বহরমপুরে দুর্নিবারঃ কী বললেন শহর নিয়ে?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ রবিবার সন্ধ্যা যেন দুর্বার গতিতে কেটে গেল বহরমপুরের বাসিন্দাদের । মঞ্চে যখন দুর্নিবার, তখন সন্ধ্যা দুর্বার গতিতে কাটাটাই স্বাভাবিক । গত ২৫ ও ২৬ শে জুন সাংস্কৃতিক সংস্থা স্পন্দনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় স্পন্দন উৎসব ২০২২। সময়ের গতিতে স্পন্দন ও পার করল এক যুগ, তাদের এই বছর ট্যাগ লাইনও ছিল,“ এক যুগে স্পন্দন দ্বাদশ বর্ষ উদযাপন ”।

২৬ শে জুন রবিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহ ছিল সম্পূর্ণ ভর্তি। শুরু থেকে শেষ অব্দি একদম টানটান পর্ব নিয়ে শুরু হয়েছিল স্পন্দনের দ্বিতীয় দিনের পর্ব।এদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী দুর্নিবার সাহা গান। সাত বছর আগে একটি রিয়েলিটি শো তে দুর্নিবারের গান শুনে মুগ্ধ হয় আপামর বাঙালি। মঞ্চে উঠেই দুর্নিবার আবেগের সাথে প্রথমেই জানান “ এই বহরমপুর আমার কাছে ভীষণ আবেগে জায়গা, আমার প্রথম ছুটি কাটানোর জায়গা তাই যতবার বহরমপুর আসি, আমার ভিতরে একটা অন্য রকমের অনুভূতি কাজ করে ”। শুরুতেই গান ধরেছিলেন ‘আমি বাংলায় গান গাই ’, এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই বললেন ,“বিভিন্ন জায়গায় যখন যায় বিভিন্ন ভাষার গান গাইতে হয়, কিন্তু যখন কোন পরিবেশে কি বুঝিনি বাংলা গান গাইতে হবে তখন ভেতর থেকে আলাদা তাগিদ কাজ করে গাইবার ”। এবং তারপরই শহর বহরমপুর কে ভালবেসে শহর বহরমপুর কে উদ্দেশ্য করে গাইলেন , “ তোমাকে চাই” ; এক সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই দুর্নিবার বহরমপুর এর ছেলে হয়ে উঠলেন। একের পর এক বাংলা গানে মাতিয়ে দিলেন দর্শকদের । দর্শকদের মধ্যে থেকে বারবারই অনুরোধ আসছিল বিভিন্ন পুরনো দিনের গান গাইবার জন্য।

প্রেক্ষাগৃহে কোন একজন দর্শক বলেন ‘আমরা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দের গান শুনবো, আমরা ওদের গান শুনে বড় হয়েছি’, তখন দুরন্ত দুর্নিবার মজার ছলেই উত্তর দেন, “ তোমরা যদি আমাদের গান না শোনো আমরা তবে বড় হব কি করে ”, তারপরই একের পর এক এসডি বর্মন,আর ডি বর্মন, হেমন্ত,মান্নাদে সকলকে সকল কিংবদন্তি শিল্পী কেই ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলেন। শ্রদ্ধা জানালেন গানে গানে। একটা সময় দর্শকদের অনুরোধের চাপ এতই আসা শুরু হলো, তাতে বলেই ফেললেন, “ পরীক্ষার জন্য পড়ে গেলাম ভূগোল আর….”, তারপর মঞ্চে একরাশ নিস্তব্ধতা দর্শকদের মধ্যে হাসির কোলাহল, এবং দর্শকদের জন্য গেয়ে উঠলেন “ বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা…”| শিল্পীর আনন্দ তার শৈল্পিকতায়, তার কাজের মধ্যে। ঐ সন্ধ্যায় কিভাবে দু’ঘণ্টা কেটে গেল দর্শকদের দর্শকরাও টের পেলেন না। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে খালি গলাতেই দর্শকদের ভালবাসায় আপ্লুত হয়ে গাইলেন “ কান পেতে শুনি হৃদপিন্ডের টান ”, দুর্নিবার এক সন্ধ্যায় স্পন্দনের হৃদস্পন্দন হয়ে উঠলেন। তবে সময় কে তো আর বাঁধ বানিয়ে রাখা যায় না, অনুষ্ঠান শেষে , খালি গলাতেই দর্শকদের সাথে হাতে তালি দিতে দিতে গাইলেন, “ কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ”।

আজকাল বেশিরভাগ মঞ্চেই শিল্পীদের দেখা যায় বিভিন্ন রকমের ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে গান গাইতে, সেখানে এই সন্ধ্যায় দুর্নিবার ছিলেন একদম ভিন্ন। তার সাথে ছিল শুধুমাত্র একজন কিবোর্ড আর্টিস্ট। গানকে অনেকটা ভালবাসলে, অনেকটা সময় দিলে অনেকটা শ্রদ্ধা করলেই হয়তো, এভাবেই সময় স্রোতের বিপরীতে হাঁটা যায়। দর্শকরা দুর্নিবারের গানে এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে গেছিলেন, অনেকে বলে ফেললেন ,“ আমি যদি এবার মরেও যাই আমার কোনো দুঃখ থাকবে না, আমি তোমার গান শুনে ফেলেছি”। আবার কেউ বলে ফেললেন, “ আমরা হেমন্ত, মান্না কে দেখিনি , তোমার গান শুনে জীবন সার্থক তোমার মধ্যে দিয়েই আমরা তাঁকে দেখলাম!” দুর্নিবার ও শ্রদ্ধার সাথে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মঞ্চকে প্রণাম জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। প্রেক্ষাগৃহ সকলেই একরাশ বুকভরা আনন্দ নিয়ে বের হন।

এছাড়াও ঐদিন অনুষ্ঠিত হয় স্পন্দন এর নাটক “মুক্তি স্নান “, যা বর্তমান পরিস্থিতি ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। এছাড়াও ডঃ তানিয়া চক্রবর্তীর সহচার্যে অনুষ্ঠিত হয় শান্তিনিকেতন বন্ধন। এদিন এই অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সম্মাননা জানানো হয়।

এছাড়াও শনিবার,২৫ শে জুন ভারতবর্ষের বিভিন্ন নামকরা নৃত্যশিল্পীরা বিভিন্ন ঘরানার নৃত্য প্রদর্শন করেন। এর পাশাপাশি ছিল স্পন্দনের নৃত্য নাট্য ’শাপ মোচন’। এছাড়াও ওই দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল রাজা দাশগুপ্ত এবং চৈতালি দাশগুপ্ত এর উপস্থাপনা। স্পন্দনের সম্পাদক সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ বারোটা বছর অতিক্রম করা সত্যিই কঠিন কাজ ছিল, সবটা সম্ভব হয়েছে আমার স্পন্দন পরিবারের সকলের জন্য। “