উৎসবে অন্ধকার সামসেরগঞ্জে, শুধুই ভাঙন আর হাহাকার

Published By: Madhyabanga News | Published On:

দেবনীল সরকারঃ সামসেরগঞ্জঃ গঙ্গাভাঙন।   যাঁরা দেখেছে তাঁরাই জানে, যাঁরা দেখেনি তাঁরা বুঝবে না কোনওদিন!  মঙ্গলবার ভোর চারটে নাগাদ আবার শুরু হয়েছে গঙ্গা ভাঙন । ভয়ঙ্কর আওয়াজ করে ভেঙে পড়ছে প্রতাপগঞ্জ – এর নদী পাড় । গঙ্গার ওপারে বিস্তৃত জমি  জুড়ে ফুটে রয়েছে কাশফুল, যা শারদীয়ার আগাম আভাস দিচ্ছে ; দুর্গাপুজো আসন্ন। আর অন্য পারের গ্রামবাসীরা নিজেদের সাধের বাড়ি নিজেরাই ভেঙে ফেলছেন। নইলে সে বাড়ি চলে যাবে গঙ্গার অতলে। তাই শেষ মুহূর্তে নিজের জিনিসপত্র, ঘরের দরজা, জানলা খুলে নিয়ে বাড়িটাই ভেঙে ফেলা হচ্ছে, যাতে বাড়ির পরিত্যক্ত ইট, মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া যায় গঙ্গার পাড়ে –এ এক অদ্ভূত ছবি, যাঁরা দেখেছে তাঁরাই জানে, যাঁরা দেখেনি তাঁরা বুঝবে না কোনওদিন!

বিগত দুই বছরের মধ্য সামসেরগঞ্জ ব্লকের প্রতাপগঞ্জ এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটারেরও বেশি অংশ গিলে খেয়েছে গঙ্গা ।

বিগত দুই বছরের মধ্য সামসেরগঞ্জ ব্লকের প্রতাপগঞ্জ  এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটারেরও বেশি অংশ গিলে খেয়েছে গঙ্গা । প্রায়  নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫ টি গ্রাম। ধবংস হয়েছে  সেখানকার বাড়ি, রাস্তাঘাট ।ভয়াবহ এখানে বর্ষার গঙ্গার রূপ। এপার ওপার দেখা যায় না এতটাই বিস্তৃতি এখানে গঙ্গার। এই বছর বর্ষা দেরি করে এসেছে। গঙ্গা যেভাবে ভয়ঙ্করী রূপে ধেয়ে আসছে পাড়ের দিকে তা দেখলে রীতিমতো ভিমরি  খেতে হয়। মঙ্গলবার প্রচুর লোক জমা হয়েছিল গঙ্গা ভাঙ্গন দেখতে ।  চোখের সামনে নিজের ঘর, দালান, দোকান সব কিছু একে একে তলিয়ে যেতে দেখছে নিজের চোখে। ভিড় করেছে শ’য়ে শ’য়ে লোক, আছে সাংবাদিকরাও ।  তাদের সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ । প্রচণ্ড রোদে জড়ো হয়েছে সবাই, বিক্রি হচ্ছে কুলফি।

চোখের সামনে নিজের ঘর, দালান, দোকান সব কিছু একে একে তলিয়ে যেতে দেখছে নিজের চোখে।

আর শনশন আওয়াজে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা। গতকাল ভোরের আলো ফোটার আগেই গঙ্গায় তলিয়ে গেছে প্রতাপগঞ্জের উপকূলবর্তী বেশ কয়েকটি ভিটে । সকাল হতেই পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলো ফাঁকা করতে শুরু করেছেন বাড়ির বাসিন্দারা । ছেনি হাতুড়ির ঘায়ে নিজের বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ফেলছেন, খুলছেন দরজা, জানালা।

গ্রামের বাসিন্দা রুবিয়া খাতুন বলেন, “  আমাদের বাড়ি তো চলেই গেলো। বাড়ির ১০জন লোককে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যেতে হবে। কোনো আত্মীয় বাড়িতে থাকতে দিলে থাকব নাহলে রাস্তার ধারে তিরপল খাটিয়ে থাকতে হবে বাচ্চাদের নিয়ে”। চার সন্তানের মা রুবিয়া কথা বলতে বলতে ভেঙে পড়েছেন কান্নায়।

মোস্তকিম হোসেন নিজের হতে ছেনি হাতুড়ি নিয়ে নিজের বাড়ি ভেঙে ফেলছে। অবলীলায়। ছবিঃ ময়ূরেশ রায়চৌধুরী

রুবিয়ার স্বামী মোস্তকিম হোসেন নিজের হতে ছেনি হাতুড়ি নিয়ে নিজের বাড়ি ভেঙে ফেলছে। অবলীলায়। তিনি বলেন, “ এ জিনিস আমাদের কাছে নতুন না। প্রতি বছর হয় কমবেশি। সরকার আমাদের কথা ভাবে না।শুধু বালির বস্তা দিয়ে কি হবে! কিছু হবে না।আমাদের যা অবস্থা এখানে না এলে কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। ”

ভেঙ্গে ফেলতে হচ্ছে নিজেদের হাতে তৈরি বাড়ি। ছবিঃ ময়ূরেশ রায়চৌধুরী

জেলার ঠিক প্রান্তে অবস্থিত এই গ্রামটি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এভাবেই প্রতিবছর একটু করে সরে আসছে গঙ্গা। পুজোর আগে রাজ্য  মাতবে আনন্দে, ভাসবে উচ্ছ্বাসে।  আর এইভাবেই নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগোবে সামসেরগঞ্জের  প্রতাপগঞ্জ । শরৎ নেই।  আশঙ্কার মেঘ ঘন হচ্ছে রুবিয়া, মোস্তাকিমদের আকাশে।