চালতিয়ার রাজবংশীদের দেবী পুজো যেন নারীশক্তিরই প্রতীক 

Published By: Madhyabanga News | Published On:

চন্দনা দত্ত: চালতিয়ার রাজবংশী পাড়া দুর্গা পুজো কমিটির চতুর্থ বর্ষের দুর্গা পুজো মণ্ডপে চলেছে  পুজোর আয়োজন৷। তবে না , তেমন কিছুই আড়মবর আতিশয্য নেই মণ্ডপে । কেবল একটি সাধারণ প্যান্ডেলে মায়ের পুজোর অতিসাধারণ আয়োজন । তবে হা , পুজোর ন্যূনতম আয়োজনের যা কিছু ঘাটতি পূরণ করেছে রাজবংশী পাড়ার প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন বাসিন্দার আত্মিক যোগদান । মনের প্রানের আনন্দ , এমনটাই জানা গেল মহিলা পুজো কমিটির সভাপতি শিবানী রাজবংশীর কথা থেকে । মহা ষষ্ঠীর দিন পুজোর উদ্বোধন করেছেন চালতিয়া রাজবংশী পাড়া মহিলা পুজো কমিটির সদস্যরা । উদ্বোধনের দিন এলাকারই ৮০ জন দুস্থ মহিলাকে বস্ত্রদান করেছে চালতিয়া রাজবংশী পুজো কমিটি । এভাবেই তাঁরা গরিব দুঃখী সকলের সাথে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে চেয়েছেন । জানালেন কমিটির সদস্যরা । সন্ধিপুজোর প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করার মাঝেই আরও অনেক কথা জানালেন শিবানী রাজবংশী । জানা গেল , রাজবংশীদের বুকভরা দীর্ঘশ্বাস আর বেশকিছু বঞ্চনার কথাও ।

চালতিয়া রাজবংশী পাড়ার প্রায় সব বাসিন্দাই দিন মজুরের কাজ করেন । পরিবারের মহিলারা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন পেশা হিসেবে । পুরুষেরা কেউবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন । কেউ ভ্যান চালান । কেউবা গ্যাসের ওভেন সারাইয়ের কাজ করেন । আর্থিক অবস্থা তাঁদের মোটেই ভালো নয় । পাশাপাশি এই পাড়ার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করবার তেমন উদ্যোগেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে৷। অনেক ছেলে-মেয়ে ইচ্ছে থাকলেও বিশেষ পড়াশোনা করতে পারে না , মূলত আর্থিক অসঙ্গতির কারণেই । দিনের শুরুতেই পরিবারের বাবা-মা কে কাজে বেরিয়ে যেতে হয় রুটি-রুজির টানে । সন্তানেরা একপ্রকার দিকভ্রান্ত অবস্থাতেই একটু বড় হয় তারপরে তারাও নেমে পড়ে রোজগারের আশাতে ।

তবে এরই মাঝে দু একজন কিছুদূর লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও কোন চাকরি বাকরি না পেয়ে শেষমেষ তারাও দিন মজুরের কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে । এসব নানা কারণেই একবুক হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস নিয়েই জীবন যুদ্ধে দিন কাটান রাজবংশীরা । তবে তার সাথে দোসর হিসেবে আরও একটি বিষয় রাজবংশীদের পীড়া দেয় । তা হল সাধারণদের তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ । আর ঠিক এই জায়গা থেকেই নাকি রাজবংশীরা চালতিয়া তে দশভূজা মা কে আবাহনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন । সালটা ২০১৯ । তিন বছর বছর আগের এমনই একটি শারদীয়া তে রাজবংশী মহল্লাতে দেবী দুর্গা সপরিবারে আসেন । শুরু হয় তাঁদের পুজো । সেই কথা বলতে গিয়ে আজও মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় বিষাদ ছেয়ে গেল শিবানী রাজবংশীর মুখে । কেবলমাত্র পুষ্পাঞ্জলী দেওয়া ছাড়া আর কোন যোগ্দানই করতে পারতেন না শিবানী রাজবংশীরা পাশের পাড়ার দুর্গাপুজোর মণ্ডপে । তাই মুখ ভার করেই তাঁরা কাটাতেন ২০১৯ এর
আগের বছর গুলিতে দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে ।
এরপর অবশেষে তাঁরা নিয়ে ফেলেন সিদ্ধান্ত রাজবংশী পাড়াতেও দুর্গাপুজো শুরু করবেন। আর এই দায়িত্ব নিলেন রাজবংশী পাড়ার মহিলারা । তৈরি হল নারীশক্তি মহিলা পুজো কমিটি । তাঁদের আয়োজনে শুরু হল দেবী পুজাে রাজবংশী মহল্লাতে ।

এবছর চতুর্থ বর্ষের পুজোমণ্ডপে খুব আনন্দে পুজোর সব কাজকর্ম নিজেরাই করছেন রাজবংশী পাড়ার ঝর্ণা, স্বপ্না , লতিকা আর তমসারা । তবে গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন তাঁরা প্রায় সকলেই । তাই গৃহস্থের বাড়ির নিত্য কাজ সেরে প্রায় ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছেছেন পুজোমণ্ডপে তাঁরা , আর এক বাধভাঙ্গা আনন্দে একান্ত নিজেদের পূজোর কাজে মেতে উঠছেন । অসুর দলনী দশভুজার আরাধনায় রাজবংশী মেয়েরাও যেন মাতৃশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চালতিয়ার রাজবংশী পাড়াতে ।