ভারতীয় এই সৈন্যকে শত্রুরাও সমীহ করে চলতেন, কে ছিলেন কারিয়াপ্পা ? KM Cariappa

Published By: Madhyabanga News | Published On:

ফিল্ড মার্শাল  ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ। কিন্তু স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সেনাবাহিনীর মাত্র দুজন ব্যক্তি সফলভাবে এই সর্বোচ্চ সামরিক পদের অধিকারী হয়েছেন। একজন স্যাম  মানেকশ্ এবং অন্যজন জেনারেল কোদান্দেরা মাদাপ্পা কারিয়াপ্পা।  ১৫ জানুয়ারি ‘সেনা দিবস’ হিসাবে পালিত হয় কারণ ১৯৪৯ সালে এই দিনে সালে কারিয়াপ্পা সেনাবাহিনীর প্রথম ভারতীয় কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম শৃঙ্খলাবদ্ধ  এবং নির্ভীক সেনাবাহিনী। অকুতো ভয় সেনা জেনারেলদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এই পার্থক্য সম্ভব হয়েছে। এই জেনারেলদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন জেনারেল কে এম কারিয়াপ্পা- তাঁর দেশপ্রেম এবং শৃঙ্খলা অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

১৯২২ সালে একটি স্থায়ী কমিশন পাওয়ার পর, পরবর্তীকালে ফিল্ড মার্শাল  হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট পদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন । এটি একটি ‘ফাইভ স্টার রাঙ্ক’ সম্মান। কারিয়াপ্পা ১৮৯৯ সালের ২৮ জানুয়ারি কর্ণাটকের কুর্গের  শনিবরসাথী নামক একটি স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে  যোগদান করেন। তাঁর বাবা কোডানেরা মাদিকেরিতে একজন রাজস্ব আধিকারিক ছিলেন। তাঁর জীবন সম্পর্কে এমন অনেক কাহিনি রয়েছে যা তাঁর প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের উপর আলোকপাত  করে।

প্রধান কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ ১৯৪৬ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন বলদেব সিং। তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে কর্মরত  নাথু সিংকে ভারতের প্রথম কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু নাথু সিং এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করেছিলেন ঊর্তধ্বন হিসাবে কারিয়াপ্পা ওই পদে সবচেয়ে বেশি যোগ্য।  নাথু সিং-এর পরে রাজেন্দ্র সিংকেও এই পদ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি ও কারিয়াপ্পার সম্মানে সেই পদটি গ্রহণ করেননি। তারপর ১৯৪৮ সালে ৪ ডিসেম্বর কারিয়াপ্পাকে প্রথম ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন চিফ করা হয়।

লেহকে ভারতের অংশে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কারিয়াপ্পা।  ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে কারিয়াপ্পা সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান হিসাবে রাঁচিতে নিযুক্ত হন। কিন্তু দুই মাসের মধ্যে কাশ্মীরের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তাঁকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডুডলি রাসেলের জায়গায় দিল্লি ও পূর্বপাঞ্জাবের জিওসি-ইন-চিফ করা হয়। তাঁর তত্ত্বাবধানে, ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রথমে নওসেরা এবং ঝাঙ্গার দখল নেয়। তারপর জোজিলা, দ্রাস এবং কার্গিল  থেকে আক্রমণকারীদের পিছু হঠতে বাধ্য করে। কারিয়াপ্পার ছেলেকে যথাসম্মানে হস্তান্তর করেছিল পাকিস্তান।  ঘটনাটি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের। অবসর নেওয়ার পর কর্ণাটকের  মেরকারায় নিজের বাড়িতেই থাকতেন জেনারেল কারিয়াপ্পা। এই সময়ে তার ছেলে, নন্দা কারিয়াপ্পা ভারতীয় বিমানবাহিনীতে একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন। যুদ্ধের শেষ দিনে, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নন্দা কারিয়াপ্পা পাকিস্তান সেনার বিরুদ্ধে বোমা হামলার একটি মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যুদ্ধের সময় তাঁর বিমানটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং কারিয়াপ্পাকে পাকিস্তান সেনা বন্দি করে। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান জেনারেল কারিয়াপ্পার অধীনে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছিলেন। নন্দার পরিচয় জানার পর, রেডিও পাকিস্তান ঘোষণা করে যে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নন্দা কারিয়াপ্পা তাঁদের হেফাজতে আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আইয়ুব খান ভারতে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের মাধ্যমে জেনারেল কারিপ্পাকে প্রস্তাব দেন যে তিনি চাইলে তাঁর ছেলেকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। কারিয়াপ্পা সেই প্রস্তাব সবিনয় প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন যে নন্দু দেশের ছেলে। অন্যান্য যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয় তাঁর সঙ্গেও যেন সেরকম আচরণ করা হয়। তাঁকে মুক্তি দিতে চাইলে সকল যুদ্ধবন্দিকেও মুক্তি দিতে হবে। শত্রুরাও কারিপ্পাকে সমীহ করে চলতেন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতীয় সেনাদের মনোবল বৃদ্ধি করতে কারিয়াপ্পা সীমান্ত এলাকায় পরিদর্শনে  গিয়েছিলেন। এসময় তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ প্রবেশ করেন। নন্দু কারিয়াপ্পা তাঁর বাবার জীবনীতে লিখেছেন, “ তাঁকে দেখে পাকিস্তানি কমান্ডার সেখানে থামতে নির্দেশ করেছিল, অন্যথায় তাঁকে গুলি করা হবে। ভারতীয় সীমান্ত থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলে ওঠেন, ইনি জেনারেল কারিয়াপ্পা। তাঁর নাম শুনে পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্র নামিয়ে দেয়। কর্তব্যরত অফিসার এসে জেনারেল কারিয়াপ্পাকে অভিবাদন জানান ” ।

জেনারেল কারিয়াপ্পা সেনাবাহিনী থেকে ১৯৫৩ সালে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর, তিনি ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে হাই কমিশনার হিসাবে কাজ করেছিলেন।