মাস্টারমশাই আপনি কি কিছুই দেখেননি? শিক্ষক দিবসে বার্তা চায় সমাজ

Published By: Madhyabanga News | Published On:

পবিত্র ত্রিবেদী: বহরমপুর ৪ঠা সেপ্টেম্বর – ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো শিক্ষকদের আজও খোঁজে সমাজ। আদর্শের জন্যে। ছাত্র ছাত্রীদের মানুষ করার জন্যে যাঁরা দিনভর ব্রতী থাকতেন, থাকেন। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নি্যে হাজারো প্রশ্ন আজকের সমাজে উঠলেও একবাক্যে সবাই মেনে নেবেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা অনাত্মীয় পবিত্র সম্পর্ক এটি । শিক্ষক কি শুধু ক্লাসে গোরূর গাড়ি কলসি হাঁড়ি পড়ান, তিনি? আমাদের প্রতিনিয়ত কত শিক্ষকের মুখোমুখি হতে হয়।সেই রাস্তার ধারে মাঝ বয়স্ক মানুষটির ধমক দিয়ে সম্মান করতে শেখানো হোক, কিংবা কীভাবে রাস্তা পার হতে হয় শেখানো অচেনা ভদ্রলোকটিই হোক। এ যেন সেই জন্ম দিয়েছেন মা, কিন্তু, কত মাসি, পিসির কোলে বড় হয়েছির মতো। আসলে তাঁরাও তো মা-ই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের জন্মদাত্রী মায়ের মতো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে শিক্ষা দিয়েছে। আর বাইরের সমাজ থেকে প্রতিনিয়ত, জীবনভর শিখতে হয়। শিক্ষক দিবসে ওই সব শিক্ষককে সম্মান জানানোর দিন। কান্দি মহকুমার এক হাইস্কুলের এক প্রবীণ ছাত্র বলছিলেন, তাঁর মাস্টারমশাই অবসর নেওয়ার পরও অন্তত স্কুলে ২০ বছর পড়িয়েছেন। যাঁর কাছে তাঁর ছেলেরাও পড়েছেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি পড়িয়েছেন। একটি ছাতা হাতে বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসতেন। কিংবা ছাত্র ক্লাসে আসেননি। শরীর খারাপ শুনে তাঁর বাড়ি গিয়ে মাথায় হাত রাখার মতো শিক্ষক, এখনও অনেকের স্মৃতিপটে এই দৃশ্য ভাসে। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, চাকরির দাবিতে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আন্দোলন, ব্যাক্তিগত সম্পর্কের কলুষতা ছাপিয়ে সমাজ গড়ার আদর্শ কারিগরদের কথা উদাহরণ হিসেবে এখনও তুলে ধরেন অনেকে। প্রচার থেকে শতহস্ত দূরে থাকা অনেক মাস্টারমশাই চিরকাল ছাত্র ছাত্রীদের মনের মণিকোঠায় থেকে যান।সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘মাস্টার মশাই আপনি কিন্তু, কিছুই দেখেননি’, বলার পরও পরে ভুল বুঝতে পারেন ছাত্র। কনভয় থামিয়ে রাস্তায় লাঠি নিয়ে কোনওরকমে বাজার করতে চলা শিক্ষককে প্রণাম করেন পড়ুয়া। তখন গৌরবান্বিত হয় এই সমাজ। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের পবিত্র সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে। তাইতো অবসর নেওয়ার এতদিন পরেও শিক্ষক রমাকান্ত আচরেকরের জন্যে ক্রিকেটার সচিন টেণ্ডুলকার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লে এখনও চোখে জল আসে আপামর ভারতবাসীর। অনেকে শিক্ষক দুঃস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ায়।প্রতিবন্ধকতা জয় করে অকেজো হাত, পা নিয়ে মাধ্যমিকে ভালো ফল করা বড়ঞার অখ্যাত গ্রামের মহম্মদ আলমকে বেতন না নিয়ে পড়ান কয়েকজন শিক্ষক। অবসরের পর ক্লাস করান কেউ কেউ। বহরমপুরে শক্তিনাথ ঝা, সমীরবরণ দত্তর মতো শিক্ষকরাও প্রবীণ বয়সে কলেজে গিয়ে পড়ান। বিনা বেতনে গৃহ শিক্ষকতা করেন এরকমও শিক্ষক রয়েছেন। বেশ কয়েক বছরের মতো এবারও অবদানের জন্যে শিক্ষক দিবসে শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন কয়েকজন। তার মধ্যে কান্দি মহকুমার টেঁয়া বায়েনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃতাভ মণ্ডল, ডোমকলের ভাতশালা হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমানও এবার শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।দেশে জাতীয় শিক্ষকে সম্মানিতও হন বিশিষ্টরা। এদিকে, এবার শিক্ষক দিবসে সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলার ভূমিপুত্র বিজ্ঞানী বিকাশ সিনহাকে বিশেষ সম্মান জানাবে জেলায় মেয়েদের অগ্রগণ্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহরমপুর গার্লস কলেজ কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখানেও শিক্ষকদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হবে। দিনভর নানা অনুষ্ঠান হবে। মূল্যবোধ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর বিশেষ আলোচনা হবে। ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি ডঃ রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন শিক্ষক দিবসে মুল্যবোধের শিক্ষা মানবতার বার্তা দিক সর্বত্র। মাস্টারমশাইরা প্রশ্ন করুক ছাত্র ছাত্রীদের, আমরা কিন্তু সব কিছু দেখছি