পবিত্র ত্রিবেদীঃ কান্দিঃ মূলত এ রাজ্যে বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষায় ধানের চাষের উপর কৃষকরা সারাবছর নির্ভর করে থাকেন। কিন্তু, এই বছর তীব্র খরায় ধান চাষ নিয়ে গভীর উদ্বেগে কৃষকরা । চিন্তিত কৃষি দপ্তরও । খরায় বর্ষার ধানের চাষ মার খেলে শস্য বীমার আওতায় ক্ষতিপূরণের ভাবনা কৃষি দপ্তরের । এর পাশাপাশি, আগামী সপ্তাহ থেকে ব্লক স্তরে শস্য বীমার আবেদন পূরণ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । এই বিষয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রকৃতির খামখেয়ালিতে কারোর কিছু করার নেই । সরকারের স্তরে কৃষক বন্ধু KrishakBandhu , পিএম কিষাণ PM KISAN প্রকল্প সহ বিভিন্ন ভাবে চাষীদের সাহায্য করা হচ্ছে। সবটাই সংবেদনশীলতার সঙ্গে ভাবা হচ্ছে। কৃষকদের পরামর্শ দেব, দেরি না করে লাঙ্গলে একটি করে চাষ তারা যেন করে রাখেন । ভরতপুর এক ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা শাহনূর রহমান শনিবার জানান , এরকম খরা পরিস্থিতি দীর্ঘদিন অর্থাৎ আগামী পনেরো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চললে চাষ করা মুশকিল । কৃষকরা যদি চাষ করতে না পারেন, তাহলে শস্য বীমার আওতায় হয়তো তাদের একটি নির্দিষ্ট অংশ ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাছাড়া, নিয়মমাফিক এবছর সাধারণ শস্য বীমার আবেদন আগামী সপ্তাহ থেকে কৃষকরা যাতে করতে পারেন তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে কিংবা ব্লক স্তরে সহ কৃষি অধিকর্তার অফিসে কৃষকরা আগামী সপ্তাহ থেকে এই বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন।
ক্যালেন্ডারে শ্রাবণ মাস শুরু হয়ে গিয়েছে । কিন্তু, এখনও সেভাবে দেখা নেই বর্ষার। ধানের বীজতলা শুকিয়ে কাঠ । মাটি ফেটে চৌচির । মাথায় হাত কৃষকদের। ধানের চারা রোপণ করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। ফলে ফলন কীরকম হবে তা নিয়ে চিন্তা। তাছাড়া পরবর্তীকালে বর্ষার ধান তোলার পর যে সমস্ত ফসল লাগানো হয় সেগুলো লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে। উদ্বেগ বাড়ছে কৃষকদের । যেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ নলকূপের চাষ সম্ভব সেখানে কোনওরকমে চাষের উদ্যোগ শুরু । কিন্তু, বাকি অংশে প্রকৃতিই ভরসা।
সহমত শেখ নামে ভরতপুর এক নম্বর ব্লকের এক কৃষককে শনিবার দুপুরে দেখা গেল ঠঁাই রোদে দাঁড়িয়ে জমি চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ” আমি তিরিশ বিঘা ধানের জমি চাষ করি । এবার খুব খারাপ অবস্থা। অনেক বছর এরকম হয়নি । শ্রাবণ মাসের দশ তারিখের মধ্যে ধানের চারা রোপণ করে সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় । কিন্তু এই বছর এখনো শুরুই করা গেল না। ভাদ্র মাস পর্যন্ত লেগে যাবে মনে হচ্ছে” । যে মাঠে মিনি ডিপ আছে সেখানে চাষের চেষ্টা চলছে।
কিন্তু, রোদের এমন তেজ, প্রায় প্রতিদিনই জল দিতে হবে এমন অবস্থা। মিনি ডিপ নিয়ে সবার টানাটানি। ঘরকুরো মন্ডল নামে এক চাষী জানিয়েছেন, এখন প্রতিবছর রাসায়নিক সারের দাম বাড়ছে । বর্ষার ধান চাষে মূলত চাষিরা লাভের মুখ দেখে। এখন তো বেশিরভাগ ধান চাষ কীটনাশক রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীল। ফলে নামলা অর্থাৎ দেরি করে চাষ করলে ফলন কিরকম হবে তা নিয়ে চিন্তা থাকছে। তাছাড়া, ধান ওঠার পর পরবর্তী ক্ষেত্রে যেসব ফসল লাগানো হয় সেগুলো আরও দেরি হবে।