লিখলেনঃ প্রীতম দাস
শহর বহরমপুরের ঠিক মাঝখানে ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়্যার ময়দান, আমাদের সকলের চেনা এবং অতন্ত আবেগের একটা জায়গা । এই ব্যারাক স্কোয়্যার কারোর কাছে প্রাতঃভ্রমণ এর স্থান, কারোর কাছে খেলার মাঠ, কারোর বা বিকেলের জমাটি আড্ডার প্রান্তর।
কিন্তু এই মাঠের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমরা ক্রমশ উদাসীন হয়ে যাচ্ছি।
সুন্দর ফুটপাত এবং সবুজ গাছপালায় ঘেরা মাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্ট করছি নিজেদের হাতেই।
সারাদিনের আড্ডার পর ফেলে যাওয়া হচ্ছে নানান আবর্জনা । মাঠের পাশে যদিও যথেষ্ট ডাস্টবিন রয়েছে, তবুও আমরা সেটাকে ব্যবহার করছি না।
ফলত দিনের শেষে মাঠ ভর্তি হচ্ছে খাবারের প্যাকেটে, চায়ের কাপে, মুড়ির ঠোঙায়, বাদামের খোলায় ।
কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, আমাদের সারাদিনের বা সন্ধ্যের আড্ডার পর মাঠে যে নোংরা, কাগজ, কাপ, প্যাকেট পরে থাকে, তা পরিষ্কার করার দ্বায়িত্ব পরে মাঠের চা দাদা, বাদাম দাদা, মুড়ি দাদা দের ওপর, এই শর্তেই তাদের ওখানে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়, এবং তারা এই ঠান্ডার মধ্যেও সেই কাজ করেন রোজ, সামান্য কিছু রোজগার চালিয়ে যাওয়ার আশায়…
এর থেকেও বড় একটা সমস্যা দেখা যাচ্ছে ইদানিং।
মাঠে এসে জন্মদিন পালন করা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে …
প্রায় রোজই মাঠের বিভিন্ন জায়গায় মোমবাতি জ্বেলে এবং শুটার ( যাতে টুকরো টুকরো রঙিন প্লাস্টিক ছড়িয়ে পরে) ফাটিয়ে পালন করা হচ্ছে জন্মদিন, ফলে গোটা মাঠ ভরে উঠছে রঙিন টুকরো প্লাস্টিকে।
আর এগুলো পরিষ্কার করা সত্যিই কষ্টের হয়ে যাচ্ছে ওই দাদাদের পক্ষে… রাত ১০ টা অবধি ব্যবসা করার পর তাদের মাঠ পরিষ্কারে লেগে যাচ্ছে আরও ঘন্টা দুয়েক। মাঠের চা দাদা আক্ষেপের সুরে বললেন, ” গোটা মাঠ ভরে যাচ্ছে ওই রঙীন কাগজে, কেউ বোঝে না, আমাদের কষ্ট করে সাফাই করতে হয় । রোজ রোজ অনেক জন্মদিন পালন হচ্ছে মাঠে, এঁটো খাবার প্যাকেট পরে থাকছে যেখানে সেখানে ”
তাই আসুন দয়া করে মাঠ নোংরা করার আগে একটু ভাবি আমরা,
আমাদের ক্ষনিকের আনন্দ যেন অনেকের কাছে সাজা বা বিরক্তি হয়ে না দাঁড়ায়…
হয়তো পেট চালানোর উপায় বন্ধ হবে বলেই, কিন্তু মানুষ মুখ বন্ধ করে শীতের মধ্যেও সাফাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাই, অন্ততপক্ষে ইনাদের কথা ভেবে বা পরিবেশ এবং ঐতিহ্যকে রক্ষার সার্থে আমরা একটু মানবিক হতে পারি না ??
জন্মদিন পালন যদি বাড়িতেই করি তাহলেই সবথেকে ভালো, আর যদি মাঠে করতেই হয়, তাহলেও যেন পরিষ্কার করে দিয়ে আসি ।
আসুন আমরা সকলে মিলে এই ব্যাপারে সতর্ক হই, আমাদের গর্বের ব্যারাক স্কোয়্যার ময়দানকে সবুজ- সুন্দর ভাবে বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব আমাদেরই, সেকথা ভুললে চলবে না ।
( লেখকের মতামত নিজস্ব)