মিষ্টিময় নতুন বছর

Published By: Madhyabanga News | Published On:

রাহি মিত্রঃ পারিবারিক ব্যবসা থাকার কারণে পয়লা বৈশাখ এর অপেক্ষাতে থাকতাম চৈত্র মাস পড়লেই । সারা চৈত্র মাস ধরেই টুকটাক পুজো লেগে থাকত বাড়িতে আর ফাইনালি পয়লা বৈশাখের হাল খাতা আর গণেশ লক্ষ্মীপূজো দিয়ে মোটামুটি শেষ হত । নতুন জামা আমাদের প্রতিবারই হত পয়লা বৈশাখে । সাধারণ জামা অবশ্য । দামি বা জমকালো কিছু তেমন হত না। তবে নতুন বস্ত্র পড়তে হয় মা বলতেন । চৈত্রের দাবদাহ আর বৈশাখের প্রখর রোদের কথা মাথায় রেখে হালকা সুতির পোশাক হত পয়লা বৈশাখে আমাদের । অবশ্য এখনকার মতো চৈত্র সেল এর রমরমা ছিলনা সে সময় ।

পয়লা বৈশাখের দিন আমের পল্লব দিয়ে বাড়ি সাজানো হতো আমাদের । মানে বাড়ির প্রত্যেক ঘরের চৌকাঠের মাথার উপরে নতুন পাটের দড়ি তে আম পাতা বেঁধে টাঙিয়ে দেওয়া হত সকালেই। এর পর নতুন জামা পড়ে আমাদের কারখানাতে চলে যেতাম বাড়ির সব ভাইবোনেরা মিলে গাড়িতে করে । সাথে নিয়ে যেতাম পুজোর সব জোগাড় পত্রগুলো । যেগুলো বাড়ি থেকে করে দেওয়া হত । ফলমূল আর অনেক মিষ্টি বিশেষ করে লাড্ডু যেটাকে আবার অনেকে মতিচুর বলত । অসাধারণ লাগত খেতে আমার ওই মতিচুর লাড্ডু । সত্যি বলতে কি অপেক্ষা করে থাকতাম কারখানাতে গিয়ে কখন পুজোটা শেষ হবে , আর মিষ্টিগুলো আর লাড্ডু গুলো খাবো ।
আসলে পরিমাণে অনেক থাকত । সবাইকে বিতরণ করতে হত । কারখানার দশ-বারোজন কর্মচারী থেকে শুরু করে আশেপাশের লোক দের দেওয়া মিষ্টি আর লাড্ডু প্রসাদ । এছাড়াও রসগোল্লা ছানাবড়া বহরপুরের নতুন বাজার এলাকায় সেসময় শহর বিখ্যাত দোকান ‘ জননী ‘ র বিরাট হাড়ির দই বাড়িতে আসতো পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে । আরও নানা রকমের মিষ্টি যেমন ছানাবড়া ক্ষীরের সিঙ্গারা মালাই বরফি রসমালাই এইসব আসতো বাড়িতে । মিষ্টির বাড়বাড়ন্তে আমার তো পোয়া বারো পয়লা বৈশাখের দিনে। মিষ্টিময় পয়লা বৈশাখ আমার জমে উঠত ভালোই।
পুজো শেষ হয়ে বাকি কাজ শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে যেত প্রায় । এরপর সন্ধ্যেতে আবার থাকতো হালখাতার পালা । প্রচুর মিষ্টি থাকতো । মিষ্টির ভান্ডার বলা যেতে পারে এত মিষ্টি সেখানে থাকত। বড় বড় ছানাবড়া গাওয়া ঘি-এ ভাজা স্পেশাল পয়লা বৈশাখ বলে হত । এছাড়াও লাড্ডু , মতিচুর লাড্ডু গুলাবজামুন, বড় রসগোল্লা রসমালাই অঢেল থাকতো । আর থাকতো লুচি ছোলার ডাল আলুর দম । যে যত পারতো খেয়ে নিত । আমি তো অনেকগুলো মিষ্টি খেতাম। বড় ছানাবড়া নতুন বাজারের ‘ জননী ‘ মিষ্টি দোকানের সবাদই আলাদা । লাড্ডু খেয়ে নিতাম অনেকগুলোই । আমার পয়লা বৈশাখ বা নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিন হয়ে থাকতো মিষ্টিময় । আজ মনে পড়ছে সেই সব মিষ্টির কথা । এবারও খেতে হবে মিষ্টি নতুন  বছরে । তবে ছোটবেলার মতো অত নয় । বড় হয়ে যাওয়ার কারনে কন্ট্রোল করতে হবে । যদিও এখন মিষ্টির ভ্যারাইটি বেড়েছে । অনেক ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায় এখন । তবে পয়লা বৈশাখ এলে মন পড়ে থাকে সেই দিনগুলোতে ।