প্রকৃতির স্নেহ আর মাটির সংস্কৃতি মোড়া আন্দুলিয়ার শীতলা তলা Destination Kandi Murshidabad

Published By: Madhyabanga News | Published On:

সার্থক গুপ্তঃ সারি সারি নারকেল গাছ, তাল গাছ ,বাবলা গাছ। আর এই সব পেড়িয়ে বয়ে গেছে একটা নদী ; গ্রামের মানুষ আদর করে নাম দিয়েছে ‘বেলে’ নদী। সেই বেলে নদীর পাশেই রাজা হর্ষবর্ধনের আমলের  শীতলা তলা। মুর্শিদাবাদের অন্যতম ঐতিহাসিক মহকুমা কান্দি। কান্দি মহকুমার আন্দুলিয়া গ্রামের এই শীতলা তলায় দোল পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড়শ বছর ধরে হয়ে আসছে একটি মেলা।


দোল পূর্ণিমার দিন থেকে চার দিন এই মেলা চলে। মেলার শেষ দিন কীর্তন ,বাউলের মাধ্যমে গোটা গ্রাম পরিক্রমা করা হয়। প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটটি কীর্তন গানের দলে ,বাউল দল এই নগর পরিক্রমায় অংশ নেই। গ্রামের ভাষায় এই নগর পরিক্রমার নাম “ধুলোট”। আজও প্রতিবছর হয় ধুলোট ।
হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতি “সং সাজা” আজও চোখে পড়ে এই গ্রামের ধুলোটে । শীতলাতলা মেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমান দুই ধর্মের মানুষই একসাথে মেলার শেষ দিন পাত পেড়ে শীতলা মায়ের প্রসাদ খিচুড়ি খেতে আসেন ।

হারিয়ে যাওয়া সেই শরৎচন্দ্রের “পল্লীসমাজ” এর গ্রামকে যদি খুঁজে পেতে চান তাহলে দোল পূর্ণিমায় চলে আসতে পারেন এই আন্দুলিয়া গ্রাম । মাচা বেঁধে গ্রামের সকলে মিলে সামাজিক যাত্রাপালা করেন । সেই যাত্রাপালাতে আপনি খুঁজে পাবেন পুরনো ঐতিহ্য কে বাঁচিয়ে রাখার আন্তরিক প্রয়াস।
চার দিন ধরে এই মেলায় অষ্টপ্রহর কীর্তন, আলকাপ, কবিগান হয়ে আসছে প্রায় এক শতাব্দী ধরে। এই লোকসংস্কৃতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে সময়স্রোতের নিয়মে। আন্দুলিয়া গ্রামে কবিগান থেকে আলকাপ , কীর্তন থেকে বাউল , সং সাজা থেকে সামাজিক যাত্রাপালা সবকিছু বেঁচে আছে স্বমহিমায়।

প্রকৃতি এখানে শান্ত

এই মেলাকে কেন্দ্র করে তিরিশ থেকে চল্লিশটি দোকান বসে। মেলায় পাওয়া যায় কলাইয়ের ডালের জিলাপি, গ্রামের মানুষের তৈরি সুস্বাদু পাঁপড় , ঝাঁঝির তৈরি রান্নার বাসন । গ্রামের কুমোর পাড়ার চাক ঘুরিয়ে তৈরি মাটির কড়াই, সড়া, হাঁড়ি মাটির বাসন কোসন, ঘোষপাড়ার টাটকা ছানার তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি নিয়েও পসরা সাজান আশেপাশের গ্রামের মানুষ ।

মেলায় খিচুড়ি খাচ্ছেন গ্রামের মানুষ

তাছাড়া গোটা বছর শীতল তলায় নিত্য পূজা হয়। শীতল তলাকে আরও মনোরম করে সাজানোর জন্য শীতলাতলা মেলা কমিটি এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের উদ্যোগে সোনাঝুরি, কৃষ্ণচূড়া, মেহগিনি বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে সবুজ করে দেওয়া হয়েছে । এখানে যদিও কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া নেই । প্রকৃতির অনাদি অসীম অপার স্নেহ স্পর্শে গ্রামের পাশেই গড়ে উঠেছে সবুজ জঙ্গল। শীতল তলার পাশেই সেচ দপ্তরের অধীনে থাকা দুটো বাঁধ আছে । সেই বাঁধ কে পাহাড় কাটা পাথরে সাজানো হয়েছে। আপনার মনে হতেই পারে আন্দুলিয়া গ্রাম – শীতলা তলা আসলে “মুর্শিদাবাদের শান্তিনিকেতন”।

শীতলা তলার রাস্তা

এই পড়তি শীতে বাবলা নদীর বিশাল বালির চরে নরম রোদ মেখে চড়ুইভাতি করে আসতে পারেন। ভিড় নেই ,কোলাহল নেই এখানে । এখানে আছে মোড়াম রাস্তা, নদীর ক্ষীণ হয়ে যাওয়া কলেবরে ধূ ধূ করা বালির চর । আর বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য সবুজ ধানের মাথা ঝোঁকানো টাটকা বাতাস।

ঘুরে আসুন আন্দুলিয়া গ্রাম যেখানে আজব গ্রাম বেঁচে আছে গ্রামের মত করে।