‘ঝাড়ফুঁক’এ কী হয় ? ঝাড়ফুঁকের পর্দাফাঁস করলেন সাইকোথেরাপিস্ট মৈত্রী আহমেদ

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মানসিক রোগ নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা  আছে আমাদের অনেকের । মানসিক সমস্যায় ভোগেন এমন একাংশের মানুষ প্রবল ভাবে বিশ্বাসী ‘ঝাঁড়ফুক’  তত্ত্বে। এই অন্ধবিশ্বাস কী ভাবে গ্রাস করছে সমাজকে? এর বিজ্ঞান ভিত্তিক নিরাময় কী ? এই অন্ধত্ব কি এক প্রকার মানসিক সমস্যা ? – ‘ঝাঁড়ফুকের গল্প’ বিষয়ে গার্গী চৌধুরীর  কথা বলেছেন সাইকোথেরাপিস্ট মৈত্রী আহমেদ।

প্রশ্নঃ  ‘ঝাঁড়ফুক’  বিষয়টি কী ?                                                                                         উত্তরঃ ‘ঝাঁড়ফুক’  কথাটাকে ভাঙলে পাওয়া যায় দুটি শব্দ- ঝাঁড় আর ফুক। ঝাঁড়া মানে ঝাঁটা দিয়ে মারা আর ফুক মানে ফুঁ দেওয়া। এটি বহু বহু বহু প্রাচীন বিষয়। আগেকার দিনে মানসিক সমস্যা বা মানসিক রোগ এই ধারনা গুলো স্পষ্ট ছিলনা, মানসিক ভাবে অসুস্থ মানুষদের এটাই মনে করা হত যে তাদের মধ্যে কোন অশরীরী আত্মা ভর করেছে, এবং যারা উগ্র আচরণ করত তাদের ওপর ঝাড়ফুঁকের নামে অমানসিক আচরণ করে সেই খারাপ আত্মাকে বের করার চেষ্টা করা হত, যদিও এই গুলোর মধ্যে দিয়ে কোন ভাবেই রোগীকে সুস্থ করার সঠিক রাস্তা নেই।

প্রঃ কখন রোগীরা আপনাদের কাছে আসেন?তারা কি প্রথমেই চিকিৎসার ওপরে বিশ্বাস করেন? কিভাবে আপনারা তাদের বোঝান?

উত্তরঃ আমাদের কাছে যখন রোগীরা আসেন তখন অলরেডি তারা বুঝে যান যে ঝাঁড়ফুকে আর কাজ হবেনা। যখন আমাদের চিকিৎসায় কাজ হতে শুরু করে তখন তাদের বোঝাতে সুবিধা হয় যে এই বিষয়টা একেবারেই বিজ্ঞান ভিত্তিক নয়, সমস্যার পেছেন যে বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে সেগুলো যখন ধীরে ধীরে তাদের বোঝানো হয় যে মনের গভীর থেকে এই ধরনের আচরণ গুলো উঠে আসে।

 

প্রঃ যাদের ওপর ঝাঁড়ফুক করা হয় তাদের এই আচরণের কারণ কি?

উত্তরঃ প্রথমত অনেক সময় মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য করা হয় যেটা সজ্ঞানে নাও হতে পারে;  দ্বিতীয়ত দীর্ঘদিন ধরে কোন মানুষ অবহেলিত,তার থেকেই মনের মধ্যে জমে থাকা হতাশা, ক্ষোভ, আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। সেই সময় সেই মানুষটি দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য  হয়ে পড়েন।  প্রবল রাগে তার শরীরে শক্তি বেড়ে যায়, সমস্ত আক্রোশ গর্জন আকারে বেরিয়ে আসে। এবং যারা সেই মানুষটির এই রূপ দেখে অভ্যস্ত নয় তারা হঠাৎ এই অস্বাভাবিক আচরণকে অলৌকিক ভাবতে শুরু করে এবং ঝাঁড়ফুকের নামে তার ওপর অমানবিক আচরণ করে তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করে। এখানেই শেষ নয় যখন তারা সেই মানুষটিকে কোন ওঝা বা গুনীনের কাছে নিয়ে যান  তখন বিশ্বাস টা আরও পাকাপাকি ভাবে মনে গেঁথে যায়, সেই বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রোগী কিন্তু আরও বেশি করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাসায় যাকে বলে ‘placebo’, অর্থাৎ এতটাই মানুষের বিশ্বাস যে এদের কাছে গেলেই আমি ভালো হয়ে যাবো সেই বিশ্বাস থেকেই অর্ধেক নিরাময় হয়ে যায়, বিশ্বাসের এতটাই জোর। তখন মানুষ ভাবেন সত্যিই হয়তো এই ঝাঁড়ফুকের কার্যকারিতা আছে।

প্রঃ তাহলে এর বিজ্ঞান ভিত্তিক নিরাময় কী ?

উত্তরঃ বিজ্ঞান ভিত্তিক নিরাময়ের জন্য অবশ্যই মেডিসিন ও থেরাপির সাহায্য নেওয়া দরকার। অনেকসময় আমাদের কাছে পৌঁছাতে  রোগীরা এতটাই দেরী করে ফেলেন যে তাতে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। মেডিসিনের মাধ্যমে অনেকটা কাজ হয় এবং থেরাপির মধ্যে দিয়ে তাদের বোঝানো এর পেছেনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি। অনেক সময় তাদের বোঝানো বেশ কষ্টসাধ্যও হয়ে যায়।

প্রঃ কিভাবে সচেতন করবেন?

উত্তরঃ এই বিষয়ে এখন গ্রামে গ্রামে সচেতনতা শিবির  হচ্ছে, আর এটা শুধু মাত্র স্কুলের শিক্ষার ওপরে নির্ভর করে না। স্কুলে সাইকোলজি , মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে খুব একটা জোর দেওয়া হয়না, যদি আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যকে রাখা হয় তাহলে কিন্তু নতুন প্রজন্মের মনে এই ভুল ধারণা গুলো তৈরি হবেনা এবং তারাও  পরিবারের লোকেদের মনের ভুল ধারণা গুলো দূর করতে পারবে।