সায়ন গুপ্তঃ কান্দিঃ ‘দুর্বল’ মানুষের অস্ত্র বিদ্রুপ। খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে অনেকে বঞ্চিত হতে হতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা মানুষের পোশাক-আসাক নকল করে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেন । এটাই ছিল এক রকমের বিনোদন। সেখান থেকেই বাংলার অন্যতম লোকসংস্কৃতি সঙ’এর সৃষ্টি। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম,নদিয়া, মুর্শিদাবাদে সং’এর সংস্কৃতি আজও বেঁচে আছে। বেঁচে আছে লোকসংস্কৃতি। মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার আন্দুলিয়া গ্রামের প্রায় চারশো বছরের পুরনো ‘দেবস্থান’ শীতলাতলা।
প্রতিবছর বসন্তে দোল পূর্ণিমায় এখানে সাত দিন ধরে উৎসব হয়। প্রায় এক হাজার কীর্তনীয়া নগর পরিক্রমা করেন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। পৌরাণিক যুগের চরিত্র, ঘটনাকে মাটিতে নামিয়ে আনার ভঙ্গিতে ঘোড়া নিয়ে কীর্তনীয়ার দল গ্রামে আসে। সাথে নিয়ে আসে পুরোনো সংস্কৃতি।
এর মধ্যে অন্যতম হল “সঙ সাজা” । সমাজের উচ্চ বর্ণের মানুষের ঢঙে পোশাক পরে গরিব মানুষ হাসির ছলে নিজের কথা বলেন এই সঙ সাজার মাধ্যমে। নিজেদের মতন করে ছন্দ মিলিয়ে ছড়া বানান শিল্পীরা ।
যেমন
“রাজা তোর বিশাল বড় বাড়ি
বিশাল বড় সভা
সবাই শোনে গান
কেউ বলেনা চাট্টি ভাত খাবা?”
কান্দির শীতল তলায় তিনি এসেছিলেন । তিনি ছড়া কাটছিলেন ছিলেন এই বলেঃ
“সংসারেতে সাজার ওপর সাজেন যিনি যেথা
তারি ভাষা দেখায় সবে সহজ ভাষায় সোজা
সমাজনীতি,ধর্মনীতি শিক্ষানীতি আদি
বলতে গিয়ে কারুর প্রাণে ব্যথা দিই যদি
ক্ষমা করবেন, সবার কাছে মোদের এই মিনতি,
সত্যের ভাষণ। সঙ এর নীতি” ।
যিনি এসেছিলেন তার নাম রাম বাউরী । পায়ে হেঁটে দুর্বলের কথা বলে গেলেন। বিদ্রূপের গানে মানুষকে হাসিয়ে গেলেন । বিনিয়ময়ে রোজগার বলতে সামান্যই। বাকিটা শিল্পের তাগিদ। শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ।