মুর্শিদাবাদের আনাচা কানাচে লেখা রয়েছে ইতিহাস আর গল্পকথা। অতিমারীর তাড়নায় পুজো প্যান্ডেলের ভিড় এড়িয়ে “গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর”এর খোঁজে বেড়িয়ে ঘুরলেন মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান । লালবাগ আস্তাবলের মোড় থেকে, টোটো করে গেলেন কাটরা মসজিদ, নসিপুর রাজবাড়ী, কাঠগোলা বাগান, ও জগৎশেঠ হাউস। কী দেখলেন সেখানে ? লিখলেন দেবাশিষ পাল। আজ কাটরা মসজিদ পর্ব।
নীরস ইতিহাসকে রসাশ্রিত করে তোলার চেষ্টায় থাকবো।প্রথমে আসলাম কাটরা মসজিদ। মুর্শিদকুলি জাফর খাঁ মুর্শিদাবাদে বাংলার রাজধানী স্থাপন করলে, তাঁরই নাম অনুসারে এর নাম হয় মুর্শিদাবাদ। পূর্বে ‘মুখসুদাবাদ’ নামে একটি সামান্য নগর ছিল।
প্রথমে আসি কাটরা মসজিদ এর কথায়, কাটরা শব্দে “গঞ্জ বা বাজার” বোঝায়। কাটরা মসজিদ নির্মাণ সম্বন্ধে প্রচলিত ইতিহাস হলো এই-“মুর্শিদকুলি জাফর খাঁর বার্ধক্য উপস্থিত হওয়ায় এবং শীঘ্র শীঘ্র স্বাস্থ্যভঙ্গ হইতেছে জানিয়া, তিনি সমাধি মন্দির নির্মাণের আদেশ দেন। তথায় একটি মসজিদ ও কাটরা বা গঞ্জ স্থাপিত করিবার কথা ও থাকে। উক্ত কাটরা হইতে এক্ষণে স্থানটির নাম কাটরা হইয়াছে।মোরাদ ফরাস নামে একজন সামান্য অথচ বিশ্বস্ত কর্মচারী সেই কার্যের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হয়।” ১৭২৩/২৪ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়।
মক্কার সুপ্রসিদ্ধ মসজিদের অনুকরণে এর নির্মাণ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এখানে মিনার, চৌবাচ্চা, ইন্দারা সহ, মসজিদ চত্বরে চারিপাশে মুসাফের ও কোরাণাধ্যায়ীদের বসবাসের জন্য বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গৃহ তৈরি করা হয়েছে। মুর্শিদকুলি খাঁ একজন আনুষ্ঠানিক ও নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। তাই তিনি মসজিদের প্রবেশদ্বারের সোপানাবলীর নীচে একটি প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করেন এবং বিনয়সহকারে বলেন যে সেখানে যেন তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় -“উপাসকদিগের পদধূলি যেন তাঁহার বক্ষস্থলের উপর পতিত হয়।”
মসজিদ চত্বরে একসঙ্গে দুই হাজার জন নামাজীর নামাজ পড়ার আসন বিভিন্ন রকম ডিজাইনে বাংলার ছোট ইঁট দ্বারা তৈরি করা রয়েছে। মাঝের উঁচু গম্বুজ টি ভূমিকম্পে ভগ্ন। বেশিরভাগ স্থানই জঙ্গলাকীর্ণ ও ভগ্নদশা এগুলির সংস্কার অত্যাবশ্যক।
তথ্যসূত্র:-১) “মুর্শিদাবাদ কাহিনী”- নিখিলনাথ রায়; তৃতীয় মুদ্রণ-২০১৮;প্রকাশক-৩৮/২ বাংলাবাজার, ঢাকা। ২)বঙ্গদর্শন, ইতিবাচক বাংলা (ওয়েবসাইট)
মতামত এবং তথ্যের দায়িত্ব লেখকের নিজস্ব।