নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস, কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন ব্লাড সুগার, আবার অতিরিক্ত সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রন করতে গেলে সুগার ফলের বিপদ। কীভাবে বুঝবেন? পরামর্শ দিচ্ছেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাঃ রণজিৎ বারি Dr Ranajit Bari Endocrinologist।
প্রশ্নঃ সুগার ফল কতটা বিপজ্জনক? ডাঃ রণজিৎ বারিঃ সুগার ফল বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া অনেক সময়েই উপসর্গহীন থাকে। তবে যাঁদের উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে রোগীর মাথা ঘোরা, হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করা, তার সঙ্গে ঘাম হওয়া, অনেক সময় খিদে পাওয়া , আবার অনেক সময় অনেক রোগী বুঝতে পারেন না , বিশেষত, ঘুমের মধ্যে সুগার ফল-এর দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে।
কারও যদি ডায়াবেটিস ধরা পরে কেউ যদি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় থাকেন আমাদের সবকিছুর ভারসাম্য রেখে তাঁর চিকিৎসা করতে হয়। এক্ষেত্রে ডায়েট, এক্সারসাইজ ছাড়াও ওষুধ নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করে আমরা ওষুধ নির্বাচন করি। রোগীর বয়স, ওজন এবং তার বাড়িতে তাকে সাপোর্ট দেওয়ার মত কে কে আছেন কারণ এমন অনেক রোগী থাকেন যারা বয়স্ক আবার একা থাকেন সেক্ষেত্রে অনেক নম্র ভাবে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, এবং ওষুধ নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এমন কিছু ওষুধ থাকে যেগুলোতে সুগার তো কমেই কিন্তু বেশি সুগার কমে গিয়ে সুগার ফল করার চান্স থাকে। কিছু কিছু ওষুধ শরীরের ভেতরকার ইনসুলিন কে ব্যবহার করে কাজ করে, নতুন করে ইনসুলিন বের করেনা সেই সব ওষুধের ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিৎ সেক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমেই দীর্ঘ সময় রোগীর চিকিৎসা চলতে পারে।
হঠাৎ সুগার ফল করলে কী করবেন?
ডাঃ রণজিৎ বারিঃ বাড়ির লোক দেখলেন রোগী অজ্ঞান হয়ে পরে আছেন , হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে সাড়া দিচ্ছে না এই অবস্থায় বাড়িতে যদি গ্লুকোমিটার থাকে তাহলে সুগার টা মেপে দেখা যদি দেখা যায় ৭০ এর নীচে ব্লাড সুগার এবং এই উপসর্গ গুলো রয়েছে তখন একদম দেরি না করে চিনি বা গ্লুকোজ মুখে দেওয়া একদম ফ্রি সুগার যেগুলোতে তাড়াতাড়ি সুগার টা বাড়ে এবং যদি রোগী খুবই অজ্ঞান অবস্থায় থাকেন যে খেতে পারছেন সময় নষ্ট না করে নিকটবর্তী হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
প্রশ্নঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার উপায়?
ডাঃ রণজিৎ বারিঃ কোন রোগীর ডায়াবেটিস ধরা পড়লে সেক্ষেত্রে প্রথমেই অ্যান্টি ডায়াবেটিক ড্রাগস যেগুলো সেগুলো শুরু করতে হবে তার পাশাপাশি ডায়েট ও এক্সারসাইজের একটা বড় ভূমিকা থাকা। বিশেষ করে হাঁটা , একটা বাক্য শেষ করতে গেলে রোগীকে দু বার শ্বাস নিতে হবে সেইভাবে গতি বজায় রেখে হাঁটা প্রত্যেক দিন অন্তত আধ ঘণ্টা।সপ্তাহে পাঁচ দিন ১৫৫ মিনিট সেক্ষেত্রে শরীরের ভেতরকার ইনুসুলিন গুলো ভালো ভাবে কাজ করতে পারবে। ডায়েটের ক্ষেত্রে ফ্রি সুগার জাতীয় খাবার, সফট ড্রিংক, সবরকম মিষ্টি এগুলো খাবেন না।
ভাত বন্ধ করে সুগার কন্ট্রোল করবেন এরকম কখনো ভাববেন না, কারণ ভাত বা রুটি টাকে আমরা স্টেবল ফুড বলি। সারাদিনের মোট ক্যালরির মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থাকবে। তার বেশি যেন না হয়। পাশাপাশি শাক সবজি এবং প্রোটিনের পরিমান বাড়ানো, উপযুক্ত পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া। ফলের মধ্যে আম, খেজুর, সবেদা, খুব মিষ্টি জাতীয় ফল যেগুলোতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি এগুলো খাবেননা, সেক্ষেত্রে আপেল, পেয়ারা, নাসপাতি এবং পারলে প্রত্যেকদিন শসা খাওয়া ভালো। পাশাপাশি টক দই এবং ডায়াবেটিক রোগী যাদের কোলেস্টেরল আছে তারা ফ্যাট ফ্রি দুধ ও খেতে পারেন।