গ্রামে গিয়ে আবৃত্তির অ-আ-ক-খ শেখাবে বাচিক শিল্পচর্চার মুক্ত দিগন্ত, দশ বছরে নয়া ভাবনা

Published By: Madhyabanga News | Published On:

MadhyabangaNews : তখনও ঊষা। আবৃত্তির সকালের আলো তখনও মরমে পড়েনি। সদ্য কৈশোরের বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস অন্তরে চাপা রয়েছে। একদিন বহরমপুর শহরের কৃষ্ণনাথ কলেজের মাঠ গমগম করে ঊঠল কী এক অনির্বচনীয় ছন্দে। অপার্থিব! এমনও হয়। বাড়ি ফিরে এসেও ভোলা যায় না। কানের ভিতরে, মনের ভিতরে শুধুই অনুরণন । কণ্ঠ দিয়ে এমনও করা যায়? ‘কামাল পাশা’ আবৃত্তি শুনে ওইটুকু বয়সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল ছেলেটি। ভাবতে ভাবতে সেই ছেলেটি এক পা, দু’পা করে পৌঁছে গেল আবৃত্তির অঙ্গনে । একসময় ১৯৭৮ সালে আবৃত্তির জন্যে বহরমপুরে অমৃতকুম্ভ দল তৈরি করে তাঁর বড় আকারে যাত্রা শুরু। তারপর গঙ্গার স্রোতে অনেক শিল্প ঢেউ খেলেছে ।পরবর্তীতে ২০১৩ সালে তাঁর তৈরি প্রতিষ্ঠান ‘বাচিক শিল্পচর্চার মুক্ত দিগন্ত’ বর্তমানে ১০ বছরে পা দিয়েছে। সেই উপলক্ষে সারা বছর ধরে হবে উদযাপন।
এক দশকের নতুন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন তিনি চাইছেন, শহর ছাড়িয়ে গ্রামের প্রান্তিক এলাকায় আবৃত্তিকে ছড়িয়ে দিতে।মুর্শিদাবাদ জেলার অগ্রগণ্য ওই আবৃত্তি শিল্পী অভিজিৎ সরকার বহরমপুর শহরে গোরাবাজারের বাড়িতে বসে তাঁর আগামী স্বপ্নের কথা জানালেন। তিনি বলছিলেন, এখন নতুন ফর্মে আবৃত্তি হচ্ছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অন্যরকমভাবে ঊপস্থাপনা হচ্ছে।কবিতার সঙ্গে অন্যান্য অনুষঙ্গ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার এখানে ২০০ ছাত্র ছাত্রী নিয়মিত আবৃত্তি শেখে। কাটোয়া, নওদা সহ দূর থেকে অনেকে আসে।তবে এটা ঠিক, বাচিক শিল্প আগের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে। এখন আবৃত্তি আর মঞ্চে উঠে একা পারফর্ম করে গেলাম, বিষয়টি সেই জায়গায় নেই। তাতে নাটক জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে মঞ্চেও অন্য নাটকীয় কিছু ঘটছে।
আমরা আগ্রহীদের গ্রামে গিয়ে শেখাতে চাইছি। সেসব এলাকার প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তিগতভাবে কেউ এগিয়ে এলে আমরা সহযোগিতা করব। আবৃত্তি শিখে কলকাতামুখী হওয়া নয়। আমরা বিপরীত পথে হাঁটি। এর জন্যে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে প্রস্তুতি।
বাচিক শিল্প চর্চার মুক্ত দিগন্ত-র দশ বছর অর্থাৎ মুকুটে যেন দশ পালক। তাকে স্মরনীয় করে রাখতে এই বছর ও আগামী বছর জুড়ে দশটি বাচনিক শিল্পের আসর হচ্ছে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। হবে ছোট-বড় আসর। ২৮ আগস্ট এই নিয়ে তথ্যচিত্র সহ একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হচ্ছে । প্রথম অনুষ্ঠানটি হয়েছিল কয়েক মাস আগে ১ মে। শেষ অনুষ্ঠান হবে আগামী বছর ২২ জানুয়ারি। বাচিক শিল্প চর্চার মুক্ত দিগন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রকাশ করা বইতে লেখা রয়েছে, “চারিদিক খোলা মাঠে যেমন আমাদের শৈশব সুযোগ পেলেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো দৌড়য়। ঠিক তেমনি বাচিক শিল্প চর্চার আসরে ছোট থেকে বড় সকলের স্বর কলতানের মতো গুঞ্জিত হয়”। কেএন কলেজের সেই মাঠ এখন হয়েছে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ। প্রাক্তন সরকারি চাকরিজীবী অভিজিৎবাবু এখনও বাড়ি থেকে বসেই সেই মাঠে প্রথম শোনা আবৃত্তি শুনতে পান। সেই অনুরণন তিনি ছড়িয়ে দিতে চান বাংলার সেভাবে সংস্কৃতির আলো না ফোটা কৈশোরগুলির আঙিনায় । ছোট্ট ছেলে মেয়েদের মূখে আধো বুলিতে কবিতা শুনতে কে না ভালোবাসেন ? আবৃত্তি তো সেই ঋষিদের আমল থেকেই চলে আসছে। শিক্ষক অভিজিৎ শ্রুতিমধুর কণ্ঠস্বরকে পরিশীলিত করতে গ্রামে গঞ্জে প্রশিক্ষণ দিতে চান। তার প্রতিষ্ষ্ঠান সেখানেই সার্থক হবে।