মুর্শিদাবাদের আনাচা কানাচে লেখা রয়েছে ইতিহাস আর গল্পকথা। অতিমারীর তাড়নায় পুজো প্যান্ডেলের ভিড় এড়িয়ে “গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর”এর খোঁজে বেড়িয়ে ঘুরলেন মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান । লালবাগ আস্তাবলের মোড় থেকে, টোটো করে গেলেন কাটরা মসজিদ, নসিপুর রাজবাড়ী, কাঠগোলা বাগান, ও জগৎশেঠ হাউস। কী দেখলেন সেখানে ? লিখলেন দেবাশিষ পাল
সকাল গড়িয়ে তখন বিকেল হয়েছে, টিপ টিপ বৃষ্টি তখনো চলছে। মুর্শিদাবাদের একের পর এক ঐতিহ্যমন্ডিত স্থানের হতশ্রী দশা দেখে টোটোয় এসে পৌঁছালাম জগৎশেঠ হাউসে। টিকিট কিনে ভেরতে ঢুকলাম। বুঝতে পারলাম, সমগ্র জায়গাটাকে একটা মিউজিয়াম এর আদলে গড়ার চেষ্টা চলছে। অন্যান্য স্থানের থেকে এখানকার সংগ্রহশালা যথেষ্ট পরিপূর্ণ। ভেতরে যেহেতু ক্যামেরা নিষিদ্ধ, সেজন্য ছবি তোলাও সম্ভব হয়নি।
এখানে দুটি সুরঙ্গ রয়েছে, মূলত তার মধ্যেই বেশিরভাগ সংগৃহীত জিনিসপত্র রয়েছে।তাছাড়া নীচের তল ও দ্বিতলেও বিবিধ জিনিস পত্র সহ বিরাটাকার ফ্রেমে নর্তকী সহ বহু মানুষের ছবি বাঁধানো রয়েছে। হাতির দাঁতে তৈরি বিভিন্ন জিনিস, তরবারি, প্রাচীন পুঁথি, ফসিল একটুকরো কাট, প্রাচীন মুদ্রা, কম্পাস, মহাকাশ থেকে পড়া উল্কা পিণ্ডের একটুকরো পাথর, বিভিন্ন পুস্তক, দলিল-দস্তাবেজ, রাজপরিবারের ব্যবহৃত পালকি, চতুর্দোলা, পানপাত্র সহ, বিভিন্ন রুপোর ও কাষ্ঠ নির্মিত আসবাবপত্র প্রভৃতি জিনিস রয়েছে।
আর রয়েছে লক্ষ্মী দেবীর মন্দির, গাইডের মুখে তার কিছু প্রচলিত লোককাহিনীর বিবরণ শুনলাম, তবে সত্যাসত্য জানিনা এবিষয়ে যেমন – জগৎ শেঠ নাকি পুজায় বসে বলেন দেবীকে, যে তাঁর মা স্নান করে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকবেন, এবং তাঁর মা নাকি গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে ডুবে মারা যান এবং তারপর থেকেই দেবী সেথায় অধিষ্ঠিত হয়ে যান আর কোথাও যেতে পারেননি।
কোজাগরী পূর্ণিমায় তাঁর পূজা ধুমধাম সহকারে হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সমগ্র ভারতবর্ষে এই জগৎশেঠের বংশধরেরা কিভাবে যশ প্রতিপত্তি লাভ করেছিল ঐতিহাসিক সূত্রে তার কিছু কাহিনী এবার জানা যাক- শেঠবংশীয়দের আদি নিবাস ছিল যোধপুরের নাগর প্রদেশে। ভাগ্যান্বেষণে হীরানন্দ পাটনায় উপস্থিত হলে এক বৃদ্ধের প্রচুর ধনসম্পত্তির অধীশ্বর হন তিনি।
এরপর তার সাত পুত্র কে ভারতের সাত স্থানে গদীয়ান এর কার্যে নিযুক্ত করেন। কনিষ্ঠপুত্র মানিক চাঁদ হতে মুর্শিদাবাদের জগৎশেঠের উৎপত্তি। সংক্ষেপে তার কাহিনী বর্ণনা করা যাক।মানিকচাঁদ অপুত্রক থাকাই ভাগ্নে ফতেচাঁদকে পোষ্যপুত্র গ্রহণ করে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। মূলত তিনিই প্রথম “জগৎশেঠ” উপাধি লাভ করেন।
তথ্যসূত্র:-১) “মুর্শিদাবাদ কাহিনী”- নিখিলনাথ রায়; তৃতীয় মুদ্রণ-২০১৮;প্রকাশক-৩৮/২ বাংলাবাজার, ঢাকা। ২)বঙ্গদর্শন, ইতিবাচক বাংলা (ওয়েবসাইট)
মতামত এবং তথ্যের দায়িত্ব লেখকের নিজস্ব।