করোনাকে হারাতেই হবে- অঙ্গীকার হোক দৃঢ়

Published By: Madhyabanga News | Published On:

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ কোভিড ১৯- নামটার সাথে আমাদের পরিচিতি কয়েক মাসের। আর তাতেই আমরা টের পেয়েছি এর প্রভাব, বিস্তার কতটা ভয়ঙ্কর। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে। অস্থির হয়ে উঠেছে মানুষের মন। যে করোনা আজ ঘরবন্দি করেছে মানুষকে। নতুন নতুন বিধি নিষেধের গণ্ডি কেটেছে আমাদের চারপাশে। এমন অতিমারির সাক্ষী হবে গোটা বিশ্ব- যা কল্পনাও করা যায় নি। ভারতবর্ষে প্রবেশের আগেই অর্থাৎ ২০১৯ এর ডিসেম্বরেই চিনের উহানে উঁকি দেয় এই মারণ ভাইরাস। তারপর একের পর এক দেশে ছড়াতে থাকে সংক্রমণ। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে ভারতবর্ষে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে জেলায়। হাচি কাশি- ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ানো এই ছোঁয়াচে ভাইরাসের শৃঙ্খল ভাঙতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সরকারি ভাবে। ২৪ শে মার্চ থেকে শুরু হয় লকডাউনের পালা। এরপর দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকে গোটা দেশ। সম্পূর্ণ শাটডাউনের মধ্যেই অন্যান্য রাজ্য থেকে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে নেওয়া হয় একাধিক উদ্যোগ। ঠিক যেমন মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ জেলা- যে জেলায় অধিকাংশ তরুণ যুবক ভিন রাজ্যে বা দেশে পরিযায়ী শ্রমিক। সেই শ্রমিকদের স্পেশ্যাল ট্রেন প্রথম জেলার মাটিতে এসে দাড়ায় গত ৬ ই মে। বহরমপুর কোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে কেরালা থেকে পরিযায়ীদের ট্রেন আসে। তখন চিন্তা বাড়িয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বিষয়টি। পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর শংকা দেখা দেয়। ফেরত আসা শ্রমিকদের হোম কোয়ারেনটাইনে থাকতে বলা হয়। এরপর কাটে সময়, একের পর এক শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন এসে পৌছয় জেলায়। গত ৯ ই মে মুর্শিদাবাদ জেলায় চার জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে।

জঙ্গীপুরে ভিন রাজ্য থেকে আসা ৩ শ্রমিকের সংক্রমণের সাথে এক স্বাস্থ্য কর্মীর সংক্রমণে উদ্বেগ বাড়তে থাকে জেলায়। অন্যদিকে সালারের এক বাসিন্দা যিনি কলকাতায় চিকিৎসাধীন থাকাকালীন করোনা আক্রান্ত হন এবং মারা যান। স্বাস্থ্য দপ্তর এবং প্রশাসন আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলে। মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর থেকে জেলার আনাচে কানাচে খোঁজ মিলতে থাকে আক্রান্তদের। গ্রাম থেকে শহরে করোনা থাবা বসায়। শুধু পরিযায়ী শ্রমিক নন, স্বাস্থ্য কর্মী থেকে চিকিৎসক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে আম জনতা সংক্রমিত হতে থাকেন। করোনা আক্রান্তদের থেকে সংস্পর্শে আসা মানুষজনের জন্য তৈরি হয় কোয়ারেনটাইন সেন্টার, একটি বানজেটিয়ায় এবং অপরটি মাতৃ সদন। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলায় করোনা চিকিৎসার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে বহরমপুর মাতৃ সদনকে কোভিড হাসপাতাল করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলে করোনা আক্রান্তদের। প্রথমে ১০০ টি বেড থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বেড সংখ্যা। গ্রাম থেকে শহর, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে করোনাকে রুখতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বার্তা দেওয়া হয়। তবে উদ্বেগ কিন্তু বাড়তেই থাকছে। কেননা, অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি এসে মুর্শিদাবাদ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৩১ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনও অবধি ২১ জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে এই জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন এবং জেলার বাইরে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণকে রুখতে বিশেষজ্ঞদের একটাই পরামর্শ টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট। বর্তমানে সোয়াব টেস্টের এর সাথে মুর্শিদাবাদ জেলায় হচ্ছে, ভি আর ডি এল টেস্ট এবং র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট। একদিকে যেমন টেস্ট বেড়েছে, অন্যদিকে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতিতে এসেও আশার আলো দেখাচ্ছে আক্রান্তদের সুস্থতার হার, মুর্শিদাবাদ জেলায় এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০৩৩ জন। করোনা আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে ফ্রন লাইনে দিন রাত এক করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসক, মানুষকে সচেতন করতে ঝাঁপিয়ে পরছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্মীরা। লক্ষ একটাই করোনা থেকে মুক্তি, করোনাকে হারানো।

করোনা মানেই মৃত্যু নয়, করোনা মানেই অমানবিক আচরণ নয়- করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে একজোট হয়ে। করোনা জুদ্ধকে জয় করার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে আমাদের। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও করোনার হাত থেকে মুক্তি পেতে, স্বাধীনতার স্বাদ পেতে আরও সচেতন হই আমরা, সতর্ক হই।