একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ, তবু যুক্ত প্রাথমিকের ইন্টারভিউতে !

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ব্যুরোঃ ১২ জানুয়ারিঃ ২০১৪ থেকে ২০২১। দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট উত্তীর্ণদের ইন্টারভিউ । কিন্তু, ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় এরা কারা ? প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের দুই প্রাক্তন আধিকারিক’কে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করার উঠছে প্রশ্ন।
কারা এই দুই ব্যক্তি ? কাদের ঘিরে চাঞ্চল্য শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে রাজনৈতিক মহলে ?
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে সরকারি নির্দেশ পৌঁছায় মুর্শিদাবাদ জেলা শিক্ষা দপ্তরের অফিসে। নির্দেশে জানান হয় জেলার প্রাক্তন ডিআই নীহার কান্তি ভট্টাচার্য এবং ডিপিএসসি’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী দেবব্রত ঘোষ’কে যুক্ত করা হয়েছে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার সাথে।
নীহার কান্তি ভট্টাচার্য’কে দেওয়া হয় ‘অফিসার অন ডিউটি’ হিসেবে ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সহায়তা করার দায়িত্ব। অন্যদিকে দেবব্রত ঘোষকে ডিআই(প্রাথমিক)’এর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই দুই জনের বিরুদ্ধে রয়েছে কর্মজীবনে দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ।
এক সময় বাম মহলে খাতির থাকলেও, পরিবর্তনের সাথে সাথে শাসক দলে ভিড়ে যান দুই জনই। উঠছে রাজনৈতিক হস্থক্ষেপের প্রশ্নও।
কী অভিযোগ এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ? এক সময় ছিলেন মুর্শিদাবাদ ডিপিএসসি’র চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন তিনি । অভিযোগ ১ লা জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষকদের বদলি করেন তিনি। বদলি নিয়ে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ। ২০১৯ সালের ১১ মার্চ নীহারবাবুকে শো কজ করে ডিপিএসসি। বন্ধ করে দেওয়া হয় পেনশন। এখনও স্যাটে বিচারাধীন রাজ্য সরকার এবং নীহার ভট্টাচার্যের মধ্যে চলা মামলা।
গুরুতর অভিযোগ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দেবব্রত ঘোষের বিরুদ্ধে। ডিপিএসসি’র করণিক দেবব্রত ঘোষ দুর্নীতির দায়ে দীর্ঘদিন সাসপেন্ডেড ছিলেন। ২০০৭ সালে রানীনগর থানায় দেবব্রত ঘোষ সহ আরো কয়েকজনের নামে দায়ের হয় অভিযোগ । অভিযোগকারীর দাবি, স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে তার কাছ থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা নেন দেবব্রত ঘোষ ও তার সঙ্গীরা। দেওয়া হয় জাল নিয়োগপত্রও । প্রতারিত হয়ে থানায় অভিযোগ করেন সাহেবনগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি।
সেই অভিযোগের ভিত্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে দেবব্রত ঘোষকে। চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয় তাকে।
অভিযোগ, পরে প্রভাব খাটিয়ে স্বমহিমায় ফিরে আসেন দেবব্রত ঘোষ।
শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বারবার , একের পর এক মামলা, রাজ্য সরকারের স্বচ্ছ নিয়োগের আশ্বাস, এসবের মাঝে এই বিষয় সামনে আসায় বিস্মিত চাকরিপ্রার্থী থেকে শিক্ষক মহল।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের অভিযোগ, ” এদের মধ্যে এক আধিকারিকের সময়ে স্কুলের শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে ট্র্যান্সফার পাইয়ে দেওয়ার কান্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্য হয়েছিল । অপরজন যিনি ঐ স্কুল কাউন্সিলের তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন, বিভিন্ন দুর্নীতির দায়ে তাকেও আমরা দেখেছি স্কুল কাউন্সিলার থেকে সাসপেন্ড হতে। আইনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন তার কর্মজীবন থেকে অব্যাহতি নিতে দেখেছি তাকে । এরকম দুজনকে যোগ্যতার সঙ্গে রাজ্য সরকার আমন্ত্রণ জানানো মানেই দুর্নীতিতে নোবেল পুরস্কার আছে এমন ব্যক্তিদের সেখানে বেশি করে আমন্ত্রণ জানানো । যাতে খুব সুস্পষ্টভাবে বা সুক্ষভাবে আবার দুর্নীতির মাধ্যমে এই পরীক্ষায় নিয়োগ সুসম্পন্ন করা যায় তার প্রয়াস”।
বিজেপি’র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি গৌরীশংকর ঘোষের বক্তব্য, “ নীহারকান্তি ভট্টাচার্য এবং দেবব্রত ঘোষ এরা দুজনেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এদেরকে কোর্টেও তোলা হয়েছিল, এইরকম দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত যারা একসময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে চাকরি দেওয়ার নাম করে, সেই সমস্ত মানুষজনকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য ঘোষণা করে, রাজ্য সরকার এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে হাস্যকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে” ।
যদিও মুর্শিদাবাদের সাংসদ, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খানের সাফাই, “তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে সঠিক এবং যে দায়িত্ব দিয়েছে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে কোন দায়িত্ব দেয় নি। এদেরকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নেগোশিয়েট করবে। যে যারা ইন্টার্ভিউ বোর্ডে যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে তাদেরকে করেসপনডেন্সের জন্য সামান্য কিছু দায়িত্ব এদের ওপরে আছে। এরা ইন্টার্ভিউ বোর্ডে আছে বা ইন্টার্ভিউ নেবে এমন নয়; ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সঙ্গে কোনমতেই কোন সম্পর্ক এদের নেই। সুতরাং যারা অভিযোগ করছে, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক”।
রাজনৈতিক তরজার মাঝেই এই দুই বিতর্কিত আধিকারিকে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে দায়িত্ব দেওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয়ে চাকরি প্রার্থীরাও।