বুন্দ ” | যাঁরা সিনেপ্রেমী তাঁদের অনেকেই ভীষণ আশাবাদী এই বুন্দ ছবি নিয়ে। “জেনি-দ্বীপায়ণ জুটির ‘আমার শহর ’, ‘তিনপাত্তি’ দেখার পর এটুকু বলতেই পারি ওঁরা যে কাজটা করবে সেটা সবার থেকে ডিফারেন্ট হবে ”, এমনটাই অভিমত সিনেমা প্রেমী মানুষদের। বর্তমানে মধ্যবঙ্গের এই সুন্দরীর মুম্বাইয়ের জগৎ কেমন কাটছে, কবে বাংলা ফিরছেন, তাঁর ব্যক্তি জীবনের ওঠাপড়া সব নিয়েই কথা বলেছিলেন মধ্যবঙ্গ নিউজের প্রতিনিধি বেদান্ত চট্টোপাধ্যায় |

বেদান্তঃ ‘তিনপাত্তি ‘, ‘আমার শহর’, ‘জিঙ্গেল বেল ’(এখনো মুক্তি পাইনি যদিও ), পরপর ভালো ছবি টলিউড ইন্ডিস্ট্রি কে উপহার দিয়েছেন! এখন তো বলিউড নিয়ে ব্যস্ত, বাংলায় তবে কবে ফিরছেন?

জেনি : আপাতত আগামী ৫ বছরে কলকাতায় ফেরার ইচ্ছে নেই। মুম্বাই তে অনেক গুলো কাজ পেন্ডিং আছে ওগুলো আগে শেষ করি তারপরে ফেরার বিষয়ে ভাববো।

বেদান্তঃ না ফেরার কি কোনো বিশেষ কারণ? বা কোনো আক্ষেপ!

জেনি : না আক্ষেপ তেমন নেই!তবে আমার মনে হয় বাংলা আমাদের কাজ হয়তো বুঝতে পারেনি! লবি সর্বত্র আছে, থাকবেও, তবে বলিউডে সব সময় নতুন কিছু করার চান্স আছে।

বেদান্তঃ আজকে বাংলার বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি এবং বোম্বে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কি পার্থক্য অনুভব করেন?

জেনি : এভাবে পার্থক্য বলাটা সত্যি খুব মুশকিল! তবে এই মুহূর্তে যেটা বড়ো সমস্যা কয়েকটা নতুন ছবি বাদ দিয়ে টলিউড একটা পার্টিকুলার জনার ধরে নিয়েছে। বলিউডেও অনেকটা তাই। তবে ধীরে ধীরে বলিউড সেই প্রথা ভাঙছে, নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি অনেক ভালো কাজ করতে পারে, কিন্তু ওঁরা ঐ OTT, ব্যোমকেশ, ফামিলি ড্রামার বাইরে ওঁরা বেরোবে না!টলিউড এখনো অনেক জনার স্পর্শই করছে না।সাউথ ইন্ডাস্ট্রি একটা রিজিওনাল জায়গা হলেও আজকে কত ন্যাশনাল জায়গা নিয়ে ভাবছে। বলিউড তাও অনেক বিষয়ে নিজেকে নতুন করে ভেঙে গড়ে অনেক কিছু করার চেষ্টা করছে কিন্তু বাংলা নিজের জনার ছেড়ে বেরোবে না!এটাই পার্থক্য বা আক্ষেপ ও বলতে পারেন!

See also  একশো বছরে ইতিহাসের উপেক্ষিত নায়ক সুধীন সেন, বছরভর বহরমপুরে অনুষ্ঠান

বেদান্তঃ গতদুবছর লকডাউন, অতিমারী সব মিলিয়ে সেভাবে কোনো কাজ করতে পারেননি, ঐ সময়টা কিভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন? যতদূর জানি কলকাতায় বা নিজের গ্রামের বাড়িও ফেরেননি!কিভাবে কেটেছিল ঐ দিনগুলো?

জেনি : অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এটা সত্যি। তবে নিজের জায়গা ছেড়ে ফিরে যাব এটা কখনো মনে করিনি। আমি একটা কথাই ভীষণ বিশ্বাস করি struggle for betterment. আমি সিনেমাটাই ভালোবাসি আমি ভালো সিনেমায় তৈরি করতে চাই, তাই কোন শর্তেই আমি বোম্বে ছেড়ে বেরোতে চাইনি। আর লকডাউনের কথা বলছেন, আমি সম্পূর্ণ নিজের জন্য কাজে লাগিয়েছি, নতুন কিছু স্ক্রিপ্ট লিখেছি। নতুন করে নিজেকে ভাঙ্গার তৈরি করার সুযোগ পেয়েছি। সব কিছুরই একটা পজিটিভ দিক আছে সেই দিকটা আমাদের নিজেদেরকে খুঁজে নিতে হয়। লকডাউন এ অতি মাটিতে অনেক মানুষকে আমরা হারিয়ে ফেললেও, কষ্ট হলেও ব্যক্তি আমি পড়াশোনার দিক থেকে বা নিজের কাজের দিক থেকে অনেকটা এনরিচ হতে পেরেছি ঘরে বসেও। বলতে পারেন ওই সময়টা শাপে বর হয়েছে আমার।

বেদান্তঃ মুর্শিদাবাদ নিয়ে কাজ করার কি কোন ইচ্ছে রয়েছে কখনো?

জেনি : অবশ্যই একশো বার মুর্শিদাবাদ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে (ভীষণ উচ্ছ্বাসের সাথে )। অনেকদিন ধরেই অনেকে একটা প্রজেক্ট এর উপর কাজ করতে চাইছে, এটা হলো নবাব সিরাজউদ্দৌলা। আমারও ইচ্ছে আছে মির্জাম মোহাম্মদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে নিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট করার, যেটা আমার ড্রিম প্রজেক্ট বলতে পারেন। আর সোশ্যালি যদি বলেন তাহলে মুর্শিদাবাদে অনেক ট্যালেন্টেড মুসলিম মেয়ে রয়েছে তাদেরকে তুলে ধরা। এছাড়াও মুর্শিদাবাদের প্রচুর ট্যালেন্ট রয়েছে সোশালি বিভিন্নভাবে সামনে নিয়ে আসা। আমি নিজেও মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছি, সেখানে যদি কেউ ভালো কাজ করে আমি অবশ্যই তাকে বা তাদেরকে নিয়ে কাজ করার কথা ভাববো।

বেদান্তঃ মুর্শিদাবাদ দিয়ে মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে কি বলবেন বিষয়টাকে নিয়ে? বাংলার বাইরে লোকজন মুর্শিদাবাদ কে কি চোখে দেখে?

জেনি : আজকে বাংলার বাইরে বসে মনে হতে পারে মুর্শিদাবাদ কে নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। বাংলায় বসে মুম্বাই কে নিয়েও অনেক লোকের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সবটা যে ভুল এমনটা নয়, নেগেটিভিটি বাদ দিলে অনেক ভালো কিছু আছে। মুর্শিদাবাদ যেমন তার ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত তেমনি মুর্শিদাবাদের বহু প্রথিতযশা মানুষ সেখানকারই বাসিন্দা। বর্তমানে অরিজিত সিং নাম বললেই কিন্তু পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ নামটা উচ্চারণ হয়। সেখানে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আমি খারাপ কিছু দেখি না, মুর্শিদাবাদে অনেক ভালো কিছু আছে যেটাকে কাজে লাগানো সম্ভব।

See also  স্বাধীনতার দিনেও পরাধীন ছিল মুর্শিদাবাদ

বেদান্তঃ এবার একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন ; জেনি দীপায়ন জুটি একটা নাম! তবে ইন্ডাস্ট্রির এই পলিটিক্স এর মধ্যে থেকেও নিজেদের বন্ধুত্বকে কিভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন আজ পর্যন্ত?

আমাদের মূল বিষয় যেটা, দুজনেই একই কাজ করতে ভীষণ পছন্দ করি। মতাদর্শগত দিক থেকেও আমাদের অনেকটাই মেলে। কাজ করতে গেলে পার্সোনাল রিলেশনে অনেক সমস্যা হয় এটা সত্যি। তবে আমরা কাজের সময় আমাদের কাজটাকি প্রথম গুরুত্ব দিই। বন্ধুত্ব তো সারা জীবন থাকবে,আছে। (মৃদু হেসে ) হ্যাঁ এটা সত্যি আমাদের জুটি ভাঙার অনেক চেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

বেদান্তঃ ব্যক্তি জেনি সরকারের এমন কোন ইচ্ছা যেটা এখনো পূরণ হয়নি?

জেনি : আসলে সে দিক থেকে দেখতে গেলে হয়তো আমার অনেক কিছুই পূরণ হয়নি! তবে হ্যাঁ সিনেমা নিয়ে আমার অনেক কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। আমার মা যতদিন ছিলেন মাকে কিছু কথা দিয়েছিলাম কিছু স্বপ্ন রয়েছে, এগুলো পূরণ করতে পারলে হয়তো একটু স্বস্তি পাব। আজকের স্ট্রাগেলটা হয়তো একটু শান্তি দেবে। সত্যি কথা বলতে আমি গ্ল্যামার এর জন্য আসিনি। কাজটা করতে পারি সেই কাজের মাধ্যমে সোসাইটি তে অনেক কিছু দিয়ে যাওয়ার আছে, পয়সা খুব অল্প সময়ের জিনিস।

বেদান্তঃ বর্তমানে বলিউড- টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সদ্য নবাগত যারা তারা খুব অল্প দিনেই পরিচিতি লাভ করে ধীরে ধীরে আলোর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে! পরিষ্কার করে বললে যেটা বলা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে! কি বলবেন বিষয়টাকে নিয়ে?

জেনি : যারা অভিনয় কে কেরিয়ার হিসেবে নিতে চান বা চাও তাদেরকে আরও শক্ত হতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। হঠাৎ করেই আজকে রাতারাতি ফেমাস হয়ে গেলাম আমাকে লোক আজীবন মনে রাখবে! আমার আপনার বা তোমার ভালো কাজের মাধ্যমে |
তাই যে কোন বিষয়ে খুব ফোকাস থাকা উচিত।

বেদান্তঃ এত কথা প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আজকে কোন ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের কে পলিটিক্সে আসতে দেখা যাচ্ছে, আপনিও কি আসবেন?

জেনি : আশাকরি!(অনেকটা হেসে ) আজকেই হঠাৎ করে আমার রাজনীতিবিদ হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই, হ্যাঁ সিনেমার মাধ্যমে অনেক কথা বলার আছে সমাজের। রাজনীতিতে আসবো তবে একটু গুছিয়ে নিই তারপর।