অধীরকে দুষে দলের নেতাদের ‘পেপটক’ মমতার

Published By: Madhyabanga News | Published On:

বিদ্যুৎ মৈত্র, মধ্যবঙ্গ নিউজ, বহরমপুরঃ এবার সামনাসামনি লড়াই কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ও তৃণমূলের মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে। রাজ্যের বিধানসভায় শূন্য থেকে একে উত্থান হয়েছে কংগ্রেসের। যার জেরে কোমায় আচ্ছন্ন কংগ্রেস পেয়েছে জিয়ন কাঠি। তবে ভেন্টিলেশন থেকে বেরনোর ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। উল্টোদিকে তৃণমূলের ছুটন্ত ঘোড়া হড়কেছে সাগরদিঘিতে। ওই বিধানসভার উপনির্বাচনের ফলাফল রাজ্য রাজনীতিতে এতটাই তীব্রতা ছড়িয়েছে যে তার আঁচ লেগেছে দিল্লিতেও। সেই আঁচ কমতে কমতে দেশের লোকসভা নির্বাচন চলে আসবে।
তবে এই লড়াইয়ের শুরুটা করল একশ্রেণির সংবাদমাধ্যম, দাবি তৃণমূলের। চলতি মাসের ১৭ তারিখ কালীঘাটে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিক নির্দেশ দেবেন বলে রাজ্যের ২৩ জেলার পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। বন্ধ দরজার ভেতরে সেই বৈঠকের মূল আলোচনা ঠিক কী হল তা জানা অসম্ভব দরজার বাইরে বসে। তবু আঁধার হাতড়ে কিছু তথ্য সামনে এসেছে।
মুর্শিদাবাদের তিনজন সাংসদ। ‘রটেছে’ তৃণমূলের জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদের দুই সাংসদ, বহরমপুরের সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন গোপনে। সে কথা দিদি বন্ধ দরজায় তাঁর সাংসদদের বলেছেন। ধমকেছেন। সেই “আধো আলো” তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় রাজ্য। সেই তথ্যকে কৌশলে সেই সংবাদ মাধ্যমেই উসকে দিয়েছেন অধীর। তিনি বলেছেন, “ কংগ্রেসের কর্মীরা নিজেদের ঘরে ফিরে আসছেন। তাহেরের জন্ম কংগ্রেসে, খলিলুর ভাইয়ের জন্ম কংগ্রেসে, আখরু সেও কংগ্রেসের। আমরা তাঁদের আহ্বান করছি ফিরে আসুন। আপনারা আপনাদেরই ঘরে ফিরে আসুন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সেই দাবিতে ঘি ঢেলেছে খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের আবুল হাসনাত সহ একগুচ্ছ নেতার সম্প্রতি কংগ্রেসে যোগদান।
অথচ একটা আসন জিতেই যে জেলা জুড়ে কংগ্রেসে ফেরার ঝড় উঠবে তৃণমূল নেতাদের, বিষয়টা এমন নয়। কিন্তু এই মূহুর্তে বাঁধ না দিলে ফাটল যে বাড়বে তা তৃণমূল নেত্রীও বুঝেছেন। আর তাই বিন্দুমাত্র দেরি না করে তিনি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন থেকে কংগ্রেসকে বলা ভাল অধীর চৌধুরীকে তীব্র আক্রমণ করতে শুরু করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে কাঠগড়ায় তুলে রবিবার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার বিরুদ্ধে কার্যত তোপ দেগেছেন মমতা। বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন আগামী দিনে অধীরের সমস্ত দাবির প্রত্যুত্তর দেবেন তিনি নিজে।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে হেরে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের নেতারা মুষড়ে পড়েছিলেন। এরপর একদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি, অন‍্যদিকে একশো দিনের কাজ সহ পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে দুর্নীতি সহ একাধিক ইস্যুতে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছিলেন তাঁরা। কথায় কথায় যে নেতারা এই জেলায় তৃণমূলের বিরাট সংসার নিয়ে গর্ব করতেন, তাঁরাও ভয় পাচ্ছেন ঘর ভাঙার। সেই সময় ফের দলে নিজের অবস্থান বদলে সামনে এলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় চেয়ারপার্সন মমতা। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের নেতাদের সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিটের ফোন বার্তায় রবিবার তিনি সোজা কথায় “পেপটক” দিয়েছেন। বিরোধী অধীর চৌধুরীকে কীভাবে প্রত্যূত্তর দিতে হবে তা শেখানোর চেষ্টা করেছেন। সংখ্যালঘুদের জন্য তাঁর সরকার কী কী করেছে সেই দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেছেন সংবাদ মাধ্যমের সামনেই। বারবার বলেছেন “ সাগরদিঘি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেখানে অনৈতিক নির্বাচন হয়েছে। বিজেপি কংগ্রেস সিপিএম অশুভ আঁতাত হয়েছে। আমরা হেরেছি ঠিক আছে। কিন্তু সাগরদিঘিতে টাকার খেলা হয়েছে। মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে।” সিপিএমের সমালোচনা করতে গিয়ে তুলে এনেছেন ১৯৮৮ সালে মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদের ঘটনার প্রসঙ্গও। নেতাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ক্ষণে ক্ষণে। আবু তাহের খান সহ জেলার জনা পনের বিধায়ক, একগুচ্ছ নেতারা ‘ দিদি’র কথায় কার্যত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে কথা দিয়েছেন “সাগরদিঘির ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না দিদি।” বুঝিয়েছেন “দিদি” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তাঁরা এখনও “নাবালক” এই রাজ্য রাজনীতিতে।
তাহের ‘দিদি’কে জেলায় জনসভায় করার জন্য ডেকেছেন বিরাট জমায়েত করার কথা দিয়ে। মমতা শুনেছেন। আস্বস্ত করেছেন “ভাইদের।” মমতা আসবেন। দলের রাশ নিজের হাতে টেনে সংখ্যালঘুদের মন টানতে পঞ্চায়েত থেকেই যুদ্ধ শুরু করবেন তিনি ২০২৪ এর লোকসভার লক্ষে। নির্বাচনে কে জিতবে কে হারবে তা সময় বলবে। কিন্তু দুই প্রবীণ নেতার কথা সরণীতে আগামী একবছর যে কথার পাল্টা কথা’র স্রোত বইবে তা এখনই বলা যায়।