এবার পুজোয় বাড়ি ফিরল না কান্দির প্রীতম, চারিদিকে আলোর রোশনাইয়ে অন্ধকার সেই বাড়িতে

Published By: Madhyabanga News | Published On:

পবিত্র ত্রিবেদীঃ ‘মা আমি এবার দুর্গাপুজোয় বাড়ি যাবো। বাড়ি গিয়ে ঘর প্লাস্টার করাবো। জামা কাপড় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাব’। মণিপুরে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় মাকে ফোনে এই কথাই বলেছিলেন কান্দির শহীদ জওয়ান প্রীতম কুমার দত্ত। মা দুর্গার আরাধনায় শারদীয় উৎসবে এখন মেতে উঠেছে সারা রাজ্য। দু’বছর করোনা অতিমারির বিভীষিকার পরিস্থিতি পার করে দিকে দিকে এবার আলোর রোশনাই। ঠিক তখন কান্দি মহকুমার বালিয়া গ্রামে দত্ত পরিবারে সবকিছু অন্ধকারে আচ্ছন্ন। একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁরা।

পুজোর কোনও আনন্দ সেখানে নেই। তাঁর মা সোমা দেবী বললেন, স্বরূপ( প্রীতমের ডাকনাম ) বলেছিল এবার দুর্গা পুজোতে বাড়ি আসবে। বাড়ি-ঘর প্লাস্টার করার কথা ছিল। আগের বছর দুর্গা পুজোতে আসতে পারেনি। এবার আসবে ঠিক ছিল। পুজোর সময় ছেলেকে নিয়ে প্রতিবার সিউড়িতে ওর মামার বাড়ি যেতাম। এখন আর আর যেতে ইচ্ছে করে না কোথাও। বাইরেই বের হতে মন চায় না। শুধু মনে পড়ছে, আমাকে প্রীতম 29 শে জুন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ফোন করে বলল, পরে ফোন করছি। আর ফোন আসেনি। প্রীতমের বাবা প্রভাত দত্তের কথায়, ওর কথা ভেবে ভেবে রাতে ঘুম আসে না।  দেশের সেবায় নিয়োজিত প্রীতমের জন্য গর্বিত তাঁর পরিবার। তবুও ছেলেকে হারিয়ে দত্ত পরিবারের সব আনন্দ যেন মলিন হয়ে গিয়েছে।

বাড়িতে প্রত্যেক দেওয়ালে একটি করে তাঁদের আদরের প্রীতমের ছবি টাঙিয়ে রেখেছেন। বাড়ির বাইরেটা কেমন যেন শুনশান। শ্যাওলা জমেছে দিকে দিকে। দেখলেই বোঝা যাবে একটা মনমরা পরিবেশ। পরিবারের লোকেরা বলছিলেন, মাস দুয়েক আগে গত 30 শে জুন প্রভাত দত্তের বাড়িতে খবর আসে তাঁর একমাত্র ছেলে টেরিটোরিয়াল আর্মির 107 ব্যাটেলিয়নের প্রীতম কুমার দত্ত নিখোঁজ। পরে জানা যায় মণিপুরে রেল লাইনের কাজের পাহারায় থাকার সময় ধসে প্রাণ হারান তিনি।

শুক্রবার পঞ্চমীর দিন কানা ময়ূরাক্ষীর ধারে রাস্তা বরাবর বিভিন্ন প্যান্ডেলের জন্য মা দুর্গার মূর্তি যাচ্ছে ভ্যানে করে। রাস্তায় প্যান্ডেল প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, দেখা গেল কান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বালিয়া গ্রামের হাইস্কুলের ঠিক উল্টোদিকে গলির ভিতরে ওই বাড়ি শুনশান। ওই পরিবারের আত্মীয় তুলসী দত্ত অনেক ডাকার পর দরজা খুলে বাইরে এলেন প্রভাত দত্তরা। তুলসী বাবু বলেন, আমিও 28 বছর জওয়ান হয়ে দেশের সেবা করেছি। মাত্র 23 বছর বয়সে ওর চলে যাওয়াটা কষ্ট দেয়। ওর কফিনবন্দি দেহ যখন আনা হয় লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। এখানকার নামুপাড়া হরিবাসর বারোয়ারি দুর্গাপূজা উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেছিল প্রীতমও। সেখানে 5টি দুর্গাপুজো হয় পারিবারিক। সেজন্য উদ্যোগ নিয়ে বারোয়ারি পুজো করা হয়েছিল। কিন্তু, ও নিজেই থাকলো না। মন খারাপ পুজো উদ্যোক্তাদের।

প্রীতমের মা বলছিলেন, আমি দুর্গা পুজোর জন্য যে চাঁদা দিতাম, তার বাইরে আলাদা করে ও চাঁদা দিত। খুব উৎসাহ ছিল। পুজোতে আসবে বলে অনেক আশা ছিল পুজোর উদ্যোক্তাদের। ফ্রাই রাইস, চাউমিন খেতে ভালোবাসত । আমি তৈরি করে দিতাম। এবার নারু, মুড়কি কিচ্ছু করিনি। আর কিচ্ছু ভালো লাগে না।

প্রীতমের বাবা-মা দুজনেই বলেন, আমাদের ছেলের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি আমরা গ্রামে খেলার মাঠে বসাবো। ওই মূর্তি তৈরি করতে দিয়েছি । ও নিজে খেলাধুলো ভালোবাসতো । প্রীতমের স্মৃতিতে এটা আমরা করতে চাই। আগামী ২৬  শে জানুয়ারি মূর্তি বসানো হবে। পরিবারে আশা, তার মধ্য দিয়েই আমাদের ছেলে বেঁচে থাক।