জঙ্গল থেকে জনবহুল মন্দির ! খাগড়ার বালক নাথ শিব মন্দিরের আখ্যান

Published By: Madhyabanga News | Published On:

চন্দনা দত্তঃ প্রায় তিন শো বছর আগের কথা , খাগড়ার বালক নাথ তলা শিব মন্দির এলাকা ছিল গঙ্গা তীরবর্তী এলাকা । ছিল নলখাগড়ার জঙ্গল ও ! সেই সময়তেই ব্রহ্মচারী কাশি গিরি গোস্বামী বহু তীর্থ ভ্রমণের পর ফিরে আসেন বহরমপুরের গৃহে । কথিত আছে এই সময় তিনি তৈলঙ্গ স্বামীর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন । গৃহে ফিরে কাশি গিরি গোস্বামী গঙ্গার ধারে প্রায়শই বেড়াতেন । গঙ্গার ধারে বেড়ানোর সময় তিনি দেখতেন ছোট ছোট ছেলেরা গঙ্গার ধারের বালি দিয়ে শিবলিঙ্গ বানিয়ে আবার তা ভেঙে দেয় । সবটাই তারা করত খেলার ছলে । কাশি গিরি গোস্বামী সেগুলি লক্ষ্য করতেন । জানা গেছে কাশি গিরি গোস্বামী দিনের পর দিন এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পরই মনস্থির করেন , দেবাদিদেব মহাদেবের লিঙ্গ রূপ শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করবেন গৃহে । সেইমতো তিনি গৃহে শিবলিঙ্গ স্থাপন করলেন । তৈরি হল মন্দির । বাবা ভোলেনাথের লিঙ্গ রূপ এখানে বাবা বালক নাথ নামে প্রতিষ্ঠা পেল । কাশি গিরি গোস্বামীর ইচ্ছা অনুসারেই এই মন্দিরের নাম বাবা বালক নাথ শিব মন্দির হয় । এমন নামের কারণ হিসেবে জানা যায় , কাশি গিরি গোস্বামীর গঙ্গা তীরে ভ্রমণকালে , বালকের দল গঙ্গার তীরে খেলার ছলে বালি দিয়ে শিব লিঙ্গ গড়া এবং ভেঙে দেওয়ার ঘটনাই ব্রহ্মচারী কাশি গিরি গোস্বামী কে প্রভাবিত করে । সেই থেকে এই মন্দিরে বাবা ভোলেনাথ বালক নাথ রূপে পূজিত হন । খাগড়ার মন্দির সংলগ্ন এই এলাকা বালকনাথ তলা হিসেবে পরিচিতি পায় । যে টি এখন শহর বহরমপুরের একটি জনবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা । বালক নাথ মন্দিরের সেবাইত খাগড়ার বন্দোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম বিবেক বন্দোপাধ্যায় জানালেন বালক নাথ মন্দিরের পূর্বেকার এই সব কাহিনী । মন্দিরের সাধারণ নিত্য পূজা থেকে বিশেষ পূজা অর্চনার বিষয়গুলিও জানালেন বিবেক বন্দোপাধ্যায় ।
মন্দিরে  নিত্য পূজা সারা বছরই হয়। এছাড়াও শিবরাত্রি এবং নীল ষষ্ঠী বছরের এই দুটি দিন বিশেষ পূজার্চ্চনার আয়োজন করা হয় মন্দিরে । জেলা তো বটেই জেলার বাইরে থেকেও বহু ভক্ত বাবা বালকনাথের দর্শন এবং শিবের  মাথায় জল ঢালতে মন্দিরে ভিড় করেন ।

খাগড়ার মূল রাস্তার একপাশে অবস্থানরত বালক নাথ মন্দির টির গর্ভগৃহে প্রবেশের দ্বার টি বেশ নিচু । মাথা অনেকখানি নামিয়ে তবে মন্দিরে প্রবেশ করা যায় । আসলে ভগবানের মন্দিরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নত মস্তকেই করতে হবে । এমন ভাবনা থেকেই মন্দিরগুলির দ্বার যথেষ্ট নীচু করবার রেওয়াজ আছে । বালক নাথ মন্দিরেও সেই একই ভাবনা থেকেই এমনটি হয়েছে জানা গেল । লিঙ্গ রূপধারী বাবা বালকনাথকে এখানে তাম্র পাত দিয়ে সম্পূর্ণরূপে মুড়িয়ে রাখা আছে। বাবার মাথার উপরের সর্প টি অবশ্য পেতলের তৈরি । জানালেন বিবেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেই । শিবরাত্রি এবং নীল ষষ্ঠীর দিনে মন্দিরে হোম জ্বালানো হয় । ত্রিশূল এর মাথায় আগুন জ্বালিয়ে পরিবারের সদস্যরাই এই হোম প্রজ্জ্বলন করেন ।

বহরমপুরের খাগড়ার বালকনাথ তলা শিব মন্দিরের বাবা বালক নাথ প্রাচীন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কুল দেবতা হলেও  জেলাসদর বহরমপুরের প্রাচীন শিব মন্দির হিসেবে বালক নাথ মন্দিরের গুরুত্ব অনেক খানি ।