আবার গঙ্গাভাঙন সামসেরগঞ্জে! কোন অন্ধকারের দিকে গ্রামবাসীর ভবিষ্যৎ?

Published By: Madhyabanga News | Published On:

মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ আশ্বিন মাসের শেষ দিন আজ। কথাই আছে আশ্বিন উৎসবের মাস। এই উৎসবের মাসেই আতঙ্কে সারা রাত জেগে সামসেরগঞ্জের মানুষ। লাগাতার গঙ্গা ভাঙনে অসহায় গ্রামবাসী হারিয়েছেন তাঁদের বাসভিটে। এমনকি গ্রামের মানুষের ঐতিহ্যবাহী শ্মশান কালীমন্দিরও। মধ্যরাতে গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে গেছে মন্দির সহ একাধিক বাড়ি। প্রায় দেড় মাস ধরে লাগাতার ঘটে যাওয়া এই গঙ্গা ভাঙন নিয়ে সরকার তরফেও কোন হেলদোল নেই। কোন অন্ধকারের দিকে সামসেরগঞ্জবাসীর ভবিষ্যৎ? দেখে নিন এই বিষয়ে কী বলছেন স্থানীয়রা!
স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সত্যম সরকার বলেন, “ রাত্রি ১টা ৪০ নাগাদ আমাদের গ্রামের ৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্মশান কালীমন্দির গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে যায়। এলাকায় এই পুজোর নামডাক ছিল। মহেশটোলার সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল এই মন্দিরকে ঘিরেই। কার কাছে বলব আমাদের দুঃখের কথা! ফারাক্কা ব্যারেজ যে হারে জল ছাড়ছে এক সপ্তাহ ধরে তাতে করে আজ মন্দির গেল, গতকাল চারটে বাড়ি গেল, পরশু দোতলা বাড়িটাও তলিয়ে গেল। ১০-১৫ টা গ্রামের লোক মৃত্যুর পর সৎকারের জন্য এই শ্মশানে আসতেন, এখানেই ছিল শ্মশান কালী মন্দির যা আজ জলের তলে বিলীন হয়ে গেল। কিছু আর বলার নেই। আজ আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে গেল। লাগাতার দেড় মাস থেকে চলছে ভাঙন। প্রচুর সম্পপ্তির ক্ষয়ক্ষতি। এলাকার ১২৬টি পরিবার ঘরছাড়া। মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এম.পি সাহেবকে খুঁজে পাওয়া যায়না কোনদিনই, তবে বিধায়ক বোট নিয়ে গতকাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। ৬০০ মিটার এলাকা জলের তলে চলে গিয়েছে চোখের নিমেষে। আমরা বিডিও, এম.এল.এ, সরকারী নেতা সবাইকে বলেছি। কাউকে বলার ত্রুটি রাখিনি। কাজ চলছে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু যেভাবে কাজ চলছে এইভাবে কাজ চললে হবে না। চোখে দেখতে পাচ্ছি ফারাক্কা ব্যারেজের বেলাগাম জল ছাড়ার জন্য আমাদের এই বিপদ। আর কিছুই বাঁচানো যাবে না। আমরা চাই সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক নইলে আমাদের এই গ্রামটাই ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এলাকাবাসী হিসাবে আমাদের দাবী, কাজের গতি বাড়ানো হোক। কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে চাই, আমাদের অবস্থার কথা। যাতে কোনও ভাবে আমাদের গ্রামটি বাঁচানো যায়, তার ব্যবস্থা করা হোক।
কেউ বলছে ফারাক্কা ব্যারেজে বেলাগাম জল ছাড়া এই ভাঙনের জন্য দায়ী। আবার কেউ দুষছেন সরকারকে। আশেপাশের এলাকার ইটভাটাগুলি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকেও কারণ হিসাবে দুষছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিক্রম সরকার বলেন, “ চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে আমাদের এলাকায় আবার গঙ্গাভাঙন শুরু হয়েছে। ৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে চলছে এই ভাঙন। আগে ৩ কিলোমিটার দূরে নদী ছিল, আজকে পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখানে এসে ঠেকেছে। গত বছর ধানগড়া, নিমতিতা অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছিল। তখনও আমাদের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়নি। তখন কাজ করার সুযোগ ছিল, কিন্তু সেই সময়ে কোন কাজ হয়নি। আজকে যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তখন সরকার থেকে নৌকাতে করে বালির বস্তা ফেলছে। এই বালির বস্তা ফেলে কোন কাজ হবে না। যদিও এম.এল.এ, বি.ডি.ও, পঞ্চায়েতের তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে কাজ চলছে। কাজ চলছে ঠিকই কিন্তু খুবই ধীর গতিতে। এই ভাবে কাজ চললে কাজের কোন মূল্য থাকবে না। আমাদের এলাকার মানুষের খাওয়া দাওয়া দূরে থাক, কারও চোখে ঘুম নেই। সারা রাত্রি ছোটাছুটি করছে মানুষ। আমাদের দাবি-দাওয়ার ভাষা নেই। বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে গ্রামে সেই জায়গাও নেই আর। একটা মাত্র স্কুল আমাদের গ্রামে। সেখানে আগে থেকেই বাড়ি ঘর হারিয়ে এত লোক গিয়ে উঠেছেন আর নতুন লোক বসার জায়গা নেই। পাশের গ্রামের স্কুলেরও একই অবস্থা। সরকারের কাছে আমাদের কোনও মূল্য নেই। গ্রামের প্রধান হোক বা এম.এল.এ, এম.পি কেউ আমাদের মূল্য দেয় না। এম.এল.এ সাহেব যদিও বোট নিয়ে মাঝে মধ্যে তদারকি করতে আসেন কিন্তু এম.পি কে গত ৫ বছরে দেখা যায়নি এই এলাকায়।”
বিক্রম গঙ্গাভাঙন প্রসঙ্গে আরও বলেন, “ সামসেরগঞ্জ সুতি এলাকায় যতগুলি ইট ভাটা আছে, সব ভাটার মাটি গেছে এই এলাকা থেকে গেছে। তিনবছর আগে থেকে মাটি স্টক করে রেখেছে ইট ভাটাগুলি। এই মাটি কাটার জন্য ভাঙন আরও বাড়ছে। এর জন্য দায়ী সামসেরগঞ্জ থানা ও সরকারী প্রতিনিধিরা। ওই সময়ে সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা এই কাজ করিয়েছে। সবাই জানে কারা মাটি কাটিয়েছে। ১০০ এর বেশি গাড়ি লাগিয়ে সারা রাত ধরে মাটি তোলা হয়েছে। প্রশাসন তাদেরকে মদত দিয়েছে। যারা এই কাজের প্রতিবাদ করেছে তাঁদের জেল খাটতে হয়েছে।”