প্রশান্ত শর্মাঃ ২৪ এপ্রিলঃ সপ্তম দফার ভোট নিয়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে। এই দফায় রাজ্যের মোট সপ্তম ৩৪ আসনে নির্বাচন হবে। মালদহ , মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, কলকাতা দক্ষিণ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ছড়িয়ে আছে এই আসনগুলি। মোট ৩৬ টি আসনে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও করোনা আক্রান্ত হয়ে সামসেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী এবং জঙ্গিপুরের আরএসপি প্রার্থীর মৃত্যুতে ওই দুই কেন্দ্রে পিছিয়ে গিয়েছে ভোট।
মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘী, লালগোলা, ভগবানগোলা, নবগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, রানিনগর এই ৯ টি কেন্দ্রে হবে নির্বাচন। চারটি কেন্দ্র জঙ্গিপুর মহকুমা এবং চারটি কেন্দ্রে মুর্শিদাবাদ মহকুমার অধীন।
জঙ্গিপুর মহকুমার ফারাক্কা, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘীর মানুষ ভোট দেবেন ২৬ তারিখ ।
বিড়ি শ্রমিক নিবিড় জঙ্গিপুর মহকুমায় টানটান ভোটের উত্তাপ।
দেখে নিই প্রচার শেষে কোন কেন্দ্রের ছবি ঠিক কী রকম।
১) কেন্দ্রঃ ফারাক্কা
২০১৬ তে জয়ী হয়েছেনঃ মইনুল হক ( কংগ্রেস)
২০২১ এর প্রার্থীঃ
কংগ্রেস ( সংযুক্ত মোর্চা) – মইনুল হক,
তৃণমূল কংগ্রেসঃ মনিরুল হক
বিজেপিঃ মিলন ঘোষ
২০১৯ এ লোকসভায় এগিয়েঃ কংগ্রেস
ভোটে ফ্যাক্টরঃ মইনুল হক’কে নিয়ে সিপিএম কর্মীদের একাংশের অসন্তোষ এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের পক্ষে বড় কাঁটা। বিজেপি বাড়িয়েছে ভোট। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী নিয়েও আছে অসন্তোষ। টাফ টক্কর তৃণমূল আর কংগ্রেসের মধ্যে।
২) কেন্দ্রঃ সুতি
২০১৬ তে জয়ী হয়েছেনঃ হুমায়ুন রেজা ( কংগ্রেস)
২০২১ এর প্রার্থীঃ
কংগ্রেস ( সংযুক্ত মোর্চা) – হুমায়ুন রেজা ,
তৃণমূল কংগ্রেসঃ ইমানি বিশ্বাস
বিজেপিঃ সুজিত দাস
নির্দলঃ মইদুল ইসলাম ( জেলা পরিষদ সদস্য)
২০১৯ এ লোকসভায় এগিয়েঃ তৃণমূল কংগ্রেস
ভোটে ফ্যাক্টরঃ বিড়ি শ্রমিক নিবিড় সুতিতে এবার বড়ো ফ্যাক্টার হতে চলেছেন নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়ানো মইদুল ইসলাম। জেলা পরিষদ সদস্য মইদুল ভোটে দাঁড়িয়েছেন নির্দল হিসেবে। কংগ্রেসের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস কংগ্রেস ছেড়ে সমর্থন দিয়েছেন নির্দল প্রার্থীকে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেই অস্বস্তিতে দলের প্রার্থীকে নিয়ে। শিল্পপতি ইমানি বিশ্বাসকে নিমতিতা বিস্ফোরণ কান্ডে একাধিকবার জেরা করেছে এনআইএ। এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস দুই দলের প্রার্থীই বিড়ি শিল্পের টাইকুন। বিড়ি শ্রমিকদের মধ্য জনপ্রিয়তা থাকার দাবি জানাচ্ছন নির্দল মইদুলও। বিড়ি শ্রমিকরা কাকে ভোট দেবেন তার উপরেই নির্ভর করছে ভোটের টক্কর ।
৩ ) কেন্দ্রঃ রঘুনাথগঞ্জ
২০১৬ তে জয়ী হয়েছেনঃ আখরুজ্জামান ( কংগ্রেস) (পরে যোগ দিন তৃণমূল কংগ্রেসে)
২০২১ এর প্রার্থীঃ
তৃণমূল কংগ্রেসঃ আখরুজ্জামান
কংগ্রেস ( সংযুক্ত মোর্চা) – আবুল কাশেম বিশ্বাস
বিজেপিঃ গোলাম মোদাশ্বার
নির্দলঃ নাসির সেখ
২০১৯ এ লোকসভায় এগিয়েঃ তৃণমূল কংগ্রেস
ভোটে ফ্যাক্টরঃ রঘুনাথগঞ্জে বিজেপি’র ভোটের বৃদ্ধি চাপে রেখেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে। এছাড়াও আছে দুই দলের স্থানীয় স্তরে গোষ্ঠী কোন্দল। নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতা নাসির সেখ। সরকারে থাকা এবং তৃণমূলের লোকবলে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্লাস পয়েন্ট । তবে, তৃণমূলকে যথেষ্ট চাপে রাখছে বাম কংগ্রেসের পুরোনো ভোট ব্যাঙ্ক।
৪ ) কেন্দ্রঃ সাগরদিঘী
২০১৬ তে জয়ী হয়েছেনঃ সুব্রত সাহা (তৃণমূল কংগ্রেস)
২০২১ এর প্রার্থীঃ
তৃণমূল কংগ্রেসঃ সুব্রত সাহা
কংগ্রেস ( সংযুক্ত মোর্চা) – হাসানুজ্জামান বাপ্পা
বিজেপিঃ মাফুজা খাতুন
২০১৯ এ লোকসভায় এগিয়েঃ তৃণমূল কংগ্রেস
ভোটে ফ্যাক্টরঃ সাগরদিঘীতে তিন দলের তিন প্রার্থীই বহিরাগত। এই নিয়ে গোড়া থেকে অসন্তোষ আছে সব পক্ষেই। তবে এই কেন্দ্রে তৃণমূল আর কংগ্রেস কালঘাম ছুটিয়েছে বিজেপি হাওয়া। লোকসভা ভোটে জঙ্গিপুরে বিপুল ভোট পেয়ে চমকে দেওয়া মাফুজাকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপি। বিজেপি’র প্রচারে দেখা গিয়েছে লোকসমাগমও। সুব্রত সাহার বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভে বিজেপির লাভ হবে বলেই মনে করছেন অনেকে। সাথে আছে মাফুজা খাতুনের সংগঠন গড়ার নিজস্ব স্টাইল। সব নিয়ে এই কেন্দ্রে ত্রিপাক্ষিক লড়াইয়ে সুব্রত সাহাকে চাপে রাখছেন মাফুজা।
জঙ্গিপুরের এই চারকেন্দ্রের নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে জেলার রাজনীতির অনেকটাই।
এই মহকুমার অন্য দুই কেন্দ্র জঙ্গিপুর এবং সামসেরগঞ্জে ভোট গ্রহণ হবে ১৬ই মে।
চারকেন্দ্রে কোভিড বিধি মেনে কাটছাঁট হয়েছে সব দলের প্রচারেই। তবে চার কেন্দ্রের জন্য একাধিক সভা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। টানা সভা করে বিজেপি কর্মীদের অক্সিজেন জুগিয়েছেন দিলীপ ঘোষও।
প্রচার শেষে দলের কর্মীরা এখন ব্যস্ত বুথ সামলাতে। টানটান উত্তেজনা ২৬ এর বিকেল অবধি।