অর্ধেন্দু বিশ্বাসঃ ” জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ, আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ” ( সুকান্ত ভট্টাচার্য ) ।
হ্যাঁ ঠিক তাই। আজকের বীজ,আগামীকালের চারাগাছ, সবুজ পৃথিবীর বার্তাবাহক।১৭৫০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায়৫৭১এর অধিক উদ্ভিদ প্রজাতি। প্রতি তিন বছরেঅন্ততপক্ষে আটটি উদ্ভিদ প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে প্রাণী প্রজাতি ও কীটপতঙ্গ। উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই পৃথিবী ও মানুষের অস্তিত্ব। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই মিশন গ্রিন ইউনিভার্স শুরু করেছেসবুজ সংস্কৃতি অভিযান।এই ভাবনায় উদ্বুদ্ধ বিবেক বৃক্ষের দলমনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে পরিবেশ বিপ্লবী-ই হবে পৃথিবীর সমস্ত বিপ্লবের পরিপূরক।
একটি আদর্শপৃথিবী তৈরিরঅবিরত প্রয়াস।এই সবুজ সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণকে একটি সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিণত করার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বিবেক বৃক্ষের দল।প্রকৃতিতে গাছের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার জন্য বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও রোপণের অভিযানকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে বীজ ভান্ডার বা Seed Bank।ইচ্ছে থাকলেও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপযুক্ত জায়গা এবং পরিকাঠামোর অভাবের কারণে বৃক্ষ রোপন করতে অসমর্থ হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে বীজ ব্যাঙ্ক ছোট থেকে বড় সবার জন্য পরিবেশ রক্ষায় অংশ নেওয়ার একটি পটভূমি রচনা করতে চলেছে।
“ফল খাও, বীজ দাও” বীজ দাও, চারাগাছ নাও।” এই ধরনের শ্লোগানকে সামনে রেখে সারা বছর ধরে বীজ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে Seed Bank বা বীজ ভান্ডার। এটি হলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বীজ দেওয়া ও নেওয়ার একটি ব্যবস্থাপনা। সারাবছর ধরে আমরা যে সমস্ত ফল খায়, সেগুলোর বীজ বা পরিবেশের অবহেলিত বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। যাদের প্রয়োজন তাদের এই বীজ ভান্ডার থেকে বীজ দেওয়া হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এই বীজ ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে পোস্ট অফিস বা কুরিয়ারের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার বীজ পোঁছে যাচ্ছে মিশন গ্রিন ইউনিভার্সের নার্সারিতে। এছাড়াও আমাদের বিবেক বৃক্ষের দল নিয়ে সারাবছর বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশি গাছের বীজ সংগ্রহ করা হয়। অনেক স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানে বীজ ব্যাঙ্কের শাখা তৈরি করতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জঙ্গীপুরে অবস্থিত গাইডেন্স অ্যাকাডেমিতে তৈরি হয়েছে ইকো ক্লাব ও বীজ ব্যাঙ্ক যেখান থেকে গতবছর দশ থেকে পনের হাজার বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। অতিরিক্ত বীজ থেকে চারা গাছ তৈরি করে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার গাছ।
শীতের শেষ ও বসন্ত কাল বিভিন্ন ধরনের গাছের বীজ যেমন সেগুন, বিদেশি নিম, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া শিরিষ, শিশু, মেহগনি ইত্যাদি পুষ্ট হওয়ার সময়। এবছর মেহগনি গাছের প্রচুর পরিমাণে বীজ ফলেছে প্রতিটি গাছে।
মহাগুণ সম্পূর্ণ গাছের নাম হল মেহগনি গাছ। মেহগনি গাছের বহুবিধ গুণাবলীর জন্যই এই গাছকে অত্যধিক মূল্যবান গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।তবে এই গাছ আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে দেখা গেলেও এই গাছ কিন্তু আমাদের দেশীয় গাছ নয়। এই গাছের পূর্ব সূরীরা জামাইকা ও মধ্য আমেরিকা।
অমসৃণ বাকলযুক্ত চিরসবুজ গাছটি উচ্চতায় ৫০-৬০ ফুট পর্যন্ত হয়। মার্চ এপ্রিল মাসের দিকে ফুল ফোটে ও জানুয়ারি মাসের দিকে ব্রেনের আকৃতির বীজ পুষ্ট হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে বীজ খসে উড়তে উড়তে গিয়ে কয়েক শো মিটার দূরে ও এর বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বংশ বিস্তার করে থাকে।
কাঠিন্য ও নমনীয়তার সঠিক বিন্যাস থাকার কারণে এই গাছের কাঠ আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, জাহাজ নির্মাণ, ঔষধ ও রং তৈরি প্রভৃতি বহুবিধ কাজে এই কাঠ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ইতিমধ্যে বীজ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মিশন গ্রিন ইউনিভার্স রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লক্ষ বীজ সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে। তবে উপযুক্ত পরিকাঠামো ও সহযোগিতা পেলে এই বীজ ব্যাঙ্ক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তাতে সন্দেহ নেই।
লিখলেন অর্ধেন্দু বিশ্বাস। যেকোনো প্রান্ত থেকে মিশন গ্রিন ইউনিভার্সের বীজ ব্যাঙ্কে বীজ পাঠানো বা সংগ্রহ করা, এই কাজে যুক্ত হতে বা যেকোনো ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করুন- Mission Green Universe, The Green Philosophy Movement, Village- Nowda,P.O- Debpur, P.S- Beldanga, Murshidabad, West Bengal, Pin- 742134, missiongreenuniverse@gmail.com , Mobile-8926034318/7384845764
(মতামত লেখকের নিজস্ব)