আতশবাজিতে বিষ !

Published By: Madhyabanga News | Published On:

ইমাজিন ডেস্কঃ ১২ নভেম্বরঃ দীপাবলি মানেই হাজার আলোর রোশনাই। বাড়িতে বাড়িতে আলোকসজ্জা, রাত গড়াতেই আতশবাজি। সেই আতশবাজি ঘিরেই চর্চা করোনাআবহে। কিন্তু কী দিয়ে তৈরী হয় আতশবাজি ?
খোঁজ নিতেই উব্দেগ বাড়ানোর মতো তথ্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আতশবাজির মূল উপাদন হল তিনটি। ১) অক্সিডাইজার, ২) জ্বালানি এবং ৩) রঙিন এজেন্ট। এছাড়াও আতশবাজি ব্যবহার করা হয় বাইন্ডার।
এর মধ্যে অক্সিডাইজারের কাজ হল বিস্ফোরণের সময় অক্সিজেন সরবরাহ করা। অক্সিডাইজার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘পারক্লোরেট লবণ’ । এটা বিস্ফোরণের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে। পারক্লোরেট একটি বিষাক্ত যৌগ। আতশবাজি ফেটে যাওয়ার পরে এর ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা কমে যায়। কিন্তু বাজি ফেটে যাওয়ার সময় বাকি বেশকিছু ক্ষতিকর পদার্থ সৃষ্টি করে যেগুলো বায়ু , জল ও মাটিতে মিশে যায়। মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এই যৌগগুলি। এগুলি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে মানুষের শরীরে ঢুকলে থাইরয়েড গ্রন্থিতে শোষিত হয় এবং থাইরয়েড হরমোনকে প্রভাবিত করে। ফলে, নান সমস্যা তৈরি হয় শরীরে।
আতশবাজির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় কাঠকয়লা । আতশবাজি জ্বললে যে দহন হয়, তাতে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন পরিমাণে দূষণকারী পদার্থ মেশে। সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং পার্টিকুলেটস (কণাসমূহ)- এই সমস্ত রাসায়নিক মিশে যায় বাতাসে। যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এবং মানুষের ফুসফুসের প্রবেশ করে হাঁপানি ও অন্যান্য রোগ তৈরি করে।
বেশ বিপজ্জন আতশবাজির রঙিন এজেন্টগুলিও। চোখ ধাঁধানো রঙের খেলায় আসলে লুকিয়ে থাকে বিষ। বাজিতে উজ্জ্বল সাদা রঙ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন অ্যালুমিনিয়াম যৌগ। সবুজ রঙ তৈরি করতে বেরিয়াম নাইট্রেট এবং নীল রঙের জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কপার যৌগগুলো । রাসায়নিক পরিভাষায় এগুলি হল ‘ধাতব যৌগ’। এর প্রতিটি উপাদান স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। কপার যৌগগুলি ক্যনসারের কারণ হিসেবেও চিহ্নিত। অ্যালুমিনিয়াম থেকে ত্বকে ডার্মাটাইটিস হয়। বাজিত ব্যবহৃত অ্যান্টিমনি সালফাইডের বিষাক্ত ধোঁয়াও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ। ফুসফুসের কোষগুলোর জন্য বিষাক্ত বেরিয়াম নাইট্রেট শ্বাসনালিতে জ্বালার সৃষ্টি করে।
এছাড়াও, আতশবাজি বাতাসে ফাটার ফলে বাতাসে মেশে বিভিন্ন বিষাক্ত যৌগ। এই যৌগগুলি ভীষণ ক্ষতিকর। সীসার ডাই অক্সাইড , নাইট্রেটস , ক্লোরাইডগুলি এবং পারদঘটিত যৌগগুলি খুবই বিপজ্জনক। বাতাশে মেশা পটাসিয়াম নাইট্রেটও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী । এছাড়াও আতশবাজির দহনে তৈরি হওয়া ওজোন গ্যাসের সংস্পর্শে এলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। স্ট্রনশিয়াম যৌগগুলো বিষাক্ত। নাইট্রিক অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাসে শ্বাস নেওয়াও খুব বিপজ্জনক।
এই জন্যই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজি বাতাসে মেশায় বিষ।
এই বছর করোনা অতিমারিতে এমনিতেই সংকট চলছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। চিকিৎসকরা বলছেন, বাজির ধোঁয়া করোনা আক্রান্ত এবং করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। করোনার কারণে আতশবাজির ব্যবহার থেকে সকলকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বাজি বন্ধের আর্জি জানাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। এখন, দীপাবলির আকাশ দেখেই বোঝা যাবে কতটা মান্যতা পেল হাইকোর্টের নির্দেশ।