নওদার আমতলা বাজারে ছোট্ট লটারীর টেবিল। চোখ টানছে সেই টেবিলে লেখা করেকটা শব্দ। গোটাগোটা হরফে লেখা ” MA পাশ লটারীওয়ালা TANMOY ” । থমকে দাঁড়িয়ে জানতে চাইতেই দোকানে বসে থাকা যুবক তন্ময় চুনারি জানাচ্ছেন, “অনেক দুঃখের সাথেই নামটা লিখেছি। এমএ পাশ করার পরেও আজ আমাকে লটারী বিক্রি করতে হচ্ছে” ।
“সারাদিনে চারশ টিকিট বিক্রি করতে পারলে ১৬০ টাকা কমিশন পাই। এই দিয়ে তো সংসার চলে না। টিউশনও পড়াই। এই ভাবেই চলছে দিন”। সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে দাদার। দাদা পড়াশোনা করিয়েছেন তন্ময়কে। বাড়িতে অসুস্থ মা । দাদার মৃত্যুতে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তন্ময়’এর। মায়ের মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে। রোজগার সবটাই অনিশ্চিত। তার মধ্যেই চোয়াল শক্ত করে লড়াই চালাচ্ছেন তন্ময়। “ভোর সাড়ে তিনটেই উঠি । সেখান থেকে হাইস্কুল মাঠে দৌড়াতে যাই। বাকিদের দৌড় প্র্যাকটিস করাই। তারপর সকাল ৬ টায় টিউশন পড়াই। নিজেও পড়াশোনা করি। তারপর আটটায় দোকান খুলতে হয়”, বলছেন তন্ময়।
এমএ পাশ করাটাও সহজ ছিল না তন্ময়ের কাছে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই ছেড়ে চলে যায় বাবা। এরপর স্কুল ছেড়ে দিয়ে সাইকেলের দোকানে কাজও করতে হয়েছে। কাজ করেছেন অন্যের জমিতেও। পরে দাদার অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় ফের গিয়েছেন স্কুলে। কষ্ট করে পাশ করেছেন বিএ, এমএ। আশা ছিল চাকরি হবে। সংসারের হাল ধরবেন। ইচ্ছে ছিল চাকরি করবেন পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে। কিন্তু চাকরি মেলেনি। জীবন সংগ্রামে লড়াইয়ে লটারীর দোকানকেই বেছে নিয়েছেন তন্ময় । ভাগ্য যাচাই করতে লটারী কিনছেন অনেকে। সেই টেবিলে বসেই নিজের ভাগ্য গড়ার লড়াই চালাচ্ছেন আমতলার তন্ময়।