” আমায় ব্রিটিশ সরকার জেলে পুরে রাখতে ভালবাসে । বলে আমি নাকি টেরিরিস্ট , হ্যাঁ আমি দেশকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি । স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার । সে অধিকারে আমরা কেন বঞ্চিত থাকবো ? ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন বিদ্বেষ নেই । তারা আমাদের দেশে থাকতে পারেন । তবে শাসক হিসেবে নয় , ভারতবাসী হিসেবে । ”
শীলং এর সেন্ট এডমন্ড কলেজে আইরিশ ব্রাদারের আমন্ত্রণ এর সভাতে সুভাষচন্দ্র এমন কথাই বলেছিলেন সংবর্ধনা গ্রহণের পরে । সেই সভাতে নেতাজির গলায় সেদিন পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিলং এর নিজস্ব ফুল আকাশি রঙা ‘ ফরগেট মি নট ‘ এর বিশাল একটি মালা৷। সময়টা ১৯৩৮ সাল ।
সিঙ্গাপুর আন্দামান বর্মা হয়ে নাগাল্যান্ড মণিপুরে নেতাজি ও আজাদ হিন্দ এর লড়াইয়ে তখনো বাকি বছর পাঁচেক । স্বাধীনতা দেশভাগের বাকি ন বছর কিন্তু আসমে ১৯৩৮ সালে সুভাষ মুসলিম লীগের কুটকৌশল কে বানচাল করে যদি না জাতীয় কংগ্রেসের কোয়ালিশন সরকার গঠন করতেন অসম তবে স্বাধীন ভারতের মানচিত্রে থাকতো কিনা সন্দেহ ।
১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ প্রাদেশিক রাজ্যগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের আংশিক অধিকার দিয়ে গণভোটের মাধ্যমে নিজ নিজ রাজ্যে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি দেয়৷। এ সময়ে ভারতের অন্য ৭ রাজ্যে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা জিতে গেলেও অসমে ১০৮ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৮ টি পায় । কংগ্রেসের এই পরিস্থিতিতে সুভাষ অত্যন্ত সাহসের সাথে এবং দক্ষতা বুদ্ধিমত্তা আর কূটনীতি দ্বারা স্যার সাদাউল্লাহ র গঠন করা ‘ ‘ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি ‘ র সব রকম দুরভিসন্ধি কে নস্যাৎ করে দিয়ে তীক্ষ্ণ দূরদর্শীতায় অসমে জাতীয় কংগ্রেসের কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ করান গোপীনাথ বরদলৈর নেতৃত্বে । বীর সুভাষ অসমের হাল না ধরলে সেদিন , আজকের অসমের স্থান হয়তো হতো অন্য দেশের মানচিত্রে ।
অসমের রাজনৈতিক অস্থিরতার দিনে সংবাদ সংগ্রহে কলকাতা থেকে যাওয়া অসমীয়া সাংবাদিক সতীশচন্দ্র কাকটি যখন সুভাষচন্দ্র কে প্রশ্ন করেন , জবাবে সুভাষ সেদিন জানান , ” কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা গঠন করতেই হবে অসমে । নাহলে অসম শেষ হয়ে যাবে”।
“অসম রাজ্যের জন্য নেতাজির এমন উৎকণ্ঠা দূরদর্শিতা দেখে মুগ্ধ হয়ে সাংবাদিক সতীশচন্দ্র সুভাষকে কিংবদন্তি দেশপ্রেমী বলে অভিহিত করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সেদিন ।