বাংলার রাজস্থান হতে কিন্তু খুব বেশি দেরী নেইঃ লিখলেন নীপাঞ্জলী রায়

Published By: Madhyabanga News | Published On:

জল নিয়ে নাজেহাল আমরা। জল আমাদের কাছে আজও ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’। বাংলার রাজস্থান হতে কিন্তু খুব বেশি দেরী নেই।গরমকালটি এলেই তো তখন হাড়ে হাড়ে টের পান। নয় কি? তবু, ফ্ল্যাটবাড়ির পাশের পুকুরটাকে নির্দ্বিধায় বানিয়ে ফেলেন আস্তাকুঁড়ে। বাড়ি বানাতে গিয়ে দু-গজ জমি অতিরিক্ত পেতে রাবিশ ফেলে বুজিয়ে দেন বিলের অংশবিশেষ।                লিখলেন নীপাঞ্জলী রায় ।

“সৃষ্টি তৈয়ারির দ্বিতীয় দিন ঈশ্বর বলিলেন,জল হউক।নির্নিমেষ অন্ধকার হইতে সুমিষ্ট নীল জল প্রস্তুত হইল।”                                                                                                                      তারপর থেকে জল জিনিসটা আপাদমস্তক টেকেন ফর গ্রান্টেড। সসাগরা পৃথিবীর মালিক হয়েই মানুষ দেখলে এ তো ভারী মজা হল! এই এ্যাত্ত জলভর্ত্তি মাছ,গাছভর্ত্তি ফল সব আমার? ফেলেছড়িয়ে খেলেও তো কয়েকহাজার বংশ আরাম করে কাটানো চলে।চলছিলও বেশ। তা একদিন বিজ্ঞানীরা হিসেব টিসেব কষে নাকের ডগায় চশমা এঁটে বললে, উঁহু,এই এ্যাত্ত জলের মাত্র ২.৫% পানীয়,যার ১% মানুষের হাতে রয়েছে।অতএব, সাবধান!কানের পোকায় হাল্কা সর্ষের তেল ঢেলে সমাজ পাশ ফিরে শুলো।কেউ একজন হেসে বললে,বাকি জলটা তাহলে যেমন খুশি ব্যবহার করা চলে তো?অতএব,ঢালো যত তেল,গরম জল,শিল্প-আবর্জনা সমুদ্দুরের পেটে।

বিজ্ঞ ব্যক্তিরা কয়েক বছর পর আরেকবার গলা খাঁকরিয়ে জানালে,ঐ ১% পানীয় জলের ৭০% কোনো না কোনো ভাবে দূষিত হচ্ছে। এদিকে সমুদ্রে মরছে মাছ,কচ্ছপ,জলজ গাছ আর প্রাণী,ডাঙায় সেই মরা মাছের সিজলার খেয়ে মরছে মানুষ।জনৈক দেশনেতা হেঁকে বললেন,সবই নেহাত বিরুদ্ধ পক্ষের ষড়যন্ত্র।শিল্প সমৃদ্ধি দেখে বেটাদের চোখ টাটাচ্ছে।

গ্রেটা বলে একটি মেয়ে পরিবেশ নিয়ে বেশি লাফালাফি করছে দেখে বাঙালি বাপ মা দুষলেন,”পড়াশোনা ছেড়ে এই বয়সে ডেঁপোমি”কে আশকারা দেওয়া মানুষদের।লোকদেখানো পরিবেশ প্রীতির পেছনে  “সোশ্যাল মার্কেটিং” আর “বিজনেস ম্যানেজমেন্ট”এর হাতযশ দেখেশুনে জলের দেবতা সন্ধ্যেবেলায় বারো মিলিয়ন টন প্লাস্টিকে গুঁতো খাওয়া কপালে পুলটিশ লাগাতে বসলেন।

সমস্যা নাকের ডগায় এসে বুড়ো আঙুল না দেখানো আবধি টনক নড়ে না: সভ্য মানুষ সম্পর্কে এমন একটা অভিযোগ চিরকাল রয়েছে।

পুকুরটাকে নির্দ্বিধায় বানিয়ে ফেলছেন আস্তাকুঁড়ে। বহরমপুর।

এই আমাদেরই”সুজলাং সুফলাং শস্য শ্যামলাং” বঙ্গদেশের সুকান্ত চেহারাখানা আজ কতকাল অপুষ্টিতে ভোগা হাড়জিরজিরে একটা ছায়াতে এসে ঠেকেছে,সে বিষয়ে কমবেশি সবারই চোখে ঠুলি।যদিও সেটা নিতান্তই আত্মতুষ্টির ব্যাপার। কিন্তু, তাতে মনে খানিক মলম পড়লেও তেষ্টা মেটে না।”বাংলা এখনো চেন্নাই হয়ে যায় নি হে!” বলে পুরোনো চালের ঢেকুর তুলছেন যাঁরা,তাঁদের জন্য চুপিচুপি বলি,বাংলার রাজস্থান হতে কিন্তু খুব বেশি দেরী নেই।গরমকালটি এলেই তো তখন হাড়ে হাড়ে টের পান।নয় কি?তবু,ফ্ল্যাটবাড়ির পাশের পুকুরটাকে নির্দ্বিধায় বানিয়ে ফেলেন আস্তাকুঁড়ে। বাড়ি বানাতে গিয়ে দু-গজ জমি অতিরিক্ত পেতে রাবিশ ফেলে বুজিয়ে দেন বিলের অংশবিশেষ।

ভরাটের জন্য দখল হচ্ছে পুকুর

চোখের সামনে “পুকুর চুরি” দেখেও  যারা চুপটি করে থাকেন,ভাবেন, নিজের গায়ে আঁচ না আসা অবধি চুপ করে থাকবেন,তাঁরা সন্তানের/ভাইবোনের/নিদেনপক্ষে নিজের বছরখানেক আগের পরিবেশ বিজ্ঞানের বইখানা একটু উল্টেপাল্টে দেখবেন দয়া করে।দেশে দেশে চুক্তি হোক, কিন্তু,তার সাথে মানুষ হিসেবে একটুখানি নিয্যস সচেতনতা থেকেই কতকিছু হতে পারে।ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ছাড়ুন, আগামী দশ-বারো বছরের মধ্যে মার্সিডিজ আর সরকারি চাকরির বদলে বিবাহক্ষেত্রে আপনি বা আপনার সন্তানের eligibility criteria যদি “drinkable water resource near residence”হয়,”তবে কেমন হত, তুমি বলো তো?”

 

মতামত লেখকের নিজস্ব