কিরীটেশ্বরী মন্দিরের সাথে জড়িত নবাব বাড়ির অন্দরমহলও Murshidabad Tourism Kiriteswari Temple

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বেদান্ত চট্টোপাধ্যায়ঃ  পর্যটনের শহর মুর্শিদাবাদে শীত পড়লেই ভিড় বাড়ে পর্যটকদের | তবে মুর্শিদাবাদের পর্যটন বলতে পর্যটকরা সচরাচর দেখেন হাজার দুয়ারী ও তৎ সংলগ্ন অঞ্চলের কিছু পুরোনো ইতিহাস জড়িত রাজবাড়ি | যারা মুর্শিদাবাদ ঘুরতে আসেন তারা অনেকেই জানেননা এই মুর্শিদাবাদেই রয়েছে সতী পিঠ কিরীটেশ্বরী | এই কিরীটেশ্বরী মন্দিরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস |

পৌরাণিক মতে দক্ষ যজ্ঞে শিবের অপমান শুনতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করেন | সতীর দেহত্যাগে শিব সতী দেহ কাঁধে করে প্রলয় নৃত্য শুরু করে | তখন ভগবান বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড বিখন্ড করে | পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই সব দেহ খন্ড | জানা যায় মুর্শিদাবাদের ভাগীরথীর পূর্ব পারে পড়ে সতীর কপাল/কিরীট| সেই থেকে প্রচলিত হয় ঐ জায়গা কিরীটেশ্বরী নামে |রাঢ় বাংলার প্রাচীন পীঠস্থানগুলির মধ্যে কিরীটকণা অন্যতম; যদিও বর্তমান মন্দিরটি বেশি পুরানো নয়। এই মন্দিরের নিকটে একাধিক মন্দির আছে। তান্ত্রিকমতে, এখানে দেবী দাক্ষায়ণী সতীর ‘কিরীট’ অর্থাৎ মুকুটের কণা পতিত হয়েছিল। যেহেতু এখানে দেবীর কোনও অঙ্গ পতিত হয়নি, তাই এই স্থানকে অনেক তন্ত্রবিদ্ ‘পূর্ণ পীঠস্থান’ না বলে ‘উপপীঠ’ বলে থাকেন।

ঐতিহাসিক মতে এই কিরীটকণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রানী ভবানী |এখানে রাজা রাজবল্লভের প্রতিষ্ঠিত শিবমন্দিরও এখানে আছে। গ্রামের মধ্যে গুপ্তমঠ নামে এক নতুন মন্দিরে কিরীটেশ্বরীর পূজার ব্যবস্থা আছে।নাটোরের সাধন-অনুরাগী রাজা রামকৃষ্ণ বড়নগর থেকে এখানে আসতেন। এখনও মন্দির-প্রাঙ্গনে দুটি পাথরখণ্ড দেখা যায়, যার উপর বসে রাজা রামকৃষ্ণ সাধনা করতেন। কথিত আছে মুর্শিদাবাদের নবাব মীর জাফর আলী খান কুষ্ঠরোগগ্রস্ত হলে জীবনে তার হিন্দু দেওয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী কিরীটেশ্বরী দেবীর চরণামৃত পান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এখানেই কিরীটেশ্বরী মন্দিরের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ নবাব পরিবারের আখ্যান।

মন্দিরে পূণ্যার্থীর ভিড়

ওখানকার যে পূজারীরা রয়েছেন, তারা মন্দিরের বিবরণ দিতে গিয়ে জানান এই মন্দির তৈরী হয়েছে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে | তবে বর্তমানে মূল মন্দির প্রায় অবলুপ্তির পথে | তাঁর অবস্থা প্রায় ভগ্নপ্রায় | এখন ঐ স্থানেই রয়েছে দুটি মন্দির | স্থানীয় পূজারীরা দুটি মন্দিরকেই প্রাচীন মন্দির বলে দাবি করেন |

কিভাবে যাবেন কিরীটেশ্বরী, লালবাগ স্টেশন থেকে টোটো /অটো রিজার্ভ করে 3 মাইল যেতে হয় | আবার কেউ বহরমপুর বাস স্ট্যান্ডে নেমে অটো করে যেতে পারেন বহরমপুর সদর ঘাট | সেখান থেকে ঘাট পার হয়ে ওপারে গেলেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক টোটো | খুব ভাগ্যবান হলে বাস ও পেয়ে যেতে পারেন | সব মিলিয়ে এক পৌরাণিক ও অলৌকিক অনুভূতি পেতে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন কিরীটেশ্বরী থেকে |