বছর পার, মজুরি বাড়েনি বিড়ি শ্রমিকদের

Published By: Madhyabanga News | Published On:

স্পেশাল রিপোর্টঃ মাসুদ আলিঃ ২৬ ডিসেম্বরঃ বছর শেষ। নিয়ম মেনেই শীত নেমেছে জঙ্গীপুরের বিড়ি মহল্লায়। শীতের দুপুরে বাড়ির উঠোনে উঠোনে বিড়ি বাঁধছেন । কেমন আছেন বিড়ি শ্রমিকরা ? কঠিন এক বছরের স্মৃতি উঠে এল তাদের সাথে কথা বলায়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর মজুরি বাড়েনি এক টাকায়। শুধু এক বছর নয়। মজুরি বাড়েনি তিন তিনটে বছর। জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে নিজের মতোই। নতুন বছরে বাড়বে মজুরি ? সেই দিকেই তাকিয়ে জঙ্গীপুরের বিড়ি শ্রমিকরা।

মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জে পাহাড়ঘাঁটি, লালপুর, দুর্গাপুর গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার বিড়ি বেঁধেই চলেছে বংশ পরম্পরা । জেলার অর্থনীতির অনেকটাই বিড়ি শিল্পের ওপরেই নির্ভরশীল।
এই জেলাতেই রয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। শুধুমাত্র জঙ্গিপুর মহকুমায় সংখ্যাটা প্রায় ৭ লক্ষ।
বিড়ি মহল্লার আক্ষেপ একটাই, বিগত তিন বছর ধরে বাড়েনি মজুরি। হাজার বিড়ি বেঁধে ১৫২ টাকা মজুরি তে সংসার কোন ভাবেই চলছেনা, বলছেন ফুলন, শিখা, খাইরুন বেওয়ারা। আঙ্গুলে সুতো চালানোর দক্ষতা তাদের দেখার মতো ।
সুতো দিয়েই বিড়ি বাঁধাই যে তাদের জীবন, অন্যদিকে পরিবারকেও এক সুতোয় বেঁধে রাখার একমাত্র রাস্তা।

কুলো হাতে এক মনে বিড়ির পাতা, মশলা বাধার কাজ করলেও- দিনের শেষে মুখে হাসি ফোটে না বিড়ি শ্রমিকদের । শুধু উৎসবের মরশুম নয়- বিড়ি মহল্লার মুখ ভার থাকে সারা বছরই। বছর শেষেও তাই বিড়ি মহল্লা জুড়েই বিষাদ। নতুন বছরে শ্রমিকদের দাবি কি পূরণ হবে? প্রশ্ন মনে অনিশ্চয়তায় দিন গুজরান বিড়ি শ্রমিকদর।
এখন দেড়শো টাকা মজুরিতে কাজ করি, সপ্তাহে রোজ কাজ পাই না। এই সব নিয়ে সংসার চালাবো কীভাবে ! বলছেন পূজা সাহা।
মাজেরা বিবির অভিযোগ, হাজার বিড়ি বেঁধে দেড়শো টাকাও পাই না, দুই মুঠো বিড়ি পট্টি বলে ফেলে দেয় মালিকরা।
সংসার চলবে কি, সব্জি কিনতে গিয়েও ঘুরে আসছি। জানাচ্ছেন রেবিনা বিবি।
তবে রেবিনা, পূজা, মাজেরা’দের কথা শুনতে পারছেন নেতা মন্ত্রীরা ! বুঝতে চাইছে বিড়ি মহল্লা।
মজুরি যন্ত্রনায় নতুন যোগ হয়েছে লকডাউন।
চলতি বছরে, ২৩ মার্চ থেকেই জঙ্গিপুরের বিড়ি শিল্পাঞ্চলের সমস্ত বিড়ি কারখানা বন্ধ থাকে। ফলে কাজ হারিয়েছিলেন প্রায় ৬ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। পরে বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু হলেও লকডাউনের জন্য সরবরাহের অবস্থা ঠিক হতে ;লেগে যায় অনেকটা সময়। কিন্তু বিড়ি শিল্পাঞ্চলে বহু ছোট ছোট বিড়ি কারখানা রয়েছে যার মালিকেরা ২০ থেকে ৫০ হাজার বিড়ি বাঁধিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে।
লকডাউনের মধ্যে কাজের ক্ষতি মিটবে না। বলছেন শ্রমিকরা।
বেকার শ্রমিকদের কম মজুরিতে কাজ করানোর অভিযোগও ওঠে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বিড়ি শ্রমিকরা বঞ্চিত তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে? রাত দিন এক করে বিড়ি বেঁধে কেন তারা দিনের শেষে কষ্টের দাম পান না? বার বার মজুরির বৃদ্ধির দাবি উঠলেও- সেই দাবি কেন পূরণ হচ্ছে না?
মজুরির দাবিতে শ্রমিক চড়াচ্ছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। বিড়ি মজদুর অ্যান্ড প্যাকার্স ইউনিয়ানের জেলা সম্পাদক মহম্মদ আজাদের আক্ষেপ, শ্রমিকদের কথা ভাবতে চাইছেন না মালিকরা। জানুয়ারি মাসেই আন্দোলন তীব্র করতে চাইছে সিআইটিইউ।
তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র নেতা আনিকুল ইসলাম বলেম, লকডাউনের সময় থেকেই মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আমরা শ্রমিকদের সাত দিনের কাজ, ন্যায্য মজুরি দাবিতে মালিকদের কাছে যাবো আমরা।
তবে মালিকরাও চেষ্টা করছেন যাতে শ্রমিকরা ভালো থাকুন। বলছেন জঙ্গিপুর কেন্দ্রের সাংসদ খলিলুর রহমান। নিজে নুর বিড়ি ওয়ার্কার্স প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর খলিলুর রহমানের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কড়াকড়ি করাতে ক্ষতি হয়েছে শিল্পের। জিএসটি, লকডাউনের কারণেও ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।
তবে নতুন বছরে আসবে সুদিন ? বাড়বে মজুরি ?
নেতা, মন্ত্রীদের মুখের দিকে চেয়ে দিন কাটছে বিড়ি শ্রমিকদের।