ভাঙন নিয়ে অব্যাহত রাজনীতি

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ ভয়াবহ ভাঙনে ২০২২ সালে তলিয়ে গিয়েছিল সামসেরগঞ্জের ধূসরীপাড়া, পদ্মতলা, ধানগড়া, শিবপুর, প্রতাপগঞ্জ, ঘনশ্যামপুর, মহেশটোলা, পাহাড়ঘাটি, সাতঘোরিয়া, হোগলবাড়ি, দেবিদাসপুরের বহু বাড়ি । চলতি বছর মার্চ মাসেও ভয়াবহ ভাঙনে ভেসে গিয়েছে কামালপুরের একাধিক এলাকা। ২০২১ সালে গঙ্গাবক্ষে ভিটে হারিয়েছিল কয়েকশো  পরিবার। ভিটে হারিয়ে তাঁদের অস্থায়ী আস্তানা হয়ে উঠেছিল ত্রিপলের নীচে, স্কুলের অস্থায়ী ত্রাণ শিবির, কারও বা নিকটাত্মীয়ের বাড়ি। প্রকৃতির খামখেয়ালীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদীর বাঁকের সঙ্গে জীবনের বাঁকও সেদিন ঘুরে গিয়েছিল যে মানুষগুলোর আজও তাঁদের স্থায়ী ঠাঁই নেই। ২০২১ সালের ভাঙনে যে  পরিবারগুলির  বসত বাড়ি তলিয়ে গিয়েছিল তারমধ্যে মাত্র ১৪০ জন জমির পাট্টা পেয়েছেন। ২০২২ সালে যেপরিবারগুলি  ভিটে মাটি ছাড়া হয়েছিল তারমধ্যে শুক্রবার সকালে ৮৭ টি পরিবারকে  পাট্টা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙন দুর্গত এলাকার জন্য মালদহ মুর্শিদাবাদে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষের একাংশের  দাবি,ভাঙন মোকাবিলায়   স্থায়ী কোন  কাজই হয়নি। যা হয়েছে তা জলের তলায়। মুখ্যমন্ত্রীও মালদহের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী  বলেন, “ ভাঙন ঠেকানোর হাজার কোটি টাকা জলে গিয়েছে।” সামসেরগঞ্জের মত ভাঙন প্রবণ এলাকার এই ছবি নতুন নয়। ফি বছর বর্ষায় গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে যায় কতশত বাড়ি। অথচ তার স্বীকৃতি নিতে প্রতিবারই সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে রাজনীতি। সেই রাজনীতি এই ২০২৩এও চলছেই । সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। নেতাদের কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুনে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার মালদহে জেলা প্রশাসনের বৈঠক শেষ করে শুক্রবার সকালে সামসেরগঞ্জের ভাঙন দূর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সভাস্থল করা হয়েছিল ধূলিয়ান পৌরসভা এলাকার পাহাড় ঘাঁটির মত ভাঙন অধ্যূষিত এলাকা্তে। ভাঙনে ভিটে হারানো সামসেরগঞ্জের ৮৭ জনকে এদিন জমির পাট্টা তুলে দিয়েছেন তিনি। তবে এদিন তিনি ফের স্মরণ করিয়েছেন এসব কাজ রাজ্যের নয়, কেন্দ্রের করার কথা । কিন্তু কেন্দ্র কিছুই করছে না। তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে হাজার কোটি টাকা জলে ফেলেছে। অথচ সমাধান হয়নি। কেন্দ্র না করায় তিনি উদ্যোগী হয়েছে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা করতে। তাঁর সঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, ফরাক্কা ব্যারেজ সংস্কার করে না কেন্দ্র। অনেকবার কথা বললেও রাজ্যের কথায় কান দেয়নি তারা। সামসেরগঞ্জের সভায় এসে তিনি এও বলেন, “ দেবগৌড়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেই সময় ইন্দো-বাংলাদেশের মধ্যে জলচুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী এলাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য রাজ্যের সাতশো কোটি টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু বিশ বছর কেটে গেল এখনও এক পয়সা কেন্দ্র দেয় নি। অথচ গঙ্গা ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প।” তিনি বলেন, “ আমি অন্য নেতাদের মত নই। আমি একজন সাধারণ কর্মী এবং সাধারণ মানুষ। মিথ্যে কথা বলে রাজনীতি করা আমার পেশাও নয় নেশাও নয়। আমি রাজনীতি করি সমাজ সেবার জন্য।” মুখ্যমন্ত্রীর দু’দিনের দুই জেলা সফরের নিশানায় ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ” মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের তলায় মাটি সড়ে গিয়েছে। তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছেন। কেন্দ্র ৬০ কোটি টাকা ওঁর দফতরেই পাঠিয়েছে। তার টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। সেটাও উনি জানেন।” মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে অধীর বলেন, “ খরাকালে এসে আপনি ভাঙনের গল্প করছেন। এলাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এ যেন মৃতদেহে আতর ছেটাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।” প্রশ্ন তুলে অধীর বলেন, “ যাদের বসত বাড়ি চলে গিয়েছে, ঘরবাড়ি চলে গিয়েছে তাদেরকে পাঁচ পয়সা দিয়েছেন? একজনকেও ঘর বানিয়ে দিয়েছেন?” মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে অধীর দাবি করেন, “ কিছু পারি না পারি ভাঙন এলাকায় গিয়ে কেন্দ্রের জলসম্পদ মন্ত্রী শেখাওয়াতের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মানুষকে তা শুনিয়েছি। দিল্লিতে তাঁর দফতরে গিয়েছি পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে। একাধিকবার একাধিক জায়গায় বৈঠক করেছি। রাজ্যের সেচ দফতরের আধিকারিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদেরকে বলেছি আপনাদের কী পরিকল্পনা আছে সেটা পাঠান। টাকা পাওয়া যাবে কি যাবে না তা পরে দেখা যাবে। কিন্তু দিল্লির বক্তব্য, সেই পরিকল্পনা পাঠায় নি রাজ্য।” তারজন্য সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন কেন্দ্রের সেচ দফতরকে পাঠানো চিঠির প্রতিলিপিও।