এভাবেও ফেরা যায় ! বহরমপুর থেকে আসাম ফিরলো তরুণী

Published By: Madhyabanga News | Published On:

        প্রিয়ঙ্কা দেব বিশ্বাস : বহরমপুর  ২৪ শে ফেব্রুয়ারী –    আসাম থেকে বহরমপুরের জার্নি।  আর পাঁচজনের থেকে যে জার্নিটা একাবারেই আলাদা। উন্মাদ, উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় নিরুদ্দেশ হওয়া এক তরুণী দীর্ঘ এক মাস ধরে বহরমপুরে। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চলে চিকিৎসা। এখানেই শেষ নয়, নিরুদ্দেশ হওয়া মানসিক ভাবে অসুস্থ তরুণীকে তাঁর আত্মীয়দের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জও নেওয়া হয়। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোঁজ জারি রাখেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী। অবশেষে প্রায় একমাসের লড়াই এল সফলতা। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরলো ঐ তরুণী।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ শে জানুয়ারি ফালাকাটা  থানার পুলিশ আলিপুরদুয়ার এসি  জি এম এর নির্দেশ নিয়ে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে পাঠায় তরুণীকে। সেই সময় বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী। সমস্ত নিয়ম মোতাবেক যথারীতি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রোগীকে। উন্মাদ অবস্থায় পরিচয় কিছুই বলতে পারেনি সে। এরপর চিকিৎসা শুরু হতেই ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। শুরু দ্বিতীয় লড়ায় কি ভাবে ঐ তরুণীকে বাড়ি ফেরানো যাবে।

বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী জানান ‘মেয়েটি সে সময় বিশেষ কিছুই বলতে পারছিল না তার পরিচয়। সম্বল বলতে সেই অস্পষ্ট নাম ” ঘুজাণ বা ঘুজানট ” , আর্ সম্বল গুগল বাবাজি । গুগল বাবাই সন্ধান দিলেন গুইজান নামের এক জায়গা আছে তিনসুকিয়া জেলায়, আসাম রাজ্যে। সে কথা বলতেই মেয়ের চোখ জ্বলে – হ্যাঁ ঠিক, তিনসুকিয়াই তো তার বাড়ি , একটা বড় রাস্তার ঠিক পাশে । আরো চেষ্টায় তার আবছায়া মনে পড়ে বালুপারা নামে তার গ্রাম । মনে পড়ে কোনো হুসেন চাচার নাম তার ঠিক পাশের বাড়িতে , যাকে সে মেসোমশাই বলে ডাকে।

ব্যাস , এর পরের গল্প খুব সাদামাটা । গুগল ঘুরিয়ে পাওয়া গেলো গুইজন থানার নম্বর, বেশ কয়েক বার চেষ্টায় একজন ASI পদ মর্যাদার পুলিস আধিকারিকের সাথে কথা , সনির্বন্ধ অনুরোধ আর্ তার উত্তরে তার কথা ” হ্যাঁ ঠিক, বালুপাড়া আছে তো গুইজন্ থানায় , হাইওয়ের ঠিক পাশে ! যাকে বলে দুইয়ে দুইয়ে চার !

তারপর আর্ কি । হুসেন মেসোমশাই এর কাছে খবর গেলো , তিনি এলেন , হারানো মেয়েকে দেখে আবেগে বিহ্বল হলেন,  সাথে বিহ্বল হলেন সেই সব সিস্টার দিদিমণিরা যাদের সাহায্য ছাড়া এই নাটকের মিলনান্তিক সমাপন সম্ভব ছিল না ।

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে,অবশেষে মিলেছে তরুনীর পরিচয়।   আজ নিজের আত্মীয়ের সাথে বাড়ি ফিরে গেল সে। এখন আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ। নিয়মিত ওষুধও খাচ্ছে। বাড়ি ফেরার আগের মুহূর্তে ডাঃ রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী বেশ কিছুক্ষন কথাও বললেন তরুণী ও তাঁর আত্মীয়ের সাথে। বাড়িতে থেকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, সুস্থ হওয়ার জন্য অভিভাবকের মতোই তরুণীকে নির্দেশও দিলেন।  নিরুদ্দেশ হওয়া মেয়েকে ফিরে পেয়ে স্বস্তিতে তরুণীর মেসো। কান্না ভেজা চোখে বাড়ি ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে নিয়ে।