নির্জন পাহাড়ি গ্রাম, নাম তার “তোদে”

Published By: Madhyabanga News | Published On:

প্রিয়াঙ্কা দেব বিশ্বাসঃ পাহাড়, জঙ্গল, নদী, সব কিছু নিয়েই প্রকৃতি যেন তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে সেখানে। শহুরে কোলাহল, ব্যস্ততায় দম বন্ধ হয়ে আসা মন তাই ফিরে যেতে চায় সেখানেই বারবার। আর তাইতো নবাবী শহর থেকে সোজা ছুটে চলা প্রকৃতির ক্যানভাসে। কটা দিন প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে, বর্তমানের উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে হেঁটে আসা পাহাড়ি রাস্তায়। চলুন, আজ আপনাদের সাথে আলাপ করাই নির্মল, স্নিগ্ধ, ছোট্ট সেই ‘তোদে’ গ্রামের সাথে।
করোনা ভয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে আমাদের সফর সঙ্গী একটি চার চাকা। তাতে চড়েই বহরমপুর থেকে শিলিগুড়ি, তিস্তার ধার ঘেঁষে করোনেশন ব্রিজ হয়ে মালবাজার, চালসা পেড়িয়ে চাপড়ামারি অভয়ারণ্যের বুক চিরে এগিয়ে চললাম। আলো আঁধারি পথ পেরিয়ে মহাকালের রাজত্বে পৌঁছে তাদের দেখা না পেলেও গাড়ির উইন্ড গ্লাস দিয়ে উঁকিঝুঁকি বজায় ছিলই। যদি কখনো কংক্রিটের জঙ্গল থেকে আসা অতিথিদের দেখা দেন তাঁরা। সেই আশা নিয়েই আঁকাবাঁকা পথ ছুয়ে ছুটে চললাম অনেকটা রাস্তা।
জলঢাকার তীরে ছোট্ট জনপদ ‘ঝালং’ এর মাটি ছুঁলাম; ইদানিং এই জনপদ পর্যটকদের তার নিজস্ব আঙ্গিকে আকর্ষণ করে চলেছে, কিন্তু আমরা তার আকর্ষণের প্রতি একরকম বিমুখ হয়েই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রওনা দিলাম কালিম্পং জেলার একেবারে উত্তরপূর্ব প্রান্তের শেষ একটি গ্রাম , ‘ঝালং’ থেকে মাত্র 17 কিমি দূরে “তোদে”-র উদ্দ্যেশ্যে।
আমি বলছি, সেই “তোদে” গ্রামের কথাই। একদিকে কালিম্পং জেলা, অন্য দিকে প্রতিবেশী ভুটান। দূর থেকে সব সীমানার গণ্ডি ছাড়িয়ে মিলেমিশে একাকার। নীল আকাশ, আলতো করে ভেসে থাকা মেঘ, উচুঁনিচু পাহাড়, স্নিগ্ধ হিমেল পরশে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। কালিম্পং জেলার একেবারে উত্তরপূর্বে ভুটান সীমান্ত লাগোয়া পাহাড়ি গ্রামের শোভা বহু গুণ বাড়িয়ে দিল তার আতিথেয়তা।
যার কথা না বললেই নয় আমাদের নতুন বাড়ি হয়ে উঠল “কারডামম হোমস্টে” , যার প্রত্যেক সদস্য এক নিমেষে আপনকরে নিল আমাদের। এলাচ বাগানে ঘেরা পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটি নীলরঙা বাড়ি ফুলের চাদরে মুড়ে আমাদের ওয়েলকাম করতে ব্যাস্ত। এলাচের গন্ধে যেন ম ম করছে চারপাশ। অনেকটা পথ পেরোনোর সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে সাফ। ছোটাছুটির জীবন থেকে কটা দিন প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া। সমস্ত হিসেব নিকেশ ভুলে সরলতাকে আঁকড়ে বাঁচার যে মজাটাই আলাদা। রাতের অন্ধকারে পাহাড়ের নীরবতায় পাহাড়ি গান, গিটারের শব্দে বন ফায়ারেরে সবটুকু উত্তাপ নিংড়ে নেবার চেষ্টা। আকাশে ঝিকমিক করছে তারারা, মধ্য গগনে চাঁদ আর সাথে আমরা। সব ভুলে ফিরে পেলাম, খুঁজে পেলাম নিজেদের, আর আমাদের শ্রোতা হল রাতের “তোদে”।

স্মৃতিটুকু ফেলে এলাম, ফের কোনদিন ছুটে যাওয়ার আশায়। “অফবিট” ডেস্টিনেশন এর সেরা এক আবিষ্কার “তোদে”।

ও হ্যাঁ, হোমস্টে তে কটা দিন কাটিয়ে চলে যেতেই পারেন উপরিপাওনা হিসেবে রিভার ক্যাম্পিং এর অভিজ্ঞতা নিতে। সেই অসাধারন এক অ্যাডভেঞ্চার হাতছানি দিল আমাদেরও। একদিকে বন্ধু দেশ ভুটান, অপরদিকে কালিম্পং এবং মাঝে বয়ে চলা জলঢাকা নদী। সেই জলঢাকার পারেই খোলা আকাশের নীচে উপভোগ করলাম নির্জনতা। এক বিমূঢ় নিস্তব্ধতায় নিজেকে চিনে নেবার এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করা কি যায়।
ভালো থেকো “তোদে”, ফির মিলেঙ্গে।
যেখানে ছিলামঃ কারডামম হোমস্টে, তোদে, পালা, কালিম্পং
যোগাযোগ : সঞ্জয় রাই 8900091192,ডিজেল লেপচা 9474998950,
জোসেফ লেপচা 9434808303