চোখে জল নিয়ে বাঙালির চিরন্তন প্রার্থনা “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে” লিখলেন বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ ঠাকুর থাকবে কতক্ষন, ঠাকুর যাবে বিসর্জন – এর সুর তুলে দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় পরের বছরের | আর প্রস্তুতির সাথে সাথে সকলের কানে সুর ভেসে ওঠে, ‘যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী, উমা বড়ো দুঃখে রয়েছে ‘| বাংলার সকল দেব দেবী আমাদের আবেগ প্রবন বাঙালির ঘরের ছেলে মেয়ে, আবার কারোর কাছে মা |

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার সুরে আশ্বিনের সকালে যেমন দুর্গোৎসবে শুভসূচনা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি দশমীর ঢাকের বোলের সাথে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে আপামর বাঙালির মন | দশমীর সন্ধ্যায় ঢাকের তালে কোমর দুলে ওঠে সকলেরই | চোখের কোনে জল থাকলেও আনন্দের সাথে বিদায় দেয় গৌরীকে | বিদায় পর্বের পর প্রত্যেক বাঙালি যথাস্থানে প্রণাম, ছোটদের স্নেহ ও ভালোবাসার সাথে নতুন সূচনা করে | বর্তমানে এই দুর্গোৎসব শুধুমাত্র হিন্দুদের নয় | দুর্গোৎসব সকল বাঙালি জাতির | উৎসবের চারটি দিন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে একসাথে ঠাকুর থাকুক দেখা, খাওয়া-দাওয়া,বিভিন্ন রীতি রেওয়াজ এর মধ্যে দিয়ে আনন্দের সাথে সময় কেটে যায় কিভাবে আমরা কেউই টের পাইনা |

যে উমা আমাদের সকলের ঘরের মেয়ে হিসেবেই কুমারী রূপে পূজিত, তার বিদায় বেলায় চোখে জল আসে সকলেরই | নবমী নিশি থেকে সকলের মনে বাজতে থাকে – ‘ সকাল বেলার আলোয় বাজে বিদায় ব্যথার ভৈরবী ‘ | যে পুরোহিত মশাই এই চারদিন ধরে দেবীর পূজা করেন, তার চোখেও জল আসে | ‘আসছে বছর আবার হবে’ এই সুর তুলেই শুরু হয় পরের বছরের প্রস্তুতি |পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দুর্গা পুজো ষষ্ঠী পড়েছে পয়লা অক্টোবর | বছর না ঘুরতেই উমা আসবে তাঁর চার সন্তান নিয়ে | আর চিরন্তনী বাঙালী সারা বছর এই প্রার্থনাতে থাকে – “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে |”

করুণ রসে সিক্ত বাঙালি চিরকালই আবেগ প্রবণ | চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময়ী রূপকে বিদায় দিতেও সকলের মন কোথাও গিয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে | মনে মনে “বাজিলো কাহার বীনা “- র টঙ্কারে অশুভ নাশিনী “ঐ ভুবন মোহিনী ” কে সাদরে শারদ আমন্ত্রণ জানায় অগ্রিম |