বিয়ে হল ওদেরও ! ডিভোর্সের চান্সই নেই ! জম জমাট কান্ড হরিহরপাড়ায়

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বেদান্ত চট্টোপাধ্যায় ও মানিনুল ইসলামঃ কথায় আছে ‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ’ ; বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদ যেন ডাল ভাতের মত। এদিক ওদিক কান পাতলে শোনা যাচ্ছে যারা প্রাইমারিতে ‘ঘুষ’ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন কোর্টের রায়ে আজকে নাকি তাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখাটাই বড়ো দুষ্কর হয়ে উঠেছে । যেখানে প্রত্যেকদিন টেলিভিশনের পর্দা খুললে নবদম্পতি থেকে শুরু করে সেলেব তারকা বিচ্ছেদের কথা শোনা যায় সর্বত্র! আবার কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সমপ্রেমি তারকরা | এই সব কিছুর মাঝেই আরও এক আজব বিবাহের সাক্ষী থাকল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার চোয়ার ঘোষপাড়া অঞ্চল। ঠিক যেন ‘যত কান্ড ’মুর্শিদাবাদে!

বিয়ে হল, পাত পেড়ে প্রায় হাজার জন লোকও খেলো, আছে কনে পক্ষ, বরপক্ষও ; তারপরেও আজব বিয়ে কেন! “রাজ্যের বুকে যেখানে সমলিঙ্গের দুই যুগল বিবাহ করে মানুষ কে নতুন করে ভাবনার অন্য দিগন্ত খুলে দিচ্ছে সেখানে গ্রাম বাংলার বুকে এই বিয়ে এমন কিছুই নয়, বরং গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি এই বিবাহ| ”- এমনটাই বলছেন মুর্শিদাবাদের আধুনিক মনোভাবাপন্ন তরুণ প্রজন্ম। আসলে হরিহর পাড়ার চোয়া অঞ্চলে বিয়ে হয়েছে কোনো মানুষের নয়, বিয়ে হয়েছে বট গাছ ও পাইকড় গাছের।

বিভিন্ন এলাকায় বট এবং পাইকর গাছ পাশাপাশি থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয় এমনটাই প্রচলন রয়েছে। পাকুর বা পাইকুর গাছকে কনে এবং বট গাছকে বর মানা হয়। এখানেও রয়েছে কনে পক্ষ এবং বরপক্ষ, রীতিমত বর এবং বউকে কোলে করে নিয়ে সাত পাক ঘুরলেন বরপক্ষ এবং কনে পক্ষের সকলেই। আসলে গাছ দুটিকে সাক্ষী রেখে পাত্র এবং পাত্রীর প্রতিকী মূর্তি হিসেবে বর বেশে বট এবং কোনে বেশে পাইকড়ের বিবাহ সম্পন্ন হয়। গাছের বিয়ে নিয়ে তিন দিন ধরে প্রায় না খাওয়া ভুলতে বসেছিলেন হরিহরপাড়ার বাসিন্দারা। এই গাছের বিয়ের জন্যই মেয়ের বিয়েতে যেমন গয়না কেনা হয়, পাত্রপক্ষের জন্য যেমন ধুতি পাঞ্জাবি অন্যান্য সামগ্রী কেনা হয় এই বিয়েতেও তার ব্যতিক্রম একদমই হয়নি।

পাত্রী পক্ষের তরফে তুলসী রানী ঘোষ জানান,“ শাস্ত্র মতে পাইকর গাছকে ষষ্টিতলা হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু ষষ্ঠী যতক্ষণ না বিয়ে হয় ততক্ষণ সে আইবুড়ো থাকে, তাই তার বিয়ে দেওয়া। আমরা সব নিয়ম মেনে রাতের বেলায় আইবুড়ো ভাত দিয়েছি, জল সেজেছি, নান্নিক্রিয়া করেই বিয়ে দিয়েছি।” ঘরের মেয়ের মতোই কন্যা সম্প্রদান করেছেন ওঁরা। পাত্রপক্ষের তরফে কাশীনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, “ ১০-১৫ বছর আগে আমরা দুই বন্ধু দুটো গাছ লাগাই, তখন বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। হিন্দু শাস্ত্র মতে গাছের বিয়ে না দিলে পুজো হয় না,তাই এখন আমরা হিন্দু শাস্ত্র মতেই সমস্ত নিয়ম মেনে দুই গাছের বিয়ে দিচ্ছি।”

এই বিয়েকে কেন্দ্র করেই প্রাচীন লোককথা, সমস্ত বিশ্বাস তো রয়েছেই । তার পাশাপাশি স্থানীয় বহু মানুষজন বার্তা দিচ্ছেন এভাবে যদি বহু গাছ কাটা আটকানো যায়, তাতে কমবে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবও । মানুষ বাড়ির বাগানকে সাজালেও দিনকে দিন বৃক্ষ জাতীয় গাছ কেটে ফেলছে। গাছের এই বিয়ে প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের লোক সংস্কৃতি চর্চায় রত এক বরিষ্ঠ নাগরিক বলেছেন, “ গাছের বিয়ে দেওয়া গ্রামাঞ্চলে নতুন কিছু নয়,বহু পুরনো প্রথা। তবে এমন ভাবে যদি গাছ কাটা আটকানো যায়, যে ভাবনা ওরা ভেবেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাতে যদি গাছকে কেন্দ্র করে দশটা ‘দেবতার জন্ম’ হয় তাতে প্রকৃতির মন্দ হবে না। তবে তা থেকে যেন কোন হিংস্রতা না ছড়ায়।”

হরিহরপাড়ার বিয়ের দিনের সন্ধ্যা যেন অন্যরকম ছিল। গাছের বিয়ে কে কেন্দ্র করে ব্যান্ড বাজিয়ে নিতেছেন বর ও কনে পক্ষের সকলেই। লাজে রাঙা হয়ে পাইকর রুপি কনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন বট রুপী পাত্রের সাথে।