মেশিনের চাকায় রোজগার, প্রতিদিন বীরভূম থেকে বহরমপুর আসেন লাল মোহম্মদ

Published By: Madhyabanga News | Published On:

রাহি মিত্রঃ  বহরমপুর ১২  থেকে ১৩  কেজি ওজনের একটা লোহার  প্যাডেল  ঘোরানো মেশিন কাঁধে নিয়ে সারা বহরমপুর শহর চষে বেড়ান বছর পঞ্চাশের লাল মোহম্মদ  ।  সাথে একটা সুরে হাঁক ও  দেন, ”  হোচা  বঁটি  চাকু ধার হবে” ।

কাঁধের উপর শান মেশিন নিয়ে লাল মোহাম্মদ

সেই কাকভোরে আলো ফুটলেই  বীরভূমের লোহাপুর স্টেশন এলাকা থেকে রওনা দেন লাল মোহাম্মদ বাসে চেপে  ,   কাঁধের    উপর শান মেশিন নিয়ে  ।  কারণ এই শান মেশিন এর লোহার চাকা যত ঘুরবে লাল মোহাম্মদের দৈনিক রোজগার ততই বাড়বে।

বীরভূম জেলার লোহাপুর স্টেশন এলাকার বারাকসবা পাড়া গ্রামে স্ত্রী  দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে পরিবার লাল মোহাম্মদের । দুই মেয়ে বীরভূমের নলহাটি কলেজে পড়ে ।  ছেলে   লোহাপুর  হাইস্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে ।  যদিও লাল মোহাম্মদ তেমন লেখাপড়া শেখেন নি । তবে তিনি চান   ছেলে মেয়েরা অনেক লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি করুক ।  এই তাগিদ থেকেই  তাঁর   এমন  রোজগারের ধরন । এমনটাই  জানালেন  লাল মোহম্মদ  ।

লাল মোহম্মদ নিজের বুদ্ধি দিয়েই একটি শান মেশিন বানিয়ে নেন  । আর তা নিয়ে শহর এলাকার ঘরে ঘরে মানুষের বঁটি , ছুরি,  কাঁচি হেসো ,  দা  ইত্যাদিতে   ধার দিয়ে বেড়ান   । বীরভূম থেকে প্রতিদিন ভোরের প্রথম বাসে বহরমপুর চলে আসেন    তিনি । এরপর সারাদিন ধরে শহরের অলিতে গলিতে আনাচে-কানাচে তাঁর  ১২   থেকে  ১৩    কেজি ওজনের শান মেশিন কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ান ।  শান  দেন । রোজগার করেন ।  তাঁর  কথাতেই জানা গেল প্রতিদিন ৪০০  থেকে ৬০০  টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়  তাঁর  । তার মধ্যে ডেইলি প্যাসেঞ্জার এর কার্ড করা আছে বাসে ।  ভাড়া বাবদ তাঁর দিন  প্রতি লাগে  ১০০   টাকা করে।   আগে যেটা  ৬০   টাকাতেই হয়ে যেত।

লাল মোহাম্মদের শান মেশিন

এছাড়াও লাল মোহাম্মদ ভাগে চাষের কাজ করেন ।  লকডাউনের দিনগুলিতে   প্রথমবার একমাস  এবং দ্বিতীয়বার  ১৬   দিন বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি   লাল মোহাম্মদ ।    তবে সেই সব দিনে ভাগে জমি চাষের কাজ করে সংসার চালানোর খরচ তুলেছিলেন ।  জানালেন  লাল মোহাম্মদ নিজেই।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লাল মোহাম্মদ কাঁধে সান দেওয়ার মেশিন বহন করে শহর বহরমপুর এ ঘুরে বেড়াচ্ছেন  । শান দিয়ে বেড়াচ্ছেন  গৃহস্থের দৈনন্দিন ব্যবহারের বঁটি , কাঁচি,  ছুরি তে ।   যা থেকে কুড়ি টাকা ৩০   টাকা করে নেন   তিনি  ।

লাল মোহম্মদের এই পেশা হয়তো বা তাঁর জীবদ্দশাতেই শেষ হয়ে যাবে।   কারণ তিনি চান না যে তার ছেলেরা ভবিষ্যতে এই পেশাতে আসুক।   দিন পরিবর্তন হচ্ছে।  পরিবর্তন হচ্ছে চিন্তাভাবনার ।  তাই কাঁধে শান মেশিন বহন করে শহর ঘুরে ঘুরে রোজগার আর লাল মোহাম্মদের  পরের প্রজন্ম যে  করবে না ,  তা তিনি  নিজেই জানিয়ে দিলেন ।