আজ শিশু দিবস। প্রত্যেক বছর স্কুলে স্কুলে শিশুদের নিয়ে নানান অনুষ্ঠানের মধ্যে পালিত হয় দিনটি, কিন্তু গত দু বছর ধরে ঘরবন্দি শৈশব।করোনার জেরে স্কুল জীবন প্রায় ভুলতে বসেছে শিশুরা, বেঞ্চ , ব্ল্যাক বোর্ডের বদলে জায়গা করে নিয়েছে মোবাইল – ল্যাপটপ।বাইরে বেড়োনো কমেছে। কমেছে খেলার মাঠে যাওয়া । বন্দি দশায় বিপন্ন শৈশব। এর ফলে কি ধরনের মানসিক সমস্যা বাড়ছে শিশুদের? সমাধানের পথই বা কি? শৈশব কাল উপভোগে বাবা মায়ের কি করণীয়? স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইনে আসক্ত শিশুরাও ! কীভাবে বিপদ এড়াবেন ? শিশু দিবসে পরামর্শ দিলেন মনোবিদ ডঃ তৃষা দত্ত। ডাঃ তৃষা দত্ত’র সাথে কথা বললেন গার্গী চৌধুরী।
প্রশ্ন : মোবাইল,ল্যাপটপের ঘেরাটোপ আজ ঘরবন্দি জীবন, এর কি প্রভাব পড়ছে শিশুমনে? ডঃ তৃষা দত্তঃ এটা খুবই একটা সমস্যার বিষয় এসে দাঁড়িয়েছে। তারা যেমন স্কুল এবং তাদের বন্ধুদের মিস্ করছে, তেমনই আরেকদিকে তাদের পড়াশোনারও বেশ ক্ষতি হচ্ছে। স্কুলে ক্লাসে বসে যে পড়া টা হয়, সেটির বিকল্প মোবাইল বা ল্যাপটপ কোনোদিন হতে পারবে না। তাছাড়া বন্ধু দের সামনাসামনি পাওয়া, তাদের সাথে খেলা করা, গল্প করা এগুলোও বন্ধ। ফলে মানসিক ভাবে শিশুদের যেমন বিরক্তি ভাব থেকে যাচ্ছে মনে, তেমন তাদের মানসিক বিকাশেও প্রভাব পড়ছে।
প্রশ্নঃ এতে কি ধরণের মানসিক সমস্যা বাড়ছে? ডঃ তৃষা দত্তঃ তারা বাড়িতে আটকে থেকে মোবাইলের খেলা গুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠছে। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ব্যবহারের কারণে মনোযোগ শক্তি কমছে । খিটখিটে ভাব বাড়ছে । আর সাথে অবাধ্য হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।
প্রশ্নঃ সমস্যা সমাধানের উপায় কি?
ডঃ তৃষা দত্তঃ বাচ্চাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা পরিস্থিতি বুঝে, এবং বাড়িতেই তাদের কে সময় দেওয়া , যাতে তারা মোবাইল ছেড়ে অন্য কাজে যুক্ত থাকতে পারে যতটা সম্ভব। বাড়ির ছোটখাটো কাজে তাদের সহযোগিতা চাওয়া আর তারা সেটি করলে তাদের কে আরও উৎসাহিত করা , যে খুব ভালো লাগলো সে আপনাকে হেল্প করলো বলে। এগুলোর বাইরেও যদি আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয় তখন অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরমর্শ নেওয়া প্রয়োজনীয়।
প্রশ্নঃ এই পরিস্থিতিতে কিভাবে উপভোগ করবে শৈশব?
ডঃ তৃষা দত্তঃ বন্ধুদের সাথে খেলা করার বিকল্প তো কিছু হতে পারে না, মা বাবা চেষ্টা করতে পারেন যতটা সম্ভব শিশু দের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আর তাদের কে সময় দেওয়ার। তাদের কথা শোনার। তাদের কে বোঝার। দরকার হলে মাঝে মাঝে কোনো বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বা বন্ধুদের ডাকা যেতে পারে।
প্রশ্নঃ বাবা মায়েদের কী করণীয়?
ডঃ তৃষা দত্তঃ বাবা মায়েদের প্রধান করণীয় যেটা , তা হল বাচ্চা কে সময় দেওয়া। তাদের সাথে কথা বলা, তাদের গল্প শোনা, তাদের সাথে একসাথে কিছু খেলা, একসাথে ঘরের কাজ করা। এইসবের মাধ্যমে স্কুল থেকে যে শিক্ষা টি পাওয়া যেত সেটা না পেলেও, কিছু সৃজনমূলক কাজ শিখে যাবে তারা বাড়িতে থেকেও।