বহরমপুরের নির্মল রেস্টুরেন্টের নস্টালজিয়া কাটলেট, মোগলাই!

Published By: Madhyabanga News | Published On:

দেবনীল সরকারঃ  সন্ধ্যার শহরে বেড়িয়েছেন! কোথায় একটু বসবেন, খাবেন সুস্বাদু খাবার? এখন শহরের চারিদিকে দু’পা অন্তর খাবার জায়গা। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক  ক্যাফে – রেস্তোরাঁ। কিন্তু এসবের ভিড়ে এখনও টিকে আছে শহরের প্রাচীন রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে অন্যতম নির্মল রেস্টুরেন্ট।

১৯৭৮ সালে বহরমপুরে তৈরি হয় নির্মল রেস্টুরেন্ট। বহরমপুরে জলট্যাঙ্কের মোড় থেকে কল্পনা সিনেমার (সিনেমা হলটি যদিও বন্ধ) দিকে যেতে ডানদিকে ফুটপাতের ওপর বসে বাজার, ওটাকে আবার বহরমপুরের গড়িয়াহাটও বলা চলে! ওই ফুটপাতের ধারেই ‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’। নির্মলের মালিক ভোলানাথ দেব জানান, তিনি যখন এই রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন তখন শহরে কয়েকটি খাবার জায়গা ছিল ঠিকই কিন্তু রেস্তোরাঁ ছিল না একটিও। ত্রিপুরা থেকে বহরমপুরে এসে কাকার নামে ‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’ খোলেন তিনি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বহরমপুরের প্রথম রেস্তোরাঁ ‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’, যা আজ প্রায় ৪৩ বছর ধরে স্বমহিমায় শহরের মানুষকে খাবার পরিবেশন করে আসছে।

নির্মল রেস্টুরেন্ট
হরের প্রাচীন রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে অন্যতম নির্মল রেস্টুরেন্ট।

রেস্টুরেন্ট একটি বেশ জনপ্রিয় শব্দবন্ধ অবশ্যই বাংলা নয়, এমনকি ইংরাজিও নয় রেস্তোরাঁ (Restuarant) একটি ফরাসী শব্দ যার ইংরাজি বানান অনুযায়ী উচ্চারণে আমরা রেস্তোরাঁকে রেস্টুরেন্ট করে নিয়েছি। ফরাসীতে এর অর্থ হল শহরের মধ্যে অবস্থিত এক কামরার খাবার জায়গা। সাধারণত শহরের বাইরে থেকে যারা কাজে আসেন তাঁরা এখানে খাবার খান। প্রাচীনকালে মানুষ যখন একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমণ করতেন তখনই অতিথিশালা ও সরাইখানার উৎপত্তি হয়। তেমনই ভ্রমণকারীদের খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়। সেই সময় এই রেস্তোরাঁগুলি খুবই স্বল্প আকারের হত। তবে অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সেই আধুনিক রেস্তোরাঁ ধারণার উদ্ভব হয়েছিল। ফরাসী নবজাগরণের পর তা ছড়িয়ে পরে সারা বিশ্বব্যাপী। আজ পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তেই রেস্তোরাঁ একটি জনপ্রিয় খাবার জায়গা।

‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’ এর মালিক ভোলানাথ দেব ত্রিপুরার আদি বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রথম বারের জন্য বহরমপুর ঘুরতে আসেন

‘নির্মল রেস্টুরেন্ট’ এর মালিক ভোলানাথ দেব ত্রিপুরার আদি বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রথম বারের জন্য বহরমপুর ঘুরতে আসেন, এখানে এসে মাথায় চাপে খেয়াল। জায়গাটি খুব পছন্দ হয় তাঁর। ত্রিপুরাতে যেখানে তাঁর আদি বাড়ি সেখানে আগে থেকেই ছিল নির্মল রেস্তোরাঁ। কাকা নির্মল দেব এর নামে সেই রেস্তোরাঁর নামে বহরমপুরে কল্পনার মোড়ে নির্মল রেস্টুরেন্টের স্থাপন করেন তিনি। প্রথমে ভোলানাথ বাবু একাই শুরু করেছিলেন। আজও সেই দোকান একা হাতে সামলান সাথে রয়েছে হেড কুক আশিস পাল ও গনেশ বিহারী। চার দশক অতিক্রম করে নির্মল আজও তার মোগলাই, কাটলেটের জন্য সুখ্যাতি অমলিন। পুরোনো রাঁধুনি জিতেনদার তৈরি রেসিপিতেই আজও রান্না হয় নির্মলে। কাটলেট, মোগলাই, পোলাও ও মাংসের জন্য নির্মল রেস্টুরেন্টের জুরি মেলা ভার। ছোট ছোট চার আসনের টেবিল পাতা এই রেস্তোরাঁর রিসেপসনে আজও ভোলানাথ বাবু নিজেই বসেন। দুপুর ১ টা থেকে রাত ১০ টা অব্দি শহরের লোকের জন্য খোলা থাকে নির্মল।

প্রথমে ভোলানাথ বাবু একাই শুরু করেছিলেন। আজও সেই দোকান একা হাতে সামলান সাথে রয়েছে হেড কুক আশিস পাল ও গনেশ বিহারী। চার দশক অতিক্রম করে নির্মল আজও তার মোগলাই, কাটলেটের জন্য সুখ্যাতি অমলিন।

সন্ধ্যেয় কাদাইের এই মার্কেটে প্রচুর লোকের আনাগোনা হয় তার ফাঁকেই কেউ টিফিন সেরে নেন, কেউ বা বন্ধুকে নিয়ে সময় কাটাতে আসেন আবার কেউ পরিবারের সাথে। কেউ আবার রাতের খাবারে পোলাও বা মাংসও কিনে নিয়ে যান বাড়ি ফেরার পথে। এখন শপিং মলের যুগে শহর জুড়ে তৈরি হয়েছে একাধিক রেস্তোরাঁ, ক্যাফে কিন্তু তাদের মাঝেও নির্মল রেস্টুরেন্ট শহরের মানুষের কাছে একটি বিশ্বস্ত খাবার জায়গা। আজও একইরকম জনপ্রিয় নির্মলের মোগলাই কিংবা কাটলেট। সাথে পাওয়া যায় আরও নানান স্বাদের পদ কিন্তু রাঁধুনিরা বলছেন, বিক্রির দিক থেকে মোগলাই বা কাটলেটের সাথে কোনও পদেরই জুরি মেলা ভার।